ভোটের লড়াইয়ে আদালতকেও পাশে চায় বিজেপি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যে ২০২৩ সালের গোড়াতেই পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত ভোটের ভবিষ্যৎ আদালতে আটকে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন ভোটের বিজ্ঞপ্তি এখন জারি করতে পারবে না বলেই স্থগিতাদেশ দিয়ে জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। তবে এই পরিস্থিতিতেও সব রাজনৈতিক দলই পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সেই প্রস্তুতি নিতে গিয়ে রাজ্য বিজেপি ‘বিশেষ জোর’ দিয়েছে আইনি শাখার উপরে। গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচন পরিচালনার জন্য রাজ্য স্তরের যে কমিটি তৈরি হয়েছে, তাতে সবচেয়ে বেশি সদস্য রাখা হয়েছে আইনি লড়াইয়ের জন্য।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর নেতৃত্বে পঞ্চায়েত নির্বাচনের কমিটি আগেই গড়েছিল রাজ্য বিজেপি। এখন একটি নতুন কমিটি তৈরি করা হয়েছে, যাতে প্রচার থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, আইনি লড়াই থেকে আর্থিক বিষয় সামলানোর জন্য ২৩ জনের একটি দল গঠন করা হয়েছে। রয়েছে সাতটি বিভাগ। তার সব ক’টিতেই দুই, তিন বা চার জন করে দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু আইনি বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন ছয় আইনজীবী। প্রধান দায়িত্ব পেয়েছেন দলের আইনি শাখার আহ্বায়ক লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়। এটি রাজ্যের কমিটি। এর পরে জেলায় জেলায় যে কমিটি গড়া হচ্ছে, তাতেও আইনি শাখার উপরেই ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দিচ্ছে বিজেপি।
তা হলে কি বিজেপি মনে করছে বুথের লড়াই থেকে কোর্টের লড়াই বেশি হবে? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে লোকনাথ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আদালত হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বিশেষত বিরোধী রাজনীতির ক্ষেত্রে। যখন কোনও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে, গণতন্ত্রের বাকি দু’টি স্তম্ভ যখন কাজ না করে বা পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে তখন আদালতের দরজা নাড়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকে না।’’ কিন্তু নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে কি আদালতের তেমন ভূমিকা থাকে? লোকনাথের জবাব, ‘‘নির্বাচনের বিষয়ে আদালতের ভূমিকা খুবই কম। তবে নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু এবং গণতান্ত্রিক ভাবে নিয়ম মেনে হয়, তার জন্য আদালতের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই আমরা মনে করি।’’
পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নিয়ে আদালতের স্থগিতাদেশের কথাও উল্লেখ করেন লোকনাথ। প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের গণনার যে বিজ্ঞপ্তি রাজ্য নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, তা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে অভিযোগ তুলে আদালতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। গত ১৫ ডিসেম্বর সেই আর্জি শুনে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবিতেও একটি পৃথক মামলা করেছেন শুভেন্দু। তবে লোকনাথ এ-ও জানিয়েছেন যে, তাঁরা পুরোপুরি আদালতের উপর নির্ভরশীল নন। তাঁর কথায়, ‘‘সাংগঠনিক ভাবে আমরা তৈরি। বুথের লড়াই বুথে হবে। কোর্টের লড়াই কোর্টে।’’
রাজ্য বিজেপি মনে করছে, ২০১৮ সালের মতো এ বারেও মনোনয়ন জমা থেকে ভোট-পরবর্তী রাজনৈতিক সংঘাত— সব কিছুর জন্যই আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। সম্প্রতি দিল্লিতে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার কাছে রাজ্যের নেতা-কর্মীদের আইনি লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সহায়তার আর্জি জানিয়েছেন শুভেন্দু। শুধু তা-ই নয়, গেরুয়া শিবির সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছেও তাঁর বিরুদ্ধে চলা বিভিন্ন মামলার বিবরণ তুলে দিয়েছেন শুভেন্দু। ফলে বিজেপি যে রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আদালতেও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা স্পষ্ট। যা স্পষ্টতর করেছে সদ্য তৈরি পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালন কমিটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy