Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Dilip Ghosh

দিলীপ পদ্মের ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল’ হলেন! রাজ্য জুড়ে একলা চলো কি হারানো পদ ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে?

ভোটে হেরে গেলেও দমে যাননি দিলীপ ঘোষ। দলের কোনও কর্মসূচি ঠিক না হলেও নিজের মতো করে জেলায় জেলায় সফর চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তা নিয়ে যেমন প্রশংসা পাচ্ছেন, তেমন সমালোচনাও রয়েছে।

BJP leader Dilip Ghosh roaming all over West Bengal without informing state leaders

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ১৬:১৪
Share: Save:

দিলীপ ঘোষ কোথায়? রাজ্য বিজেপির নেতারা স্পষ্ট করে বলতে না পারলেও সমাজমাধ্যমে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, দিলীপ ঘুরে চলেছেন জেলা থেকে জেলায়। শনিবার তিনি ভাটপাড়ায় দলীয় কর্মীদের নিয়ে ক্যারাম খেলেছেন। সোমবার তিনি সদলবলে মালদহে এক কৃতী ছাত্রের বাড়িতে। সদ্য আইআইটির প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ গরীব পরিবারের ছেলে অভিজিৎ রায়কে কথা দিয়েছেন, তাঁর পুরনো এলাকা খড়্গপুরে পড়ার সুযোগ হলে তিনি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন।

গত কয়েকদিনে দিলীপ এ ভাবেই জেলায় জেলায় ঘুরছেন। মেদিনীপুর, ব্যারাকপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ দক্ষিণ, মালদহ উত্তর হয়ে সোমবার তিনি পৌঁছেছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের লোকসভা কেন্দ্র বালুরঘাটে! সোমবার সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ি লোকসভা এলাকা। সর্বত্রই এক কর্মসূচি— স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে কথা বলা। কেন এমন সফর? দিলীপের দাবি, অতীতের মতোই তিনি ঘুরছেন। এ তো নতুন কিছু নয়।

দিলীপের এই কর্মসূচি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাজ্যনেতৃত্ব। দিলীপ নিজে থেকেই এই সফর করছেন। কবে, কোথায় যাচ্ছেন তা রাজ্যনেতৃত্বকে আগাম জানানো হয়নি। দিলীপের এই ‘একলা’ সফর নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে বিজেপির অন্দরে। কেউ কেউ সমালোচনার সুরে বলছেন, ‘‘এটা তো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো আচরণ। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এমন সফরের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা নেই।’’ তবে উল্টো বক্তব্যও আছে। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘জয়ীরা এখন মন্ত্রী আর সাংসদ হিসাবে ব্যস্ত। বাকি পরাজিতেরা যখন ঘরে বসে রয়েছেন, তখন লোকসভা নির্বাচনের বিপর্যয়ে মনোবল ভেঙে যাওয়া নেতা-কর্মীদের কাছে দিলীপের যাওয়া প্রশংসনীয়।’’ তবে সব মহলই একটি বিষয়ে একমত— আবার রাজ্য সভাপতি হওয়ার লক্ষ্যেই দক্ষিণ থেকে উত্তর পাড়ি জমাচ্ছেন দিলীপ। যদিও দিলীপ নিজে বলছেন, ‘‘নিজের দলের কর্মীদের সঙ্গে দেখা করার আবার কারণ লাগে না কি! যাঁরা আমার এই সফরে অন্য লক্ষ্য দেখছেন তাঁদের মনে রাখা দরকার, আমি যাঁদের কাছে যাচ্ছি, তাঁরা আমায় রাজ্য সভাপতি বানাতে পারবেন না। সেটা চাইলে দিল্লি গিয়ে বসে থাকতাম। দিলীপ ঘোষ সেই বান্দা নয়।’’ তিনি যে কারও নির্দেশে বা কাউকে জানিয়ে এই কর্মসূচি নেননি, তা স্বীকার করে দিলীপ বলেন, ‘‘এতে আবার অনুমতি নেওয়ার কী আছে? ২০১৯ আর ২০২১ সালে নির্বাচনের পরেও গোটা রাজ্যে ঘুরে কর্মীদের খোঁজখবর নিয়েছিলাম। সেটাই করছি। আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলছি। যাঁদের মনোবল ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের নতুন করে লড়াইয়ের কথা বলছি।’’ নিজের পরাজয়ের উদাহরণ দিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘আমিই তো সকলের কাছে সবচেয়ে বড় উদাহরণ। হেরেছি। কিন্তু হাল ছাড়িনি। আবার মাঠে নেমে পড়েছি।’’

বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে বড় ব্যবধানে হারছেন বুঝতে পেরে ভোটগণনার সন্ধ্যায় কলকাতায় চলে এসেছিলেন দিলীপ। কয়েকটা দিন কলকাতায় থাকার পাশাপাশি রাজ্যনেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। তার পরে নরেন্দ্র মোদীর শপথে দিল্লি চলে যান। কলকাতায় ফিরে সল্টলেকের দফতরে না গিয়ে বিজেপির পুরনো দফতরে একাধিক দিন অনুগামীদের নিয়ে বসেন। সেখানে রাজ্য বিজেপির ‘বিক্ষুব্ধ’দেরও দেখা গিয়েছে।

তবে এক দিন সেক্টর ফাইভের দফতরে গিয়েছিলেন দিলীপ। ১৫ জুন কোর কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে। ১৬ তারিখ থেকেই শুরু হয় তাঁর সফর। প্রথম দিনে যান নিজের আসন বর্ধমান দুর্গাপুরে। জেলা দফতর ছাড়াও গলসি এবং দুর্গাপুর শহরে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ভোটের পরে ‘আক্রান্ত’ নেতা-কর্মীদের খোঁজ নেন। পর দিন সোমবার প্রথমে মেদিনীপুর জেলা দফতর এবং পরে খড়্গপুরে গিয়ে বৈঠক করেন। মঙ্গলবার বেলদায় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে হাওড়ার তাঁতিবেড়িয়ায় আরএসএসের একটি কর্মসূচিতে যোগ দেন।

প্রসঙ্গত, কোনও জায়গাতেই দিলীপ এমনকিছু বলেননি, যাতে দল ‘অস্বস্তি’তে পড়তে পারে। বস্তুত, ভোটে হারার পরে সমালোচনার সুরও তাঁর গলায় এখন শোনা যাচ্ছে না। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপেই দলের প্রকাশ্য সমালোচনা থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন দিলীপ।

অতীতেও দিলীপ এমন সফর করেছেন। কিন্তু তখন তিনি ছিলেন রাজ্য সভাপতি। বিধায়ক ও সাংসদও ছিলেন। সর্বভারতীয় সহ-সভাপতিও হয়েছেন। তবে এখন তাঁর সব পরিচয়ের আগেই ‘প্রাক্তন’ শব্দটি বসে গিয়েছে। স্বভাবতই দিলীপের সফরে প্রশ্ন উঠেছে তাঁর পরবর্তী ‘লক্ষ্য’ নিয়ে। অনেকে বলছেন, সুকান্ত মজুমদারের পরে রাজ্য সভাপতি পদের অন্যতম দাবিদার দিলীপ। বিজেপির সংবিধান অনুযায়ী একটি দফা অর্থাৎ তিন বছর পরে প্রাক্তনেরা আবার রাজ্য সভাপতি হতে পারেন। সেই লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার জন্যই কি দিলীপের সফর?

‘আদি’ বিজেপি হিসাবে দিলীপকে অনেকে আবার রাজ্য সভাপতি পদে চাইছেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দিলীপের দূরত্ব বেড়েছে। একাধিক বার প্রকাশ্য সমালোচনা এবং শেষে পদও কেড়ে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ফলে দিলীপকে ‘বড় দায়িত্ব’ দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে দিলীপ-অনুগামীরা মনে করছেন, রাজ্যে বিজেপির ‘ভাঙাচোরা’ চেহারা বদলাতে দিলীপই ‘যোগ্যতম’। তাঁর জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং নির্বাচনী ফলাফলের পুরনো রেকর্ডই তাঁকে এগিয়ে রেখেছে। দিলীপ নিজে অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি কোনও প্রতিযোগিতায় নেই। মনে হয়েছে বেরিয়ে পড়েছি। দল আমায় একটা গাড়ি দিয়েছে ঘোরার জন্য। সেটার ব্যবহার করছি। এর বেশি তো কিছু নয়। কার্যকর্তাদের বাড়িতে খাচ্ছি, থাকছি আর সকলের সঙ্গে দেখা করছি। এটা চালিয়ে যেতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dilip Ghosh BJP Leader West Bengal BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy