বিধানসভায় গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতিতে তৃণমূলে ফিরলেন সব্যসাচী দত্ত। —নিজস্ব চিত্র।
২০১৯ সালের দেবীপক্ষে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্ত। ২০২১-এর দেবীপক্ষে ফিরলেন পুরনো দলে। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় গিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব ও রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলে ফিরলেন তিনি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তৃণমূলে যোগ দিয়ে সব্যসাচী বলেন, ‘‘ভুল বোঝাবুঝির জন্য দল ছেড়েছিলাম। আমায় আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রহণ করেছেন। পার্থদা, ববিদা গ্রহণ করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। দল যে ভাবে বলবে সে ভাবে কাজ করব।’’
বিজেপি-তে থাকলেও সব্যসাচীর বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে দলবিরোধী মন্তব্যের অভিযোগ উঠছিল বার বার। এই দুর্গাপুজো নিয়েও বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে দ্বৈরথে জড়ান তিনি। এ বছর পুজো হবে কি না তা নিয়ে বিজেপি দোলাচলে থাকায় সব্যসাচী সংবাদমাধ্যমকে জানান, গতবার ভোট ছিল তাই পুজো হয়েছে। এ বার ভোট নেই তাই পুজোও নেই। এর প্রেক্ষিতেই দিলীপ বলেন, ‘‘বিধি অনুযায়ী পুজো হওয়া উচিত। ভোট দেখে পুজো হওয়া ঠিক নয়। যাঁরা পুজো করেছিলেন তাঁদের চিন্তাভাবনা করা উচিত।’’
এর পরে বুধবারও দিলীপের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে, লখিমপুর খেরির ঘটনা নিয়ে। সেখানে তৃণমূল-সহ বিরোধীদের যেতে না দেওয়ার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন সব্যসাচী। আর তাতেই দিলীপের সঙ্গে ফের দ্বৈরথ। মঙ্গলবার দিলীপ যোগী আদিত্যনাথের সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপই করেছে।’’ বুধবার সব্যসাচী বলেন, ‘‘কোনও আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়া পদ্ধতি হতে পারে না। এটা গণতান্ত্রিক দেশ, এ তো তালিবান শাসন নয়।’’ বুধবার সব্যসাচী ওই মন্তব্য করার পর থেকেই জল্পনা তৈরি হয় যে, সব্যসাচীর তৃণমূলে ফেরাটা পাকা হয়ে গিয়েছে।
রাজ্য রাজনীতির সকলেরই এটা জানা যে, মুকুল রায়ের হাত ধরেই বিজেপি-তে গিয়েছিলেন সব্যসাচী। তৃণমূলে থাকার সময়ে বিজেপি নেতা মুকুলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা সকলেরই জানা। মুকুল তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পরে বিজেপি-র সব্যসাচীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বলেই জানা যায়। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিধাননগরে পদ্মের টিকিটে ভোট লড়েও পরাজিত হন সব্যসাচী। এর পর দলের নীতি নিয়ে প্রকাশ্যেই নিন্দা করতে থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে দলেবিরোধী মন্তব্যের অভিযোগও ওঠে। বার বার নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয়। একই সঙ্গে বিজেপি নেতারা দাবি করতে থাকেন, তলায় তলায় তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সব্যসাচী।
গত কয়েক দিন ধরে সব্যসাচী যে তৃণমূলে ফিরতে পারেন তা নিয়ে জল্পনা জোরালো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরেই অবশ্য তা স্পষ্ট হয়ে যায়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনিই সব্যসাচীকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিধায়ক পদে শপথ নিতে এসেছিলেন মমতা। শপথের আগেই তিনি ঘনিষ্ঠমহলে বলেন, ‘‘আমি আজই ওকে নিয়ে নিতে বলেছি।’’ মমতার সেই ঘোষণার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সব্যসাচী বিধানসভায় আসেন। বেলা ৩টে নাগাদ তৃণমূলে যোগ দেন।
বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক পদে ছিলেন সব্যসাচী। একই সঙ্গে আসন্ন খড়দহের উপনির্বাচনে তাঁকে ‘ইনচার্জ’ করেছিল গেরুয়া শিবির। ফলে এই দলবদলে অনেকটাই অস্বস্তিতে বিজেপি। যদিও বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এই দলবদলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘উনি যেচেই বিজেপি-তে এসেছিলেন। আমরা ওঁকে ডাকিনি। ফলে আজ তিনি চলে যাওয়াতেও আমাদের কিছু বলার নেই। কারণ, বিজেপি নেতা-নির্ভর নয়, কর্মী-নির্ভর দল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy