অনুপম হাজরা, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এবং শমীক ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের মঞ্চে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক কেন? শান্তিনিকেতনে ঘাসফুল শিবিরের ধর্নামঞ্চে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরার উপস্থিতি নিয়ে এমনই প্রশ্ন তুলল তাঁর দল। শুধু তাই নয়। রাখঢাক না করে অনুপমকে খোঁচা দেওয়া হল, চাইলে সরাসরি তিনি তৃণমূলে চলে যেতে পারেন। পাল্টা ফুঁসে উঠলেন অনুপমও। বস্তুত, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তৃণমূলের অবস্থান মঞ্চে অনুপমের উপস্থিতি এবং উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে নিয়ে তাঁর মন্তব্য ‘পার্টি লাইন’ নয় বলে জানিয়ে দিলেন রাজ্য বিজেপির মুখ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। যদিও তা পাত্তাই দেননি অনুপম। উল্টে শমীককে তিনি মনে করালেন দলের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় পদাধিকারীর পার্থক্য।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার তৃণমূলের অবস্থান মঞ্চে আচমকা দেখা যায় অনুপমকে। সেখান থেকে অনুপম উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর তীব্র সমালোচনা করেন। এমনকি, তিনি এ-ও বলেন যে, নিজের কার্যকালের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য বিজেপি সাজার চেষ্টা করছেন উপাচার্য। বিদ্যুৎকে ভণ্ড বলে কটাক্ষ করার পাশাপাশি উপাচার্য পদ থেকে তিনি সরে গেলে শান্তনিকেতনকে গোবর জলে পরিশুদ্ধ করা হবে মন্তব্য করেন বিজেপি নেতা অনুপম। কিন্তু বিজেপি নেতার এই মন্তব্য এবং শাসকদলের মঞ্চে তাঁর উপস্থিতিতে না-খুশ বিজেপি। অনুপমের নাম না নিয়ে শমীক বলেন, ‘‘পার্টি এমন অবাস্তব অবস্থানকে কখনও সমর্থন করে না।’’ বিজেপি নেতার মন্তব্য, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কার্যকলাপে এ ভাবে হস্তক্ষেপ করা বা কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে কোনও কুরুচিকর মন্তব্য, দল এনডোর্স করে না।’’
এখানেই শেষ নয়। অনুপমকে নিশানা করে শমীক বলেন, ‘‘দল বড় হলে অনেক ধরনের লোকজন আসেন। বাংলায় বিজেপি ক্ষমতা আসছে ভেবে ক্ষমতার অলিন্দে থাকতে চান, এমন অনেকে তখন (২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে) ঢুকে পড়েছেন।’’ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিজেপির সম্পাদক অনুপমের বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহারের কোনও বিজেপি কর্মীকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, ওঁর বক্তব্যের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। স্পষ্ট কথাটা স্পষ্ট করেই বললাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অনেকে এখনও দলের সংস্কৃতিটা বুঝে উঠতে পারেননি। কেউ কেউ খিদে পেটে রয়ে গিয়েছেন। তাই নির্বাচনের সময় অনুব্রত মণ্ডলের (বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি। গরু পাচার মামলায় বর্তমনে জেলবন্দি) বাড়িতে মাছের ঝোল-ভাত খেয়ে হজম হয় কি না, সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছেন। কিন্তু, বিজেপি কোনও অবস্থাতেই কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার এবং স্বশাসনকে ধ্বংস করতে চায় না। কোনও উপাচার্যকে কোনও কদর্য ভাষায় আক্রমণ বিজেপি অনুমোদন করে না। এটা বিজেপির সংস্কৃতির পরিপন্থী।’’
উল্লেখ্য, বিজেপির মধ্যে অনুপম এবং শমীকের ‘দ্বন্দ্ব’ নতুন নয়। ‘দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল’ নেতাদের দলে আসার বার্তা দিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন অনুপম। তাঁর মন্তব্যকে সরাসরি দলবিরোধী বলে মন্তব্য করেছিলেন বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক। পাল্টা শমীককে সমাজমাধ্যমে আক্রমণ করেন অনুপম। মঙ্গলবারও তিনি প্রশ্ন তুললেন, কী করে কেন্দ্রীয় নেতার সমালোচনা করতে পারেন কোনও রাজ্য নেতা! অন্য দিকে, শমীকের খোঁচা, ‘‘বিজেপিতে এসে কেউ বিজেপিকে ধন্য করে দেননি। ইচ্ছে হলে কেউ সরাসরি তৃণমূলে চলে যেতে পারেন। পার্টিতে থেকে পার্টির অবস্থানের বাইরে কথা বলা, অমর্যাদা করা চলবে না।’’ যার প্রেক্ষিতে আবার শমীককে রাজ্য বিজেপির অফিসে বসা টিয়াপাখি বলে আক্রমণ করেছেন অনুপম। তাঁর কথায়, ‘‘বারো মাস এসি ঘরে বসে শেখানো কিছু কথা আওড়ান। উনি জানেন না, বুথকর্মীর জন্য আমি কতটা লড়াই করছি। কী ভাবে দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়া কর্মীদের চাঙ্গা করার কাজ করছি। আর দ্বিতীয় কথা, উনি বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করেননি, শান্তিনিকেতনের মানুষও নন যে এই উপাচার্য আসার পর সেখানকার আবেগ কতটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন, তা উপলব্ধি করতে পারবেন।’’ সব মিলিয়ে ‘কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য বিজেপি নেতার’ দ্বন্দ্বে শুরু হয়েছে জোর চাপানউতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy