‘দিলীপের চা-চক্র’ বনাম ‘পাড়ায় সুকান্ত’। ছবি: সংগৃহীত।
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আশাতীত ফল করেছিল। বাংলায় ১৮টি আসনে জয় আসার পরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জেতার লক্ষ্যে এক নতুন কর্মসূচি নিয়েছিলেন বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ‘দিলীপের চা-চক্র’ নাম দিয়ে রাজ্য জুড়ে চায়ের সঙ্গে আড্ডা এবং রাজনৈতিক প্রচার শুরু হয়েছিল। দিলীপ এখন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। কিন্তু সেই কর্মসূচি তিনি এখনও বন্ধ করেননি। রাজ্যে তো বটেই, ভিন্ রাজ্যে গেলেও প্রাতঃর্ভ্রমণের সঙ্গে চা-চক্র চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বার একই ধরনের কর্মসূচি একটু অন্য ভাবে শুরু করছেন বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপির তরফে যার নাম দেওয়া হয়েছে— ‘পাড়ায় সুকান্ত’। মূলত জনসংযোগমূলক এই কর্মসূচি। জনসংযোগের মাধ্যমে জনপ্রিয়তাও বটে। বস্তুত, কেন্দ্রীয় বিজেপিও সুকান্তকে জনপ্রিয়তা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়ার কথা বলেছেন। তবে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘পাড়ায় সুকান্ত’ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নয়, রাজ্য সভাপতির একান্তই নিজস্ব ভাবনা।
আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই কর্মসূচি শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। শ্রীরামপুর লোকসভা এলাকার উত্তরপাড়া বিধানসভায় হবে ‘পাড়ায় সুকান্ত’ কর্মসূচি। তবে কেমন হতে পারে সেই কর্মসূচি, তার মহড়া হিসাবে আগে নিজের লোকসভা এলাকা বালুরঘাটে ‘পাড়ায় সুকান্ত’ করেছেন সুকান্ত। গত শনিবার সেটি হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলির গাড়নাতে। মঞ্চ বেঁধেই অনুষ্ঠান। তবে বক্তৃতা নয়। সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় মাইক্রোফোন। তাঁরা নিজেদের সমস্যার কথা বলেন। সুকান্ত শোনেন এবং নোট নেন। এর পরে কথায় কথায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কার কী অভিযোগ রয়েছে, সে সব শোনেন। একই সঙ্গে করেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের গুণগান।
সেই একই পদ্ধতিতেই কী হবে বাকি কর্মসূচি? রাজ্য বিজেপির এক নেতা জানিয়েছেন, প্রতিটি এলাকার সমস্যা এবং চরিত্র আলাদা। স্থানীয় নেতৃত্ব যেখানে যে ভাবে চাইবেন, সে ভাবেই হবে কর্মসূচি। এর কোনও বাঁধাধরা ফরম্যাট নেই। তবে বলার থেকে সাধারণের কথা শোনার দিকেই থাকবে বেশি নজর। প্রয়োজনীয় সমাধান এবং কোথায় কী ভাবে বঞ্চনা নিয়ে অভিযোগ জানানো যায়, তার পরামর্শও দেবেন সুকান্ত। একই সঙ্গে প্রতিটি কর্মসূচিতে আলাদা করে সংগঠনের নীচু স্তরের নেতা এবং কর্মীদের সঙ্গে এলাকার বিষয় নিয়ে কথা হবে তাঁর। দিলীপ ‘চা-চক্র’ করেন মূলত সকালে। তবে বিজেপি যা ঠিক করেছে, তাতে লোকসভা অনুযায়ী বাছা হবে সুকান্তের কর্মসূচির জায়গা। সুকান্ত দিনের যে কোনও সময়ে যাবেন সেই এলাকায়। কোনও বাঁধা সময় রাখা হচ্ছে না। প্রতিটি কর্মসূচি হবে ঘণ্টা দু’য়েকের।
২০১৯ সালে তৃণমূল রাজ্য জুড়ে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি আনার পরেই বিজেপি চা-চক্র শুরু করে। তার প্রচারে গেরুয়া শিবির যে ভিডিয়ো তৈরি করেছিল, সেখানে বলা ছিল, ‘কোনও লোকদেখানো ফোনকল নয়। কোনও ছেলেভোলানো চিঠিচাপাটি নয়। সরাসরি, সামনাসামনি অপ্রতিরোধ্য দিলীপ ঘোষ।’ সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দিতে দিলীপ বলেন, ‘‘আমি এখন কোচবিহারে রয়েছি। সকালে চা-চক্র হয়েছে। তবে এটা আমি প্রথমে শুরু করেছিলাম কলকাতার কথা ভেবে। কারণ, কলকাতায় আমাদের সংগঠন তেমন ছিল না। তাই চায়ের দোকানে কর্মী এবং স্থানীয়দের নিয়ে আড্ডা শুরু করেছিলাম। পরে জনপ্রিয় হয়ে যেতে রাজ্যের সর্বত্র করি। এখন এটা আমার অভ্যাসের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে।’’
বিজেপি নেতারা মনে করেন, ব্যক্তিগত ভাবে কর্মীদের মধ্যে দিলীপের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পিছনে এই কর্মসূচি বড় ভূমিকা নিয়েছিল। এখন কি সেই একই লক্ষ্যে সুকান্তের পাড়া-সফর? সুকান্ত বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত বলে আমার কাছে কিছু নেই। বিজেপির কোনও নেতার কাছেই নেই। দিলীপ’দাও দলের জন্য সব করেছেন। আমার কাছেও এটা একটা দলীয় কর্মসূচি।’’
প্রথম দিকে ‘দিলীপের চা-চক্র’ মামুলি আড্ডা থাকলেও পরে তা সাংগঠনিক রূপ পায়। একটা সময়ে এই কর্মসূচির নামে কর্মীদের জন্য টুপি, টি-শার্ট এমনকি, বিশেষ ধরনের চায়ের কাপও তৈরি হয়েছিল। তার ফলও পেয়েছেন দিলীপ। তবে তাঁর সামনে বড় কোনও চ্যালেঞ্জ ছিল না। ২ থেকে ১৮ সাংসদ এবং ৩ থেকে ৭৭ বিধায়ক হয়েছে বিজেপির। সুকান্তের সামনে চ্যালেঞ্জ ‘দিলীপ জমানা’। সেটি টপকে যেতে হবে তাঁকে।
দিলীপ অবশ্য এর মধ্যে তাঁর ‘অনুকরণ’ দেখছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেক নেতাকেই আলাদা আলাদা কর্মসূচি নিতে হয়। রাজনীতিককে জনসংযোগের প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হয়। সুকান্ত এত দিন শুধু সাংসদ ছিলেন। নিজের এলাকায় সময় দিলেই হত। এখন তিনি রাজ্য সভাপতি। তাঁকে তো ঘুরতেই হবে। গত দেড় বছরে রাজ্যে অনেক কিছু করেছেন। এখন এই কর্মসূচি নিয়েছেন। এতে তাঁর কী হবে-র চেয়েও বড় কথা, দলের শক্তি বাড়বে। আমি তেমনই মনে করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy