নদিয়ায় মহুয়া, উত্তর ২৪ পরগনায় সুকান্ত। নিজস্ব চিত্র
আগামী ৭ সেপ্টেম্বর নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে বিজেপি। সেই দিনের মিছিলে কর্মীদের ঝান্ডার সঙ্গে ডান্ডা রাখার বার্তা দিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মঙ্গলবার রাজ্যের সর্বত্র ‘খেলা হবে’ দিবস পালন করছে শাসক তৃণমূল। সেই সঙ্গেই দলের নেতাদের কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে ‘হেনস্থা’ করার জবাবে বিক্ষোভ শুরু করার ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পাল্টা সুকান্তের হুঁশিয়ারি, ‘‘পুলিশ ছাড়া খেলতে আসুন!’’
পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বিরোধীদের আক্রমণের পথ নিয়েছে তৃণমূল। দুর্নীতির তদন্তে অভিযুক্তদের পাশে দল থাকবে না বলে জানালেও বিজেপির বিরুদ্ধে কর্মীদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানান স্বয়ং মমতা। রবিবার প্রাক্ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে নাম না করেও মমতা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। এক গুচ্ছ অভিযোগও তুলেছিলেন। সেই সঙ্গেই বলেছিলেন, ‘‘১৬ অগস্ট খেলা হবে তো?’’
নেত্রীর নির্দেশ মতোই মঙ্গলবার, ১৬ অগস্ট রাজ্যের অন্য এলাকার পাশাপাশি কলকাতাতেও পথে নামে তৃণমূল। মানিকতলা থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত মিছিলে ‘নকল’ শুভেন্দুর কোমরে দড়ি পরিয়ে মিছিল হয়। ঠিক যে ভাবে সম্প্রতি বিজেপি পার্থ-অনুব্রতর মুখোশ পরিয়ে দলীয় কর্মীদের কোমরে দড়ি বেঁধে ঘুরিয়েছিল।
যা থেকে স্পষ্ট, এবার বিজেপিও পাল্টা ‘আক্রমণাত্মক’ হওয়ার রাস্তায় যাচ্ছে। দলের সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেছেন, ‘‘যারা এ কাজ করছে তাদের প্রত্যেককেই একদিন জেলে যেতে হবে। ‘খেলা হবে’ দিবসের নাম করে সন্ত্রাস করার চেষ্টা করছে তৃণমূল।’’ অন্য দিকে, উত্তর ২৪ পরগনায় দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে হুঁশিয়ারি দেন সুকান্ত। দলীয় বাইক মিছিলে অংশ নিয়ে সুকান্ত বলেন, ‘‘৭ সেপ্টেম্বর নবান্ন অভিযানে ঝান্ডার সঙ্গে ডান্ডা রাখতে হবে।’’ মমতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বারবার ‘খেলা হবে’ বলছেন। আমি বলছি, যদি ময়দানে খেলতে চান, তা হলে পুলিশ ছাড়া খেলতে আসুন।’’
প্রসঙ্গত, দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে ‘খেলা হবে’ বলে মমতা আহ্বান জানালেও এটি আসলে রাজ্য সরকারের কর্মসূচি। গত কয়েক বছর ধরেই ১৬ অগস্টকে ‘খেলা হবে দিবস’ হিসেবে পালন করে রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতর। সেই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবেই মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে শাড়ির সঙ্গে স্নিকার্স সহযোগে ফুটবলে শট মারতে দেখা গিয়েছে। বিভিন্ন ক্লাবও ওই কর্মসূচিতে অংশ নেয়। তবে সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘১৬ অগস্ট ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং ডে’ বলেই সেই দিনকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘খেলা হবে দিবস’ হিসাবে বেছেছেন।’’ যদিও রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল অতীতে একাধিক বার জানিয়েছে, এই দিনটির সঙ্গে ক্রীড়াপ্রেমীদের আত্মিক যোগ রয়েছে। ১৯৮০ সালে ইডেন গার্ডেন্সে খেলা দেখতে এসে মৃত্যু হয়েছিল ১৬ ফুটবলপ্রেমীর। সেই থেকেই বাঙালি ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এই দিনটি অন্য ধরনের তাৎপর্য বহন করে।
পার্থ-অনুব্রতের গ্রেফতারির পর থেকে গেরুয়া শিবির তৃণমূলের গায়ে ‘চোর’ তকমা লাগাতে ব্যস্ত। বিজেপি তাদের কর্মসূচির নামই দিয়েছিল, ‘চোর ধরো, জেল ভরো।’ তার পাল্টা ‘আক্রমণাত্মক’ রাস্তা নিয়েছে শাসকদল। যেমন শনিবার চুঁচুড়ায় তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দলের বিধায়ক অসিত মজুমদার স্লোগান দেন, ‘‘অভিষেকের নামে কুৎসা হলে ধোলাই হবে, পেটাই হবে।’’ শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে ভাবে সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি নোংরামি করছে, তাতে আমাদের সেই দিনই বলা উচিত ছিল বদলার বদলে বদলা নিতে হবে।’’ পরদিন আরও এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘যারা আমাদের বেশি নিন্দা করছে, তৃণমূলের সেই সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো তৈরি হবে। এই দিন অপেক্ষা করছে।’’
তবে দুই শিবিরের অনেক নেতারই বক্তব্য অনুযায়ী, উভয়পক্ষই দলের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য এমন ‘গরম গরম’ কথা বলছে। তৃণমূলের কাছে দলের ভাবমূর্তি রক্ষার প্রশ্ন। আর বিজেপি কাছে পরিস্থিতি কাজে লাগানোর তাগিদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy