Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
BJP leader Anupam Hazra

শাহের কড়া বার্তার পরেও বিজেপি নেতাদের নিয়ে অনুপম এ কী বললেন! তৃণমূল যোগ দেখছে দল

দীর্ঘ দিন ধরেই বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলা মন্তব্য করে চলেছেন দলেরই সর্বভারতী নেতা অনুপম হাজরা। সেই কারণেই সম্প্রতি তাঁকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা হারাতে হয়েছে। তার পরেও সরব অনুপম।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৫
Share: Save:

এক নাগাড়ে রাজ্য নেতৃত্বের সমালোচনা করা, তৃণমূলের মঞ্চে যাওয়া, সমাজমাধ্যমে দলকে অস্বস্তিতে ফেলার মতো মন্তব্য করে চলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। এটা যে রাজ্য নেতৃত্ব ভাল চোখে দেখছেন না তা আগেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন অনুপমকে। সম্প্রতি সর্বভারতীয় নেতা হওয়া সত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অনুপমকে দেওয়া নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যা সরাসরি দেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে সেই বার্তার পরেও অনুপম যে দমছেন না সেটা বুঝিয়ে রবিবার ফের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে লিখেছেন, ‘‘নিজের দলের মধ্যে বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠিত চোর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রাখলে, আর কয়েকদিন পর তৃণমূলকে চোর বলার জায়গায় থাকব কি আমরা?’’

দলের কোনও নেতার নাম না উল্লেখ করলেও রাজ্য বিজেপির নেতারা স্পষ্টই বুঝতে পারছেন কাকে উদ্দেশ্য করে অনুপমের এই পোস্ট। বীরভূমের নেতাদের সঙ্গে তাঁর যে বনিবনা নেই তা গেরুয়া শিবিরের সকলেরই জানা। তিনি সরাসরি সংঘাতেও জড়িয়েছেন কয়েকবার। দলেরই এক নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মামলার হুমকিও দিয়েছেন। আর যা নিয়ে বার বার রাজ্য বিজেপির পক্ষে বলা হয়েছে, দলের ভিতরে না বলে বাইরে বলাটা ঠিক হচ্ছে না। রবিবারের ফেসবুক পোস্টে তার উত্তরও দিয়েছেন অনুপম। লিখেছেন, ‘‘এখন কেউ কেউ আদিখ্যেতা করে বলবেন ‘সোশ্যাল মিডিয়াতে কেন লিখছেন?’, কারণ, পার্টির মধ্যে তো বলার সুযোগ নেই। কারণ, রাজ্য বিজেপির কোনও মিটিংয়ে তো ডাকা হয় না, বা বার বার বলা সত্ত্বেও সেটা শোনা হয় না।’’

অতীতেই রাজ্য বিজেপির তরফে ঠিক করা হয়েছিল যে, অনুপমের মন্তব্যের কোনও জবাব দেওয়া হবে না। রবিবারের পোস্টের পরেও বিজেপির রাজ্য নেতারা আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে তাঁরা এটা বলছেন যে, এর পিছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদের। প্রসঙ্গত, এক সময়ে বোলপুর আসন থেকে তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন অনুপম। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে ২০১৯ সালে যাদবপুর আসন থেকে পদ্মের টিকিটে ভোটে লড়েন। সে বার পরাজিত হলে বিজেপি আর বিধানসভায় অনুপমকে কোনও নির্বাচনে প্রার্থী করেনি। বরং, অন্য রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি রাজ্য নেতৃত্বকে বার বার অস্বস্তিতে ফেলছেন। এ বার দলের মধ্যেই তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘তিনি যা বলছেন, যা করছেন সেটা আমাদের তেমন ক্ষতি করতে না পারলেও তৃণমূলের সুবিধা করে দিচ্ছে। তাই মনে হচ্ছে তিনি পুরনো দলের মায়া কাটাতে পারছেন না। এ দিকে স্বার্থ পূরণ হবে না বুঝে ফিরে গিয়ে টিকিট পেতে চান।’’

দীর্ঘ দিন কেন্দ্রের ‘ওয়াই ক্যাটেগরি’-র নিরাপত্তা পেতেন অনুপম। গত ৫ ডিসেম্বর অনুপমকে জানিয়ে সেই নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। জানা গিয়েছে, এর পরেই বোলপুর ছেড়ে দিল্লি চলে গিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ। যদিও পরে সমাজমাধ্যমে নিজের দিল্লি যাত্রার অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর দলের নেতারাই বলছেন, দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলাকে যে নেতৃত্ব পছন্দ করছেন না সেটা অনুপমের নিরাপত্তা তুলে নিয়ে সকলকেই বার্তা দিয়েছেন।

অনুপমের একের পর এক মন্তব্যকে দল যে ভাল চোখে দেখছে না সে ইঙ্গিত অনেক আগেই দিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্কের সময়ে তিনি শান্তিনিকেতনে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে চলে যান। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথাও বলেন। তার আগে রামপুরহাট এবং পরে খয়রাশোলে দু’টি বিজয়া সম্মিলনীতে যোগ দেওয়ার কর্মসূচি ছিল অনুপমের। তার মাঝে তিনি ফেসবুক লাইভে রাজ্য নেতৃত্বকে তীব্র আক্রমণ করেন। অভিযোগ করেন, রাজ্য সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-এর মদতেই জেলা বিজেপিতে অরাজকতা চলছে। জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা লোক দিয়ে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করতে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন অনুপম। সেই সঙ্গে জেলারই এক নেতা তাঁর ‘জাত’ উল্লেখ করে আক্রমণ করেছেন, এমন অভিযোগ তুলে এর বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা বলেন অনুপম। এ প্রসঙ্গে তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘আমার জাত তুলে কথা বলা হয়েছে। আমি তফসিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত। সেই মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ করব।’’

অনুপমের আরও দাবি ছিল, রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েক জনের অঙ্গুলিহেলনেই এই সব হচ্ছে। সেই সময়েই রাজ্য সভাপতি সুকান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘উনি আগে বালুরঘাট সামলান। ক’দিন আগেই দেখলাম ২০ জন লোক নিয়ে ঘুরছেন। তার মধ্যে ১৮ জনই নিরাপত্তাকর্মী।’’ এর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সুকান্ত বলেছিলেন, ‘‘সবটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানেন। কয়েক দিনের মধ্যে আপনারা এর ফল দেখতে পাবেন।’’

ফল পেয়েছেন অনুপম। চলে গিয়েছে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা। তার পরেও সরব অনুপমের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব আরও কড়া পদক্ষেপ করতে পারে বলে বিজেপির রাজ্য নেতাদের ধারণা।

অন্য বিষয়গুলি:

anupam hazra BJP TMC Amit Shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy