বুধবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন দফতরের সামনে বলছেন শুভেন্দু অধিকারী। পিছনে (বাঁ দিক থেকে) বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া এবং দলের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের মঙ্গলবারের নির্দেশের ব্যাখ্যা চেয়ে আবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হবেন তিনি। মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পঞ্চায়েত ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবহার নিয়ে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল তারই ব্যাখ্যা তিনি চাইবেন বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে বিজেপির প্রার্থীরা শাসকদল তৃণমূলের বাধার মুখে পড়ছে অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জানাতে যান তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফেও হাই কোর্টের রায়ের সংশোধনী চাওয়া হতে পারে বলে ‘বার্তা’ মিলেছে।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার বিজেপি প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে পৃথক ভাবে যান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থেকে বাসে করে আনা ওই বিজেপি মনোনীত প্রার্থীদের শাসকদল মনোনয়ন জমা দিতে দিচ্ছে না বলে বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ। ঘটনার জেরে উত্তেজনা তৈরি হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরের সামনে।
বিজেপি নেতারা প্রথমে প্রার্থীদের নিয়ে কমিশনের দফতরে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান। এর পর তাঁরা কমিশনের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। শুভেন্দুকে দেখা যায় পুলিশের সামনেই ব্যারিকেডের দড়ি খুলতে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন যাবতীয় নথিপত্র-সহ ৫ জন প্রার্থীকে দফতরে ঢোকার অনুমতি দেয়। সুকান্ত মজুমদার ৫ জনকে নিয়ে কমিশনের দফতরে যান অভিযোগ জানাতে। সেই সময় কমিশনের দফতরের সামনে শুভেন্দু বলেন, ‘‘শুধু বিজেপি নয়, অন্য দলের যাঁরা মনোনয়ন দিতে পারেননি, সেই প্রার্থীদেরও কাল থেকে বলব আসতে (কমিশনের দফতরে)।’’
সূত্রপাত বসিরহাটে
বসিরহাটে কয়েক জন বিজেপি প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে তৃণমূল বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে তাঁদের নিয়ে বুধবার দুপুরে সেখানকার মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়েছিলেন সুকান্ত। প্রথমে দফতরে ঢুকতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে ধর্নায় বসেছিলেন তিনি। পরে ‘বাধার মুখে পড়ে’ মনোনয়ন জমা দিতে না পারা প্রার্থীদের তালিকা’ দেন মহকুমা শাসককে। এর পরে বাসে করে ওই প্রার্থীদের নিয়ে কলকাতায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে রওনা হন তিনি। শুধু বসিরহাট নয়, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, ক্যানিং-সহ দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
যদিও তৃণমূলের তরফে সুকান্তদের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বসিরহাট দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একেবারেই মিথ্যা কথা যে মনোনয়নে কাউকে বাধা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনকে জানালেই তারা মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে। আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেই দিয়েছেন, যদি মনোনয়ন দিতে সমস্যা হয়, আমাদের জানান। আমরা সব বন্দোবস্ত করে দেব।’’
‘শাসকের সন্ত্রাস’, কমিশনে শুভেন্দু
বুধবার বিকেলে প্রথমে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে আসে শুভেন্দুর নেতৃত্ব বিজেপি প্রতিনিধি দল। বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া এবং বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন সেই দলে। কমিশনে তাঁরা অভিযোগ জানান, শাসকদল বিডিও অফিস ঘিরে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিচ্ছে। শুভেন্দুরা বেরিয়ে আসার পরেই সুকান্ত বসিরহাট থেকে আসেন। সঙ্গে বাস-বোঝাই ওই এলাকার প্রার্থীরা (বিজেপির দাবি তাঁরা সংখ্যায় শতাধিক। পুলিশ সূত্রের খবর ৩৫ জন)।
এর পর শুভেন্দু এবং সুকান্ত জানান, হাই কোর্ট বলেছে মনোনয়ন জমা দিতে না পারলে আপনাদের অভিযোগ জমা দিতে। প্রার্থীদের নিয়ে কমিশনের দফতরে ঢুকতে গিয়ে প্রথমে বাধার মুখে পড়েন বিজেপি নেতারা। এ সময় উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে কমিশন ‘নথিপত্র’ নিয়ে ৫ জন প্রার্থীকে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেয়। তাঁদের নিয়ে ভিতরে যান সুকান্ত। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ শেষ দিনে যাতে মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তার অনুরোধও করেন।
হাই কোর্টে যাচ্ছে কমিশনও
শুধু বিজেপি নয়, কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনও। পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্পর্শকাতর বুথ নিয়ে আদালতের নির্দেশের সংশোধনের আর্জি জানাতে পারে তারা। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে ‘রিভিশন অ্যাপ্লিকেশন’ জমা দেওয়া হতে পারে। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে কমিশন।
মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে এলাকাগুলিকে স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করেছিল, সেখানে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। কমিশন সূত্রে খবর, তারা এখনও রাজ্যে স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করেনি। কমিশনের প্রশ্ন, তা হলে কী ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য ‘রিকুইজিশন’ দেওয়া হবে? কোথায়, কত কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগবে, তা-ই বা কী করে বলা সম্ভব? সে কারণেই হাই কোর্টের নির্দেশের ওই অংশের ‘রিভিশন’ করার আর্জি জানাতে পারে কমিশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy