(বাঁ দিকে) শমীক ভট্টাচার্য। তথাগত রায়। — ফাইল চিত্র।
বিজেপির শমীক ভট্টাচার্যের পর তথাগত রায়। রাজ্য বিজেপির তরফে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা সারদা দেবীর ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। আঙুল তুললেন দলের দিকেই। জানালেন, ২০২১ সালে দলে যোগ দিয়েছেন, তৃণমূল এবং সিপিএমের বহু ‘গুপ্তচর’। এই পোস্টের জন্য তাঁদেরই দায়ী করলেন। হুঁশিয়ারি দলেন, এঁদের দল থেকে বার করে না দিলে পুরো দলই ‘পচে’ যাবে। প্রসঙ্গত, দলের অন্দরে, বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েও সমাজমাধ্যম থেকে সেই ব্যঙ্গচিত্র সরায়নি রাজ্য বিজেপি। তাতে দলের একাংশ ক্ষুব্ধ।
রবিবার সকালে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ একটি পোস্ট দিয়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত। তাতে লিখেছেন, ‘‘মা সারদাকে নিয়ে ক্যারিকেচার করছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি!’’ এর পরেই কারা এ সব করেছেন, সেই নিয়ে সরব হয়েছেন তথাগত। তিনি লেখেন, ‘‘২০২১ সালে বিজেপির মধ্যে এক শিম্পাঞ্জির নেতৃত্বে পালে পালে মুলো এবং সিপিএম গুপ্তচর, এমনকি প্রকাশ্য চর, ঢুকে দলের সর্বনাশ করেছিল। তাদের কয়েক জন এখনও বিজেপিতে থেকে গিয়েছে মনে হয়!’’ মনে করা হচ্ছে, ‘মুলো’ বলতে তৃণমূলের কথা বলেছেন তথাগত। সেই দলবদল করা তৃণমূল এবং সিপিএমের দিকেই আঙুল তুলেছেন তথাগত। এই নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না করলে যে বিপদ হতে পারে, তা নিয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। তাঁর পরামর্শ, ‘‘গ্যাংগ্রিন কাটার মতো এদের নির্মমভাবে কেটে বার করুন। নচেৎ পুরো দলটারই পচে মৃত্যু হবে!’’ এই পোস্টে তিনি ট্যাগ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে।
এর আগে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক রাজ্য বিজেপির এই পোস্টকে ধিক্কার জানিয়েছিলেন। গত শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ছিঃ! এই পোস্ট হতে পারে, বিজেপির পক্ষ থেকে ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। যারা এটা করেছে, আমার মনে হয় তাদের রাজনীতি কেন, কোনও নীতিতেই থাকা উচিত নয়।’’ পোস্টে যে দুই তৃণমূল নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে মনে করছে দল, সেই মদন মিত্র এবং ফিরহাদ হাকিমের পরিবারের কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন শমীক। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে যে পরিবারের কথা বলা হয়েছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে, যদি তাঁরা কেউ আঘাত পান, তা হলে সেই পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইছি। গোটা পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’
সন্দেশখালিকাণ্ডের শুরু থেকেই বিজেপির অভিযোগ, সেখানে মহিলারা নির্যাতিত হয়েছেন। বিশেষত ‘হিন্দু’ মহিলারা। অভিযোগ, তার নেপথ্যে ছিলেন তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও এনেছে বিজেপি। তা নিয়েই গত বৃহস্পতিবার একটি ব্যঙ্গচিত্র রাজ্য বিজেপির এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করা হয়। ওই ব্যঙ্গচিত্রে দেখা গিয়েছে, সবুজ পাড়-সাদা শাড়ি পরে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছেন এক মহিলা। তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, ওই মহিলার বসার ভঙ্গিমা সারদা দেবীর মতো। মুখের আদলের সঙ্গে মিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হাতে ফোন, পায়ে চটি। ব্যঙ্গচিত্রে ‘সংখ্যালঘু তোষণ’-এর অভিযোগ করা হয়েছে। ভোটের জন্য সে সব করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে ‘মদন’ এবং ‘হাকিম’ শব্দও। লেখা হয়েছে, ‘‘আমি মদনেরও মা। আমি হাকিমেরও মা।’’ তার পরেই লেখা, ‘‘ভোটের জন্য আমি অন্য দিকে তাকাই, যখন মদনের স্ত্রী হাকিম দ্বারা ধর্ষিত হয়।’’ তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, রাজ্যের বিধায়ক মদন এবং মন্ত্রী ফিরহাদকে নিয়ে এই ইঙ্গিত করা হচ্ছে।
এই নিয়ে সরব হয় তৃণমূল। বিজেপির পোস্ট করা ওই ব্যঙ্গচিত্র এক্সে আবার পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘‘আর কত দিন আমাদের হিন্দু ভাই-বোনদের আবেগ নিয়ে খেলা করবে বিজেপি? মা সারদা দেবীর ব্যঙ্গচিত্র করে তাঁকে পরিহাস করা হয়েছে, যা খুবই নিচু কাজ। এমনকি, বিজেপির জন্যও!’’ এর পরেই বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় ‘মেরুকরণ’-এর অভিযোগ এনেছে তৃণমূল। এক্সে লিখেছে, ‘‘এই কারণেই বাংলা সব সময় বিজেপিকে খারিজ করেছে, যারা সব সময় বিশ্বাস নিয়ে রাজনীতি করাকে গুরুত্ব দেয়। যেমন করে সুযোগসন্ধানীরা, যাদের কোনও নীতি থাকে না।’’ সরব হয়েছেন রাজ্যের অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ধর্মের মেরুকরণ করতে আজ বিজেপি কতটা নীচে নামতে পারে, সেটা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল। হিন্দু-মুসলমান বা অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের প্রতি বিজেপির যে মানসিকতা, তা ন্যক্কারজনক। এই ন্যক্কারজনক মানসিকতা প্রকাশ করতে এ বার ব্যবহার করা হল মা সারদা দেবীকে।’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের আচরণ চলে না। বাংলার মানুষ মেনে নেবেন না। এ বার এই নিয়ে সরব হলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত। আঙুল তুললেন নিজের দলের দিকে। যদিও এই প্রথম নয়। এর আগেও রাজ্য বিজেপির দিকে গত বছরের শেষে একটি সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন তিনি। সেখানে তিনি কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘দলের নেতারা পদ নিয়েই ব্যস্ত।’’ এ বার সমাজমাধ্যমে পোস্ট নিয়ে সরব হলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy