আদিত্যনাথের কাছ থেকে আসা আমন্ত্রণপত্র দূত মারফৎ শান্তনু ঠাকুরকে পাঠিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
উপলক্ষ হিন্দু ধর্মের মহামিলনের মেলা। মূল লক্ষ্য রাজনৈতিক সমীকরণ গঠন। অতএব উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের সন্ন্যাসীর কাছ থেকে নিমন্ত্রণপত্র পৌঁছল বাংলার ঠাকুরনগরের ধর্মীয় নেতার কাছে। ‘চলো কুম্ভ চলেঁ’— উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের এই ‘আহ্বান’ মঙ্গলবার পাঠানো হয়েছে মতুয়া মহাসঙ্ঘে।
গোরক্ষপুর মঠের অধ্যক্ষ যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার পরে এই প্রথম বার কুম্ভ মেলার আয়োজন হচ্ছে প্রয়াগে। কুম্ভকে ঘিরে এ বার তাই বেনজির তৎপরতা উত্তরপ্রদেশ সরকারের। এ বারের কুম্ভে রেকর্ড সমাগম ঘটানোর চেষ্টা শুরু করেছে যোগীর সরকার। বিপুল ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে রেকর্ড সমাগম সামাল দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও। রাজ্যে রাজ্যে বিশিষ্ট নাগরিকদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দিচ্ছেন যোগীর মন্ত্রীরা।
কয়েক দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গ সফর করে গিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী এস পি সিংহ বাঘেল। এক দিনের ঝটিকা সফরে কলকাতায় এসে বেশ কিছু জায়গায় নিজের হাতেই আমন্ত্রণ পত্র পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। সে সবের অধিকাংশই মঠ-মন্দির। ওই দিনই দূত মারফৎ ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছেও আমন্ত্রণ পাঠিয়েছিলেন বাঘেল। আর যাঁদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি, তাঁদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়ার ভার দিয়ে গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। এ বার দিলীপের দূতরা রাজ্যের নানা প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন যোগী আদিত্যনাথের কাছ থেকে আসা সেই সব চিঠি।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পাঠানো আমন্ত্রণ পত্র। —নিজস্ব চিত্র
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে জোর ধাক্কা খেল কেন্দ্র, অলোক বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ খারিজ
শুধু চিঠি বললে অবশ্য কিছুই বলা হয় না। কুম্ভের আমন্ত্রণপত্র হিসেবে যোগী আদিত্যনাথ যা পাঠিয়েছেন, তা চিঠির চেয়ে অনেক বেশি কিছু। হালকা গেরুয়া রঙের ব্যাগ— তার ভিতরে রাজকীয় আমন্ত্রণপত্র, কুম্ভ সংক্রান্ত নানা দস্তাবেজ, সুদৃশ্য ফ্রেমে বাঁধানো কুম্ভ স্মারক-সহ যোগীর নানা উপহার। আর ব্যাগটার গায়ে গাঢ় গেরুয়া অক্ষরে লেখা ‘চলো কুম্ভ চলেঁ’।
যোগীর দরবার থেকে আসা সেই ভারী ব্যাগ নিয়ে বিজেপি নেতা অনল বিশ্বাস মঙ্গলবার দুপুরে রওনা দেন ঠাকুরনগরের উদ্দেশে। তিনি বলেন, ‘‘মতুয়া মহাসঙ্ঘে গিয়ে শান্তনু ঠাকুরের হাতেই যোগী আদিত্যনাথের পাঠানো এই ব্যাগ তুলে দেব।’’
কুম্ভমেলার আগেই প্রয়াগরাজে ভক্তদের ভিড়। ছবি: পিটিআই
আরও পডু়ন: ‘রাফাল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কেউ বাঁচাতে পারবে না’, সুপ্রিম কোর্টের রায় হাতিয়ার করে তোপ রাহুলের
রাজ্য রাজনীতিতে নিজের প্রভাব বাড়ার আঁচ পেয়েই নানা ভাবে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক সুসংহত করার চেষ্টা শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। মতুয়া ভোট নিজেদের দিকে টানার তোড়জোড় সেই চেষ্টার অন্যতম অঙ্গ। এক সময়ে ঠাকুরনগরের মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্গে এ রাজ্যের বাম নেতৃত্বের সখ্য সুবিদিত ছিল। সে সময়ে মতুয়া ভোটের বড় অংশই বামেদের দিকে যেত। পরে সেই ভোটব্যাঙ্ক তৃণমূলের অনুকূলে যেতে শুরু করে। বাম জমানার শেষ দিক থেকেই বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটার মতো মতুয়া-প্রধান আসনগুলোয় তৃণমূল দাপট দেখাতে শুরু করে। মতুয়া ঠাকুরবাড়ির একের পর একাধিক সদস্য তৃণমূলের টিকিটে ভোটেও জেতেন। কিন্তু পরে মমতাবালা ঠাকুর এবং মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের মধ্যে টানাপড়েনের জেরে ঠাকুর পরিবার প্রায় আড়াআড়ি বিভাজিত হয়। মমতাবালা এখনও বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ। কিন্তু মমতাবালার দেওর তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সদস্য মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর এখন তৃণমূলের থেকে অনেক দূরে। তাঁর বড় ছেলে সুব্রত ইতিমধ্যেই একবার বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়েছেন। ছোট ছেলে শান্তনু সরাসরি বিজেপি-তে যোগ দেননি ঠিকই। কিন্তু মতুয়া মহাসঙ্ঘে মমতাবালা ঠাকুরের সমান্তরাল গোষ্ঠীর প্রধান শান্তনুকে কখনও বিজেপি সদর দফতরে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করতে দেখা গিয়েছে। কখনও আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ এবং বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে সঙ্গে নিয়ে মতুয়া সমাবেশে ভাষণ দিতে দেখা গিয়েছে।
মতুয়া মহাসঙ্ঘে তৃণমূলের দাপট বিজেপি সম্পূর্ণ খর্ব করতে এখনও পারেনি। কিন্তু শান্তনু ঠাকুরকে সঙ্গে পাওয়ার সুবাদে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে বিজেপি যে ভাগ বসিয়ে দিয়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই। সেই শিকড় ক্রমশ আরও গভীরে নিয়ে যেতে চায় বিজেপি। মতুয়াদের যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, কুম্ভ মেলার আমন্ত্রণপত্র মতুয়া মহাসঙ্ঘে পাঠিয়ে সেই বার্তাও বিজেপি দেওয়া চেষ্টা করছে বলে রাজনৈতিক শিবির মনে করছে।
বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy