Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

অনুব্রতর ঘরের মাঠ ভরিয়ে জনসভা, বার্তা দিল বিজেপি

স্বস্তির দিনে অস্বস্তিই যেন বেশি! সিউড়ি আদালতে বুধবার পাড়ুই-কাণ্ডে যে চার্জশিট জমা দিল সিট বা বিশেষ তদন্তকারী দল, তাতে নাম থাকল না তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। আবার এ দিনই অনুব্রতর খাস তালুক বোলপুরে বিশাল সভা করে বীরভূমে নিজেদের উপস্থিতি প্রায় দামামা বাজিয়ে জানান দিল বিজেপি! ভাঙনও ধরাল শাসক দলে। লোকসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব বাড়াতে সক্রিয় বিজেপি।

এই সভাতেই বিজেপিতে যোগ দিলেন হৃদয় ঘোষ (বাঁ দিকে)। পাশে বাবুল সুপ্রিয় ও রাহুল সিংহ।  বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

এই সভাতেই বিজেপিতে যোগ দিলেন হৃদয় ঘোষ (বাঁ দিকে)। পাশে বাবুল সুপ্রিয় ও রাহুল সিংহ। বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

মহেন্দ্র জেনা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

স্বস্তির দিনে অস্বস্তিই যেন বেশি!

সিউড়ি আদালতে বুধবার পাড়ুই-কাণ্ডে যে চার্জশিট জমা দিল সিট বা বিশেষ তদন্তকারী দল, তাতে নাম থাকল না তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। আবার এ দিনই অনুব্রতর খাস তালুক বোলপুরে বিশাল সভা করে বীরভূমে নিজেদের উপস্থিতি প্রায় দামামা বাজিয়ে জানান দিল বিজেপি! ভাঙনও ধরাল শাসক দলে। লোকসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব বাড়াতে সক্রিয় বিজেপি। কিন্তু বীরভূমের সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় তৃণমূলের হামলা উপেক্ষা করে তাদের এ দিনের সমাবেশ বাড়তি তাৎপর্যপূর্ণ। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের দাবি, “অনুব্রতর ঘরের মাঠে আমাদের এই জমায়েত দেখে তৃণমূলকে ভাবতে হবে! আগামী দিনে আরও মানুষ আমাদের দিকে আসবেন।”

বৃষ্টি মাথায় নিয়েও হাজার হাজার লোক জড়ো হয়েছিলেন বোলপুর শহরের ডাকবাংলো মাঠে বিজেপি-র সভায়। ভিড়ের নিরিখে যা টেক্কা দিয়েছে মাত্র ৬ দিন আগে এই মাঠেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাকে। অভিযোগ, এ দিনের সভায় আসার পথে মারধর করা হয়েছে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের, ভাঙচুর হয়েছে তাঁদের বাসে। আহত ক’জন বিজেপি কর্মী-সমর্থক বোলপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সবের পরেই সভামঞ্চে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন পাড়ুই-কাণ্ডে হত সাগর ঘোষের ছেলে হৃদয় ঘোষ-সহ অনুব্রত-বিরোধী তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। যার সৌজন্যে কসবা পঞ্চায়েতের কার্যত দখল পেল বিজেপি।

বোলপুরের এই কসবা পঞ্চায়েতের সৌজন্যেই সংবাদ শিরোনামে উঠে আসা অনুব্রতর। গত বছর ১৭ জুলাই, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে পাড়ুই থানা এলাকার অন্তর্গত কসবায় সভা করে নির্দল প্রার্থীদের (মূলত বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী) বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং বোমা মারার ‘নিদান’ দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন ওই তৃণমূল নেতা। তার ঠিক চার দিন পরেই ২১ জুলাই, বীরভূমে পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে গুলি করে খুন করা হয় সাগরবাবুকে। ওই ঘটনায় অনুব্রত এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী-সহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন সাগরবাবুর পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ। সেই কসবা পঞ্চায়েত এলাকারই প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা নিমাই দাস (যিনি এক সময় অনুব্রত অনুগামী হিসাবে পরিচিত ছিলেন), পঞ্চায়েত প্রধান শঙ্করী দাস (নিমাইবাবুর স্ত্রী), উপপ্রধান পার্বতী বাগদি-সহ পঞ্চায়েতের ৬ সদস্য বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। ফলে, ওই পঞ্চায়েতের রাশ এ বার চলে এল বিজেপি-র হাতে। সভামঞ্চে এঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবু এবং আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। হৃদয়বাবু পরে বলেন, “যে ভাবে চারদিকে সন্ত্রাস চলছে, তার প্রতিবাদেই বিজেপি-তে এলাম। আশা করছি, বিজেপি পাশে থাকবে।” অনুব্রত-মনিরুল ইসলামেরা জেলায় যে ভাবে তৃণমূল চালাচ্ছেন, তাতে যে দল ধরে রাখতে সমস্যা হবে এ দিন বিজেপি-র সভায় ভিড় এবং যোগদানে তার ইঙ্গিতই স্পষ্ট বলে রাহুলবাবুরা মনে করছেন।

লোকসভা নির্বাচনের পরে ইলামবাজারের কানুর গ্রামে খুন হন বিজেপি কর্মী শেখ রহিম। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। রহিমের নামেই মঞ্চ বেঁধে বোলপুরে এ দিন ‘শহিদ দিবস’ পালন করেছে বিজেপি। সভায় আসার জন্য বাস, ভ্যানো এবং গাড়ির ভিড়ে বোলপুর-শান্তিনিকেতন সড়ক একটা সময় কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সমাবেশে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলা বিজেপি সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের দাবি, সভায় প্রায় ৫০ হাজার লোক (পুলিশের হিসাবে অবশ্য ৩০ হাজার) হয়েছিল। জেলা বিজেপি-রই এক প্রবীণ নেতার দাবি, “লালকৃষ্ণ আডবাণী তাঁর রামরথ নিয়ে এই মাঠে যখন এসেছিলেন, সে দিনও এমনও ভিড় হয়নি! আজকের ভিড় তৃণমূলের কাছে একটা বার্তা তো বটেই।”

ঘটনা হল, গত ১০ জুলাই এই মাঠে মুখ্যমন্ত্রী যে সভা করেছিলেন, তাতে হাজার কুড়ি লোক এসেছিলেন। যাঁদের মধ্যে কয়েক হাজার নিরাপত্তাকর্মীই ছিলেন। সেটা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক জনসভা ছিল। অনুব্রতবাবুর দাবি, ওই মাঠে দেড় লক্ষ লোক ধরে। এ দিন তিন হাজারের বেশি লোক হয়নি! তারা ফাঁকা ফাঁকা করে দাঁড়িয়েছিল। ক্যামেরায় এমন ভাবে ভিড়কে ধরা হয়েছে, যাতে মনে হয় প্রচুর লোক এসেছে!

ডাকবাংলো মাঠের এ দিনের ছবি অবশ্য অন্য কথাই বলছে। গাড়ি থেকে নামার পরেই ভিড়ের হাতে কার্যত বন্দি হয়ে যান রাহুল-বাবুল। উপচে পড়া ভিড় ঠেলে প্রায় ৪০০ মিটার হেঁটে মঞ্চে ওঠেন দু’জন। বিশেষ করে বাবুলকে একটি ছোঁয়ার জন্য একটা সময় হুড়োহুড়ি পড়ে যায় জনতার মধ্যে। ভিড় দেখে দৃশ্যতই উজ্জীবিত বিজেপি নেতারা রহিম স্মরণের মঞ্চ থেকেই ‘তৃণমূলের সন্ত্রাস’-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ডাক দেন। বাবুল বলেন, “সন্ত্রাস উপেক্ষা করে আপনারা এত জন এসেছেন। আপনাদের জন্যই এই প্রতিবাদ সভা জনসভার চেহারা পেয়েছে।” রাহুলবাবু বলেন, “এক বহুল প্রচলিত বাংলা দৈনিকে দেখলাম, শেখ রহিমের খুনির পাশে মুখ্যমন্ত্রী আছেন!” মঞ্চে হাজির নিহত রহিমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন বিজেপি নেতারা। নিহতের স্ত্রী হাজারা বিবি জানান, নেতাদের কথায় ভরসা পাচ্ছেন। সমাবেশে বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার থেকে শুরু করে সকলেই তৃণমূলকে তুলোধোনা করেছেন। অতি উৎসাহে দলীয় কর্মীদের তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাড়িতে অস্ত্র মজুত রাখার পরামর্শ দেন জেলা বিজেপি সভাপতি দুধকুমার!

অন্য বিষয়গুলি:

mahendra jena anubrata bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE