উমেশ কুমারের ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি।
তৃণমূলকে আবার স্টিং-অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টায় বিজেপি। রাজ্যের বেশ কয়েক জন মন্ত্রী-বিধায়কের টাকা নেওয়ার ছবি ধরা পড়েছে গোপন ক্যামেরায়— কিছু দিন আগেই এই দাবি করেছিল একটি সংবাদ মাধ্যম। সেই স্টিং অপারেশনের ভিডিয়োকে হাতিয়ার করে এ বার কোমর বেঁধে ময়দানে নামল বিজেপি। কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়— এ রাজ্যে বিজেপির সবচেয়ে ওজনদার তিন মুখ বুধবার একসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। প্রজেক্টরে দেখালেন আধ ডজন মন্ত্রী এবং বেশ কয়েক জন বিধায়কের টাকা নেওয়ার ভিডিয়ো। আনন্দবাজার ডিজিটাল অবশ্য ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। টাকা নেওয়ার অভিযোগ আগেই সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছিলেন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়।
এ দিন রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন কৈলাস। বিজেপি যে এই ভিডিয়োকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তার প্রমাণ মিলেছে নেতাদের উপস্থিতিতেই। এ দিন কৈলাসের এক পাশে ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, অন্য দিকে, এ রাজ্যে বিজেপি-র অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়। রাজ্য বিজেপি-র শীর্ষ স্তরের তিন নেতা একসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন, সাম্প্রতিক কালে এমন ছবি দেখা যায়নি বিজেপি সদর কার্যালয়ে।
ওই বৈঠকে কৈলাস জানান, স্টিং অপারেশন করিয়েছে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল। সেই চ্যানেলে ভিডিয়োগুলি সম্প্রচারও হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়েও পড়ে মন্ত্রী-বিধায়কদের টাকা নেওয়ার ভিডিয়ো। তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, তাপস রায়, অরূপ রায়, উজ্জ্বল বিশ্বাস, স্বপন দেবনাথ, মলয় ঘটকেরা। বিধায়কদের মধ্যে ভিডিয়োতে দেখানো হয়েছে বজবজের বিধায়ক অশোক দেব, খানাকুলের ইকবাল আহমেদ এবং জোড়াসাঁকোর স্মিতা বক্সী।
আরও পড়ুন: ‘প্রশাসন নিষ্ক্রিয়’, দিল্লিতেও গুজরাত দাঙ্গার ‘মডেল’ দেখছেন বিরোধীরা
বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এই মন্ত্রী-বিধায়কদের কাছে ওই টিভি চ্যানেলের কর্মীরা পৌঁছেছেন ‘ব্রোকার’দের ধরে। তার পর মন্ত্রীদের কাছে গিয়ে নারদ স্টিং অপারেশনের কায়দায় নানা রকম ‘প্রজেক্ট’-এর কথা বলা হয়েছে। এর পর ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেছেন, ‘‘আপনাদের আশীর্বাদ চাই।’’ এই কথা বলে টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ দিন প্রথমে ‘ব্রোকার’দের সঙ্গে ওই চ্যানেলের কর্মীদের কথোপকথনের ভিডিয়ো দেখান বিজেপি নেতৃত্ব। তার পর মন্ত্রী-বিধায়কদের টাকা নেওয়ার ভিডিয়ো দেখানো হয়েছে।
তবে, সবাই যে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টাকা নিয়ে নিয়েছেন এমন নয়। কেউ কেউ ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ দিন এমনটাই জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কেউ আবার ফিরিয়ে দিয়ে পরে যোগাযোগ করেছেন বা অন্য কোনও মাধ্যমে টাকা নিয়েছেন বলে দাবি বিজেপির। যেমন, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ প্রথমে টাকা নিতে চাননি। কিন্তু, পরে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: আতঙ্কে আছি, পুলিশ কিছু করছে না! ডোভালকে নালিশ ছাত্রীর
মন্ত্রী তাপস রায় যেমন টাকা নেননি। তবে, পরে বিজেপির পক্ষ থেকে একটি অডিয়ো ক্লিপ শোনানো হয়েছে। তাতে শোনা গিয়েছে, তাপস রায় অন্য এক জনকে টাকা দেওয়ার কথা বলছেন। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি পরে টাকা নিয়ে নেবেন বলেও শোনা গিয়েছে। রাজ্যের অন্য এক মন্ত্রী মলয় ঘটকও টাকার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু, পরে বিজেপি-র দেখানো একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, মলয় ঘটকের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে আইফোনের লেটেস্ট মডেল। জোড়াসাঁকোর বিধায়ক স্মিতা বক্সীর অফিসেও গিয়েছিলেন ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা। সেখানে স্মিতার স্বামী তথা প্রাক্তন বিধায়ক সঞ্জয় বক্সীকে খামে করে টাকা দেওয়ার ছবি দেখা গিয়েছে বিজেপির দেখানো ভিডিয়োতে। তবে, এই ভিডিয়ো এবং অডিয়ো ক্লিপিংয়ের সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি।
কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এত বড় দুর্নীতি সামনে আসার পর এই মন্ত্রী-বিধায়কদের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যবস্থা নিতেই হবে। অভিযুক্ত মন্ত্রীদের পদ থেকে সরানোর দাবি জানাচ্ছি আমরা।’’ একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘এক সপ্তাহ সময় দিচ্ছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তার মধ্যে তিনি যদি কোনও পদক্ষেপ না করেন, তা হলে আমরা রাস্তায় নামব। পাশাপাশি রাজ্যপালের কাছে যাব। সেখানে গিয়েও এই মন্ত্রী-বিধায়কদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাব এবং শাস্তির দাবি তুলব।’’ কৈলাস এ দিন বলেন, ‘‘এই ভিডিয়ো ফুটেজ নিয়ে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও সন্দেহ থাকে, তা হলে সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করান।’’ বিষয়টা নিয়ে যে তাঁরা সিবিআই পর্যন্ত যাবেন সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন কৈলাস। যে সংস্থা স্টিং অপারেশন করেছিল, তারা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিজেপির এই দাবির পর তৃণমূলের তরফে অবশ্য এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, ওই চ্যানেলে ভিডিয়ো প্রকাশিত হওয়ার পর তাপস রায় দাবি করেছিলেন, তিনি টাকা নেননি। ওই কণ্ঠস্বরও তাঁর নয়। এমনকি, টাকা নেওয়া প্রমাণ করতে পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলেও চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy