Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Ananta Maharaj

বিজেপির অস্বস্তি বাড়ালেন অনন্ত! পৃথক রাজ্যের দাবি তুলে সংসদে সরব মহারাজ, সঙ্গে বার্তা দিলেন শাহকে

এ বার সংসদেই গ্রেটার কোচবিহারের দাবিতে সরব হলেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজ। সেই সঙ্গে বার্তাও দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে।

—ফাইল চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪ ২২:২০
Share: Save:

লোকসভা ভোটের সময় ‘পৃথক রাজ্যের’ দাবিতে উৎসাহ দেখাননি বিজেপি নেতৃত্ব। তা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিলই। ভোটের পর আরও চওড়া হয় ‘সম্পর্কের ফাটল’। এই পরিস্থিতিতে এ বার সংসদেই গ্রেটার কোচবিহারের দাবিতে সরব হলেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজ। সেই সঙ্গে বার্তাও দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। যা স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে ফেলেছে পদ্মশিবিরকে! যদিও অনন্তের এই দাবিতে দল যে পাশে নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজেপির আর এক রাজ্যসভা সাংসদ তথা রাজ্যে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি বাংলা ভাগের নীতিতে বিশ্বাস করে না। ঘটনাচক্রে, বুধবারই বিজেপির রাজ্য সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব ভারতে জুড়তে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।

দীর্ঘ দিন ধরেই কোচবিহারকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবিতে সরব গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অনন্ত। সংগঠন সূত্রে খবর, তাদের পৃথক রাজ্যের দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনন্তকে রাজ্যসভা পাঠিয়েছে বিজেপি। পরিবর্তে বিজেপির নজরে ছিল রাজবংশী ভোট। কিন্তু ভোট ঘোষণার পরে বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন অনন্ত। দাবি করেছিলেন, শাহ তাঁকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কোচবিহার কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হচ্ছে না। অনন্তের ক্ষোভের প্রভাব লোকসভা ভোটে কোচবিহার পড়েছে বলে অনেকের মত। শাহের প্রাক্তন ডেপুটি, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক কোচবিহারে তৃণমূল প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বসুনিয়ার কাছে হেরে গিয়েছেন। যার জন্য স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব অনন্তের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন। দাবি করেছিলেন, অনন্ত বিজেপির হয়ে প্রচারে নামেননি। আর রাজবংশী ভোটও তৃণমূলের দিকে গিয়েছে। এ নিয়ে জল্পনার আবহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অনন্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তা নিয়েও বিস্তর আলোচনা চলেছিল ঘরে-বাইরে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ন’দিনের মাথায় শাহের সঙ্গে অনন্ত দেখা করলেও টানাপড়েন যে ছিলই, তা বুধবারের দাবিতেই স্পষ্ট।

বুধবার রাজ্যসভায় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে গ্রেটার কোচবিহার ঘোষণার দাবি জানান অনন্ত। তাঁর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে কোচবিহারের অন্তর্ভুক্তিকে বেআইনি, অসাংবিধানিক এবং জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত বলে মনে করে ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’। এই সংগঠন চায়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলাদা করে ‘গ্রেটার কোচবিহার’ তৈরি হোক। ২০১৫ সাল থেকে এই দাবি তুলে আসছে সংগঠনটি। স্বাধীনতার পর কোচবিহারের মানুষের প্রতি যে অবিচার হয়েছে, তা যাতে শোধরানো হয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের কাছে সেই দাবি করলেন অনন্ত।

অনন্তের এই দাবির প্রেক্ষিতে অবশ্য শমীক বলেন, ‘‘খণ্ড-বিখণ্ডে বিশ্বাস করে না বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সীমারেখা বজায় রাখাই বিজেপির নীতি।’’

বিজেপির সঙ্গে অনন্তের দরকষাকষির মূলেই ছিল আলাদা রাজ্য। অনেকের মতে, অনন্ত যাতে সেই দাবি নিয়ে আর প্রকাশ্যে ‘আস্ফালন’ না করেন, তা নিশ্চিত করতেই তাঁকে দলের করে নিতে চেয়ে সাংসদ করে বিজেপি। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটাই হয়েছে। ২ মার্চ বিজেপি প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। তার পরের দিন অনন্ত প্রকাশ্যেই দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কথা জানান। তিনি দাবি করেছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁকে ফোনে জানিয়েছেন, কোচবিহার কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হচ্ছে না। সেই বার্তা তিনি সবাইকে জানান। তা থেকে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপির প্রার্থী নির্বাচন নিয়েও তাঁর সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি বলেও অভিযোগ ছিল অনন্তের। সাধারণ মানুষ চাইলে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকেও পদত্যাগ করবেন বলেও জানান। তা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। নিজের বক্তব্য জানিয়ে সেই সময়েই নয়াদিল্লিতে যান মহারাজ। কিন্তু তিনি সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।

এরই মাঝে শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে অনন্তকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি সভায় উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর ক্ষোভ যে প্রশমিত হয়নি, তা ঠারেঠোরে তখনই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অনন্ত। অনেকের মতে, তার ফল— অনন্তের ‘খাস’ এলাকা কোচবিহারে এ বার হেরেছে বিজেপি। ভোটপর্ব মিটতেই মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তার পরে পরেই অনন্ত কেন শাহি-বৈঠকে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বিজেপি সূত্রে খবর, সে বারও শাহের কাছে পৃথক রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়েই গিয়েছিলেন অনন্ত। কিন্তু শাহ তাতে কান দেননি! অনন্তকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, দল রাজ্যভাগের নীতিতে হাঁটবে না। জেলার এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘আর কোনও উপায় না দেখে এ বার বাধ্য হয়েই সংসদে পৃথক রাজ্যের দাবি তুলেছেন অনন্ত মহারাজ। কিন্তু এতে বিশেষ কাজ হবে বলে মনে হয় না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ananta Maharaj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE