—ফাইল চিত্র।
ভবানীপুর উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ বৃহস্পতিবার। টানটান ওই ভোটের প্রচারপর্ব শেষ হয়েছে সোমবার বিকেলে। আর সন্ধ্যাতেই দিল্লি উড়ে গেলেন রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন ও বর্তমান সভাপতি। দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে একই বিমানে দিল্লি গেলেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। বিজেপি সূত্রে খবর, সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা-সহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মঙ্গলবারই বৈঠকে বসবেন তাঁরা। লক্ষ্য, বাংলায় সাংগঠনিক রদবদল। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, এ বার বেশ উল্লেখযোগ্য হতে চলেছে নেতাদের দায়িত্বের অদলবদল।
গত সোমবার অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বর আচমকাই দিলীপ ঘোষকে রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানিয়ে দেন, তাঁকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হয়েছে। আর সভাপতি করা হয় বালুরঘাটের বিধায়ক সুকান্ত মজুমদারকে। দলীয় সংবিধান অনুযায়ী বিজেপি-র রাজ্য সভাপতির পদ নির্বাচনভিত্তিক এবং তার মেয়াদ তিন বছরের। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক জন একটানা দু’দফায় মোট ছ’বছর সভাপতি থাকতে পারেন। দিলীপের মেয়াদ ফুরনোর কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। তবে অনেক সময় নির্বাচন ছাড়াও সভাপতি বদলের সংস্থান রয়েছে বিজেপি-র সংবিধানে। তেমন করে এসেছিলেন দিলীপও। পরে সাংগঠনিক নির্বাচনে জিতেও তিনি সভাপতি থেকে যান।
দিলীপকে যে সরানো হবে তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। এখন মনে করা হচ্ছে রাজ্য বিজেপি-র খোলনোলচেই বদলে যেতে পারে। ২০২১ সালের নির্বাচনে নবান্ন দখলের লক্ষ্যে দল সাজিয়েছিল বিজেপি। ভোটের আগে আগেই সংগঠনে অনেক বদল দেখা গিয়েছিল। তবে সেই দল আশানুরূপ ফল দিতে পারেনি। বিজেপি সূত্রে খবর, এ বার প্রস্তুতি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে। তার আগে রাজ্যে পুর ও পঞ্চায়েত নির্বাচনও রয়েছে। তাই সময় থাকতেই নতুনদের হাতে দায়িত্ব দিতে চান কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কী কী বদল হতে পারে তার রূপরেখা মঙ্গলবার দিল্লির বৈঠকেই নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। বিজেপি-র রাজ্য সংগঠনে সভাপতির পরেই গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ সম্পাদক পদ। এখন ওই পদে রয়েছেন পাঁচজন— কলকাতার দুই নেতা সায়ন্তন বসু, সঞ্জয় সিংহ, হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এবং উত্তরবঙ্গের নেতা রথীন্দ্রনাথ বসু। এর মধ্যে অন্তত তিন জনকে তুলনায় কম গুরুত্বের পদে সরানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজ্যে সাধারণ সম্পাদকের সংখ্যাও বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে একাধিক নেতাকে ওই পদে আনা হতে পারে। সেই নেতারা কে কে, তা নিয়ে বেশ কিছু নাম শোনা যাচ্ছে বিজেপি-র অন্দরে। তাঁদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন নিখিলরঞ্জন দে, অজিত দাস। প্রথম জন কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক এবং দ্বিতীয় জন এখন বিজেপি তফসিলি মোর্চার রাজ্য সভাপতি। উল্লেখ্য, এঁরা দু’জনেই আরএসএস এবং বিদ্যার্থী পরিষদ থেকে বিজেপি-তে আসেন। বড় দায়িত্ব পাওয়ার দৌড়ে আছেন বিদ্যার্থী পরিষদের আর এক প্রাক্তনী দেবজিৎ সরকার। তিনি অতীতে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ছিলেন। বড় পদ পেতে পারেন জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়ও।
রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদে মহিলা মুখ হিসেবে লকেট থাকবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি এটাও আলোচনা চলছে যে, পরবর্তী কমিটিতে কে আসবেন? মহিলা মুখ হিসাবে অনেকেই এগিয়ে রাখছেন মালদহের ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে। তবে সম্প্রতি তিনি মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। সে ক্ষেত্রে আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল জায়গা পেতে পারেন। যে ভাবে লকেট মহিলা মোর্চার সভানেত্রী পদ থেকে বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এই তালিকায় রয়েছেন দলের কোচবিহার জেলার সভাপতি তথা তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতি রাভা রায়ও।
আরও দু’টি নাম নিয়ে জোর আলোচনা বিজেপি শিবিরে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বোলপুরে প্রার্থী হওয়া অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজ্য সংগঠনে আনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি অমিত শাহকে নিয়ে বইও লিখেছেন। যদিও একটি সূত্রের দাবি, অনির্বাণ নিজেই রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন। দ্বিতীয় যে নামটি আলোচনায় রয়েছে সেটি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর। মন্ত্রিত্ব খোওয়ানো বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। কিন্তু রায়গঞ্জের সাংসদ তথা সঙ্ঘ ঘরানার দেবশ্রী আগেই জানিয়েছেন, তিনি দলের নির্দেশ মতো সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে চান। অতীতে অনেক পদ সামলানো দেবশ্রীকে এ বার রাজ্যে সহ-সভাপতি করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে মঙ্গলবারই যাবতীয় পরিবর্তনের ঘোষণা হয়ে যাবে এমনটা না-ও হতে পারে। বিজেপি নেতাদের একাংশের বক্তব্য, পুজোর পরেই হবে ঘোষণা। তবে কেউ কেউ বলছেন, পুজোর আগে ঘোষণা করে দিয়ে শুরু থেকেই নতুন টিম নিয়ে কাজের সুযোগ দেওয়া হতে পারে নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্তকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy