রাজভবনের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি শুভেন্দু অধিকারী। — নিজস্ব চিত্র।
ভোট পরবর্তী হিংসায় ‘আক্রান্ত’ মানুষজনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজভবন অভিযানে নামেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা ছিল তাঁদের। যদিও শেষ পর্যন্ত রাজভবনের ভিতরে ঢুকতে পারেননি তাঁরা। শুভেন্দুর দাবি, পুলিশ তাঁদের বাধা দিয়েছেন। সে কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরেও ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। বিজেপি নেতার আরও দাবি, জরুরি অবস্থা যখন জারি ছিল দেশে, সে সময়ও এ রকম হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ফ্যাসিবাদী রূপ’ প্রকাশ্যে এসেছে। এই নিয়ে শুক্রবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন তিনি এবং ‘আক্রান্ত’-রা। এই নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবের রিপোর্ট তলব করেছে রাজভবন বলেও দাবি করেছেন শুভেন্দু।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল শুভেন্দুদের। সেই মতো রাজভবনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন শুভেন্দু। সঙ্গে একটি বাসে ছিলেন ভোট পরবর্তী হিংসায় ‘আক্রান্ত’-রা। ক্যানিং, যাদবপুর, ভাঙর, উলুবেড়িয়া, কুলতলি থেকে এসেছিলেন তাঁরা। শুভেন্দুর দাবি, রাজভবনের বাইরে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। বিজেপির দাবি, কেন আটকানো হয়েছে, তা নিয়ে পুলিশের তরফে কিছু জানানো হয়নি। শুভেন্দু সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাজ্যপালের দফতরের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। তাঁদের তরফে বলা হয়, রাজভবনের বাইরের চত্বর কলকাতা পুলিশের অধীনে। তাই এ বিষয়ে তাঁদের কিছু করার নেই। শুভেন্দুর দাবি, দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করলেও তাঁদের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করিনি।’’
তার পরেই সংবাদ মাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘১৯৭৭ সালে দেশে যখন জরুরি অবস্থা ছিল, তখনও এ রকম হয়নি। আমি বিরোধী দলনেতা। আমাকে এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের লোকেরা আমার নিরাপত্তারক্ষীদের বলেছেন জেনে আসছি, তার পর আর আসেননি। আমি আইন মেনে চলেছি।’’ তিনি এও দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের নির্দেশে এ রকম করা হয়েছে। ‘আক্রান্ত’-রা স্মারকলিপি দিতে পারছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমি রাজ্যপালকে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেছি। আক্রান্তদের তরফে মামণি দাস অভিযোগ করেছেন। আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছি।’’
বিজেপির অভিযোগ, লোকসভা ভোট মিটতেই রাজ্যে হিংসার শিকার হচ্ছেন তাঁদের কর্মী, সমর্থকেরা। ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বহু জন। ‘আক্রান্ত’-দের সঙ্গে দেখা করতে ইতিমধ্যে ডায়মন্ড হারবার, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া গিয়েছেন শুভেন্দু। যাঁরা ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে ‘ঘরছাড়া’, তাঁদের নিয়েই বৃহস্পতিবার রাজভবনের উদ্দেশে অভিযানে নেমেছিলেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, ‘‘রাজভবনের লিখিত অনুমোদনের পরেও আটকানো হয়েছে আমাদের। আমি শুক্রবারই চ্যালেঞ্জ করব। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল প্রস্তুত থাকুন।’’
বিজেপি ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে ‘আক্রান্ত’-দের বিষয়ে বার বার সরব হয়েছে। ‘ঘরছাড়া’ মানুষ জনের জন্য উত্তর কলকাতায় বিজেপির উদ্যোগে ধর্মশালা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তিনিও ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব হয়েছেন। দাবি করেছেন, ‘তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী’-রাই এ সব করেছেন। তৃণমূল যদিও এই দাবি মানেনি। রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
গত সোমবার এই নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছেন শুভেন্দু। পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় আক্রান্তদের নিরাপত্তা চেয়ে তাঁর আইনজীবী সোমবার এ বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যাতে আরও কয়েক দিন রাজ্যে রেখে দেওয়া হয়, সেই আবেদনও করেছিলেন বিরোধী দলনেতা। মামলা দায়ের করার অনুমতি দেয় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। এর পরেই বুধবার হাই কোর্ট জানায়, আগামী ২১ জুন পর্যন্ত রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। পরিস্থিতির মোকাবিলা রাজ্য পুলিশ কী কী পদক্ষেপ করেছে, তা-ও জানতে চেয়েছে কোর্ট। ১৪ জুনের মধ্যে সেই রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ জুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy