Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Cossipore

Cossipore Incident: কাশীপুরের রেল কোয়ার্টার বরাবরই ভয়ের, অর্জুনের মৃত্যু বাড়িয়ে দিল বাসিন্দাদের আতঙ্ক

কোয়ার্টারের চৌহদ্দির মধ্যেই অপঘাতে মৃতের দেহ উদ্ধারে নিরাপত্তাহীনতা এবং আতঙ্ক দুই বাড়িয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। 

সেই রেল কোয়ার্টার।

সেই রেল কোয়ার্টার। —নিজস্ব চিত্র।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২২ ২৩:১৬
Share: Save:

একটি দেহ উদ্ধারের ঘটনায় গোটা চত্বরে ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে। তবে প্রতি দিন সন্ধ্যার পরে যে কাশীপুরের ওই রেল কোয়ার্টার সংলগ্ন এলাকা দুর্বৃত্তদের হাতে চলে যায়, তা মেনে নিচ্ছেন অনেকেই। বসে নেশা ও জুয়ার আসরও। ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন বাসিন্দারা। সন্ধ্যা নামতেই তাই সকলে ঘরে ঢুকে পড়েন। বন্ধ করে দেন দরজা।

কাশীপুরের রেল কোয়ার্টারের ভিতর থেকে শুক্রবার সকালে উদ্ধার হয় বিজেপি নেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার দেহ। সকাল থেকেই এলাকায় ছিল ভিড়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভও ছিল। মোতায়েন ছিল প্রচুর পুলিশ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ নেতা মন্ত্রীদের আনাগোনাও ছিল। কিন্তু প্রতি দিন রেল কোয়ার্টারের এই এলাকায় এত লোক জন থাকেন না। উল্টে, অন্ধকার নামতেই কোয়ার্টারের দরজা বন্ধ করে দেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, কোয়ার্টারের সামনের ফাঁকা মাঠে রাত বাড়তেই মানুষের আনাগোনা বাড়ে। শুধু স্থানীয়েরা নন, বহিরাগতদের আড্ডাও চলে। চলে মদ্যপান। অগত্যা দরজা বন্ধ করে নিরাপদে থাকার চেষ্টা। এই আবহে কোয়ার্টারের চৌহদ্দির মধ্যেই অর্জুনের দেহ উদ্ধারের ঘটনা ওই এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তাহীনতা এবং আতঙ্ক দুইই বাড়িয়েছে।

দোতলা লাল রঙের রেল কোয়ার্টারগুলিতে হাতে গোনা পরিবারের বাস। কোথাও পলেস্তারা খসেছে তো কোথাও কোয়ার্টারের গা বেয়ে গাছ জন্মেছে। কাশীপুর এলাকার পুরনো এই সব কোয়ার্টারের সব ঘরে মানুষজনও থাকেন না। যে ঘরের মধ্যে অর্জুনের দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থাতেই ছিল বলে স্থানীয়দের দাবি। দরজাও কে বা কারা যেন খুলে নিয়ে গিয়েছে। আপাতত কাশীপুরেরই স্থানীয় এক বাসিন্দা তাঁর পোষ্যদের রাখার কাজে ব্যবহার করেন কোয়ার্টারের ওই ফাঁকা ঘরটি।

রেল কোয়ার্টারের কোণের একটি পরিত্যক্ত ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় অর্জুনের দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘরের পাশের কোয়ার্টারেই সন্তানদের নিয়ে থাকেন সুমনা এবং মনসা। কাজের জন্য অনেক সময় সুমনার স্বামীকে রাতের শিফ্‌ট করতে হয়। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘ওঁর যখন রাতের শিফ্‌ট থাকে, সেই সময় বাচ্চাদের নিয়ে একাই তো থাকি কোয়ার্টারে। সন্ধ্যার পর বাইরে একাধিক লোকজন দল বেধে বসে থাকে। মদ্যপান করে বলেই মনে হয়। তাই দরজা বন্ধ রাখি সব সময়।’’

শুক্রবার সকালে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবার তোড়জোড়ের সময়ে অর্জুনের পরিবারের লোকজনের কান্নায় পাশের ঘরে দেহ উদ্ধারের বিষয়টি জানতে পারেন মনসা। তিনি জানিয়েছেন, অর্জুনের দেহ যে ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছে বছরখানেক আগে সেখানে একটি পরিবার থাকত। কিন্তু তারা কোয়ার্টার ছাড়ার মাস দুয়েকের মধ্যে কে বা কারা যেন দরজা খুলে নিয়ে চলে যায়। তাই আপাতত ওই কোয়ার্টারটি দরজাহীন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তেমন অস্বাভাবিক কোনও বিষয় নজরে আসেনি বলেই দাবি করেন মনসা। তবে পাশের কোয়ার্টারে দেহ উদ্ধারে আতঙ্ক বেড়েছে তাঁদের। মনসার কথায়, ‘‘দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমার মেয়ে এখনও খেতে পারছে না। আমারও ভয় কাটছে না যেন!’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কোয়ার্টারেই এক বাসিন্দার গলাতেও একই সুর। ওই বাড়ির কর্ত্রী বলেন, ‘‘আমার কর্তা যখন কাজের সূত্রে বাইরে চলে যান, তখন বাড়িতে বয়স্ক মা এবং সন্তানদের নিয়ে তো একাই থাকতে হয়। আমরাও সন্ধ্যার পর দরজা বন্ধ করে দিই। কোয়ার্টারের বাইরে অনেকে রাতে শুয়েও থাকেন।’’ অন্য এক বাসিন্দার দাবি, তাঁদের ঘরের উল্টো দিকে দোতলা যে কোয়ার্টারটি রয়েছে সেখানেও কয়েকটি ঘর খালি। থাকার জন্য নতুন কোনও পরিবার আসেনি। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানকার দরজাও কারা ভেঙে নিয়ে গেছে। এ বার ওখানেও আড্ডা বসানো হবে হয়তো।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cossipore Death BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy