Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Suvendu Adhikari

ডিসেম্বরে সরকার বদলের কথা বলেননি, ‘শেষ’ তারিখে এসে আবার তারিখই দিলেন শুভেন্দু

১২, ১৪ এবং ২১ ডিসেম্বর। ১২ এবং ১৪ ডিসেম্বর কেটে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির পক্ষে ‘লাভজনক’ কিছু না ঘটায় ‘ক্ষুণ্ণ’ শুভেন্দুর রাজনৈতিক সতীর্থরাও। কিছুটা বিব্রতও।

কাঁথির সভা থেকে নতুন তারিখ ঘোষণা করলেন শুভেন্দু অধিকারী।

কাঁথির সভা থেকে নতুন তারিখ ঘোষণা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:৫০
Share: Save:

শুভেন্দু অধিকারী প্রণীত ‘ডিসেম্বর রহস্য’ শেষ হল। বুধবার কাঁথির সভা থেকে বিরোধী দলনেতা জানিয়ে দিলেন, ডিসেম্বর মাসে সরকার পড়ে যাবে, এমন কিছু তিনি বলেননি। বুধবার তাঁর ‘খাসতালুক’ বলে পরিচিত কাঁথির সভা থেকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম ডিসেম্বরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ তারিখের কথা। আমি কখনও বলিনি যে, আমরা সরকার বদলে দেব। আপনারা কি চান এমএলএ ভেঙে সরকার বদলে যাক? না কি ভোটে জিতে বিজেপি ক্ষমতায় আসুক?’’

পাশাপাশিই বিরোধী দলনেতা বলেছেন, ‘‘ভোটে জিতেই বিজেপি সরকার আসবে। রাষ্ট্রবাদী সরকার আসবে। ডবল ইঞ্জিন সরকার হবে। উত্তরপ্রদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বুলডোজ়ার চলবে। এটা দায়িত্ব নিয়ে বলছি।’’

ঘটনাচক্রে, কিছু দিন আগেই দলের অন্দরে এক বৈঠকে ‘তারিখ রাজনীতি’র দায় ব্যক্তিগত ভাবে নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তবে কাঁথির সভা থেকে ‘নতুন’ তারিখেও কথা জানিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তবে নির্দিষ্ট কোনও দিন, ক্ষণ বা সময় নয়। শুভেন্দু বললেন আগামী বছরের কথা। বললেন, ‘‘দিন বদলাবে। মাস বদলাবে। কিন্তু বছর বদলাবে না!’’

রাজ্যের শাসক তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ডিসেম্বর মাসে ‘ধামাকা’র ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির একাধিক নেতা। সেখান থেকে এক ধাপ এগিয়ে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘বড় চোর’ ধরা পড়বে। তিনি দিয়েছিলেন তিনটি তারিখ— ১২, ১৪ এবং ২১ ডিসেম্বর। ১২ এবং ১৪ ডিসেম্বর কেটে গিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির পক্ষে ‘লাভজনক’ কিছু না ঘটায় খানিক ‘বিরক্ত’ শুভেন্দুর রাজনৈতিক সতীর্থরাও। কিছুটা বিব্রতও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যেমন প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘‘শুভেন্দু’দা নিজের মতো করে তারিখ বলেছেন।’’ এ বার তাঁর দেওয়া ‘শেষ’ তারিখ ২১ ডিসেম্বরে শুভেন্দু জানালেন ‘বড় কিছু’ বলতে তিনি সরকার ফেলার কথা বলেননি। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে দিল্লি থেকে ফিরে কলকাতা বিমানবন্দরেই শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, ২১ তারিখ অর্থাৎ বুধবার ‘বড় কিছু’ ঘটতে যাচ্ছে না।

শুভেন্দুর ঘোষিত ‘তারিখ’ নিয়ে বিজেপির পাশাপাশিই কৌতূহল ছিল জনতার মধ্যেও। এমনকি, তৃণমূলেরও কেউ কেউ একান্ত আলোচনায় প্রশ্ন করতে শুরু করেছিলেন, ডিসেম্বরে কী হবে! অনেকে ভেবেছিলেন, বিরোধী দলনেতা সরকার পড়ে যাওয়ার দিকে ইঙ্গিত করছেন। অনেকে ভেবেছিলেন, আরও এক বার বাংলার রাজনীতিতে ‘দলবদলের পালা’ হবে। এ নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যেই ‘তারিখ রাজনীতি’ নিয়ে বাঁকুড়ার ওন্দার জনসভায় শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলেছিলাম চোরেদের, ধেড়ে ইঁদুরদের, ডাকাতদের আমরা জেলে ঢোকাতে পারব। ডিসেম্বর না হোক, জানুয়ারিতে হবে। জেলে ঢুকতেই হবে ডাকাতদের!”

এই কাঁথিতেই ১৮ দিন আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করে গিয়েছেন। ফলে শুভেন্দুর সভা ঘিরে আলাদা কৌতূহল ছিল। প্রথম কৌতূহল ছিল, অভিষেকের সভার তুলনায় শুভেন্দুর সভায় কত লোক হয়। দ্বিতীয়, ‘পাড়ার ছেলে’ শুভেন্দুর ঘরের জনতার উপর ‘অধিকার’ অটুট রয়েছে কি না। বুধবার শুভেন্দুর সভা সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা বলছেন, সেই ‘পরীক্ষায়’ সসম্মানে উর্ত্তীর্ণ হয়েছেন কাঁথির অধিকারী পরিবারের সবচেয়ে আলোচিত সদস্য। ভিড় দেখে শুভেন্দুও হাবেভাবে সে কথা বুঝিয়ে দেন। তার পর অভিযোগ করেন, তাঁর সভা আটকানোর কী কী চেষ্টা করা হয়েছিল। শেষে বলেন, ‘‘আজ (বুধবার) কাঁথি বিজেপির লেজটা দেখাল। মাথাটা দেখায়নি। ঠিক সময় দেখাব!’’

সভা থেকে বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো তুলনা টেনেছিলেন শুভেন্দু এবং অভিষেকের সমাবেশের। তাঁর দাবি, শুভেন্দুর সভা যে ছোট মাঠে হচ্ছে, সেখানে জনসমুদ্র হয়েছে। মাঠ ছাপিয়ে রাস্তাতেও মানুষ দাঁড়িয়ে পড়েছেন শুধু শুভেন্দুর কথা শুনবেন বলে। কাঁথির সভার ভিড়কে ‘নমুনা’ বলে জ্যোতির্ময়ের মন্তব্য, ‘‘এটা ট্রেলার মাত্র। সিনেমা বাকি আছে। বাকি রাজ্যে সেই সিনেমা দেখা যাবে।’’

তবে সভার শেষ বক্তা শুভেন্দু বেশি ক্ষণ বক্তৃতা করেননি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে দেখে তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। বলেন, সন্ধ্যা নেমে আসছে। সকলকে বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু ভাষণ শেষের পরেও তিনি আধ ঘণ্টা সভামঞ্চে থাকবেন। যাতে সকলে ঠিকমতো সভাস্থল ছেড়েছেন কি না, সে দিকে নজর রাখতে পারেন।

ঘটনাচক্রে, বুধবারেই কাঁথিতে শুভেন্দুর সভার অদূরে সভা করার কথা ছিল যুব তৃণমূলের। পুলিশের অনুরোধে তারা সেই সভা স্থগিত করে। কারণ, একই দিনে কাছাকাছি দু’টি সভা হলে গোলমাল বাধার সম্ভাবনা ছিল। যুব তৃণমূলের সেই সিদ্ধান্তকে ‘সৌজন্য’ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন অনেকে। শুভেন্দু অবশ্য নিজের বক্তৃতায় তাঁদেরও একহাত নেন। তিনি বলেন, ‘‘সৌজন্য-সৌজন্য বাজনা বাজানো হচ্ছে!’’

শুভেন্দুর ‘তারিখ রাজনীতি’ দিয়ে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘কোথায় গেল শুভেন্দুর বিশেষ দিন? সরকার পড়ে যাবে?’’ তাঁর সংযুক্তি, ‘‘ও তো ফুটো কলসি। বাজে বেশি। কোথায়, কার বিরুদ্ধে মামলার তারিখ আছে, কাকে সমন করবে, এ সব নিয়ে কি রাজনীতি হয়? ছোট ছোট ভাইদের বলব, শুভেন্দুকে দেখলে ছোট ছোট সিটি মেরে জিজ্ঞেস করুন, ‘ও ফুটো কলসি কী হল?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy