Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
BJP

BJP: বাংলায় ইউপি-মডেল চলে না! ভোটকৌশলে ‘ভুল’ ছিল, মানলেন শিবপ্রকাশ

দলীয় সূত্রের খবর, শিবপ্রকাশ আক্ষেপ করেন, এ রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষ ‘ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতার’ হওয়ায় বিজেপির ‘উত্তরপ্রদেশ মডেল’ কাজ করেনি।

ভুল স্বীকার

ভুল স্বীকার ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২১ ০৬:০৯
Share: Save:

এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে তাঁদের রণকৌশল উপযুক্ত ছিল না বলে দলীয় বৈঠকে স্বীকার করে নিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, শিবপ্রকাশ প্রমুখ সোমবার দলের হেস্টিংস কার্যালয়ে দু’দফায় সাংগঠনিক বৈঠক করেন। প্রথম বৈঠকে ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা (পূর্ব) এবং দ্বিতীয়টিতে কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ এবং উত্তর শহরতলির জেলা নেতৃত্ব ও মণ্ডল সভাপতিদের ডাকা হয়। দলীয় সূত্রের খবর, দু’টি বৈঠকেই জেলা ও মণ্ডল স্তরের নেতাদের অনেকে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দিল্লির মত চাপিয়ে দেওয়াকে ভোটে পরাজয়ের জন্য দায়ী করেন। সেই প্রেক্ষিতে শিবপ্রকাশ বৈঠকে বলেন, ভোট পর্বে রাজ্য নেতাদের একাংশ যখন বলতেন, ‘উত্তরপ্রদেশ মডেলে’ পশ্চিমবঙ্গে ভোট জেতা যাবে না, তখন তাঁরা তা মানেননি। কিন্তু ভোটের ফলের পরে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, উত্তরপ্রদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ এক নয়। এ রাজ্যের ভোটে জিততে হলে এখানকার উপযোগী রণকৌশল তৈরি করা দরকার। দলীয় সূত্রের আরও খবর, শিবপ্রকাশ বৈঠকে আক্ষেপ করেন, এ রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ ‘ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতার’ হওয়ায় বিজেপি-র ‘উত্তরপ্রদেশ মডেল’ কাজ করেনি।

প্রসঙ্গত, এ বার বিধানসভা ভোটে ২০০ আসন পেয়ে তাঁদের সরকার গড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে খুব চড়া সুরে প্রচার করেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃত্ব। শেষ মুহূর্তে অন্য দল এবং অভিনয় জগৎ থেকে অনেককে বিজেপিতে যোগদান করানো হয়েছিল। তাঁদের অনেকে ভোটে টিকিটও পেয়েছিলেন। এমনকি, সকালে বিজেপিতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিকে বিকেলে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করার মতো ঘটনাও ঘটেছিল। তার সঙ্গে ছিল চড়া সাম্প্রদায়িক প্রচার। ভোটের ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটাতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে কোনও অভিযোগকেই ওই সময় সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। ওই মর্মে অনেক ভুয়ো ছবি, লেখা এবং ভিডিয়োও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছিল। এই সব বিষয়ে তখন বিজেপির অন্দরে-বাইরে প্রশ্ন উঠেছিল। নির্বাচন পর্বে অন্য রাজ্য থেকে আসা বিজেপি কর্মীরা ছড়িয়ে পড়েছিলেন প্রতিটি বিধানসভায়। তাঁদের ভাষা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে স্থানীয় মানুষ নিজেদের যাপন মেলাতে পারেননি বলেও বিজেপির অনেকে দলের অন্দরে মত ব্যক্ত করেছিলেন। এ বার শিবপ্রকাশের স্বীকারোক্তিতে ‘উত্তরপ্রদেশ মডেল’ বলতে ওই সব প্রসঙ্গই বোঝাতে চাওয়া হয়েছে বলে বিজেপির একাংশের ব্যাখ্যা।

গত বছর ইজ়েডসিসি-তে দুর্গাপুজো করেছিল বিজেপি। তাদের আগে কোনও রাজনৈতিক দল এ রাজ্যে কখনও দুর্গাপুজো করেনি। বিভিন্ন দলের নেতা নানা পুজোয় যুক্ত থেকেছেন। সূত্রের খবর, সোমবারের বৈঠকে সব্যসাচী দত্ত বলেন, এ বারেও দলের দুর্গাপুজো করা উচিত। না হলে মানুষ ভাবতে পারেন, ভোটে জেতার জন্য বিজেপি দুর্গাপুজো করেছিল, হেরে গিয়ে তা বন্ধ করে দিল। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘জয় মা দুর্গা’ এ রাজ্যের মানুষের উপযোগী স্লোগান হতে পারে। প্রসঙ্গত, মুকুল রায় বিজেপিতে থাকাকালীন ‘জয় শ্রীরাম’-এর বদলে ‘জয় মা কালী’, ‘জয় মা দুর্গা’ স্লোগানের প্রবক্তা ছিলেন।

দিলীপবাবু, শিবপ্রকাশ প্রমুখ মঙ্গলবার সাংগঠনিক বৈঠক করেন বর্ধমানে। বাঁকুড়ার দু’টি, পূর্ব বর্ধমানের দু’টি, পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া এবং বীরভূমের জেলা সংগঠনকে নিয়ে বৈঠক হয়। বিজেপি সূত্রের দাবি, বৈঠকে প্রশ্নোত্তর পর্বে কয়েক জন জেলা নেতা অভিযোগ করেন, ভোটে পরাজয়ের পরে সংশ্লিষ্ট জেলা ও প্রার্থীদের দোষারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসা প্রবাসী কর্মীদের যখন এখানকার ভোট-রসায়ন বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল, তখন তাঁরা তা না শুনে নিজেদের মত চাপিয়ে দিয়েছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা দলের জেলা নেতৃত্বকেও গুরুত্ব দেননি। ভোটের পরে যখন কর্মীদের উপরে ‘সন্ত্রাস’ হয়েছে, তখন শীর্ষ স্তরের নেতাদের অনেকের দেখা পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ করেন জেলার নেতারা।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Election strategy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy