পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাংলায় আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামী শুক্রবার, বাংলা বছরের শেষ দিনে কলকাতায় পা রাখার কথা তাঁর। বীরভূমে একটি সভাও করতে পারেন চৈত্র সংক্রান্তির দিনই। তার পরের দিন সকালে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে গিয়ে পুজো দেওয়ার কথা রয়েছে শাহের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দু’দিনের সফরকে ঘিরে বাংলা বিজেপিতে তাই সাজ সাজ রব।
চলতি বছরে এই প্রথম বাংলায় আসছেন অমিত। এর আগে একাধিক বার তাঁর পশ্চিমবঙ্গ সফরের পরিকল্পনা বাতিল হয়ে গিয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসেই শাহের এ রাজ্যে আসার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি। তিনি কথা দিয়েছিলেন, বাজেট অধিবেশনের পর বাংলায় আসবেন। সেই মতো চলতি সপ্তাহের শেষে শাহের সফরের আয়োজন করা হয়েছে।
বিজেপি সূত্রে খবর, ১৪ এপ্রিল বীরভূমের সিউড়িতে একটি সভা করবেন শাহ। রাতেই ফিরে আসবেন কলকাতায়। সেখানে রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন তিনি। ওই বৈঠকে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তার পর ১৫ তারিখ সকালে শাহ যেতে পারেন দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে পুজো দিতে। পুজো দিয়েই অবশ্য ফিরে যাবেন তিনি।
আরও পড়ুন:
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে শাহের এই দু’দিনের ঝটিকা সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিজেপির মধ্যে এখনও তেমন উদ্যোগ, পরিকল্পনা লক্ষ করা যায়নি। শাহের বৈঠকের মাধ্যমে গেরুয়া শিবিরে পঞ্চায়েতের সেই প্রস্তুতিই শুরু হতে চলেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বীরভূমের সিউড়ি আসনটি নজরে রয়েছে বিজেপির। তাই বীরভূমে সংগঠন জোরদার করার লক্ষ্যেই মূলত শাহের বাংলায় আসা। সে ক্ষেত্রে, ১৪ তারিখ সিউড়িতে জনসভা না করে কর্মীসভা করতে পারেন তিনি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রাজ্য বিজেপির নেতাদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে সেই বৈঠক হয়েছিল শাহের সঙ্গে। রাজ্যের নানা দাবিদাওয়া সম্পর্কে শাহকে জানিয়েছিলেন পদ্মের নেতারা। সেই বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছিল সিএএ প্রসঙ্গ। রাজ্যের বিজেপি নেতারা, বিশেষত মতুয়া নেতা তথা সাংসদ শান্তনু ঠাকুর শাহের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, বাংলায় কবে সিএএ চালু হবে? সেই প্রশ্নের মুখে ১০-১৫ দিন অপেক্ষা করতে বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শুক্রবার তিনি যখন কলকাতায় আসবেন, সেই অপেক্ষার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে রাজ্যে সিএএ নিয়ে কী বার্তা দিতে চলেছেন শাহ, সে দিকে নজর থাকবে।
এ ছাড়া, গত কয়েক দিন ধরে রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে। রাজ্যের বকেয়া টাকা না পাওয়ায় সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ধর্মতলায় বকেয়ার দাবিতে দু’দিন ধর্নাতেও বসেন। আবার, দিল্লিতে গিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মমতা। বাংলা সফরে এসে কেন্দ্রের বঞ্চনা প্রসঙ্গে রাজ্যের অভিযোগের পাল্টা জবাব দিতে পারেন শাহ, নজর থাকবে সে দিকেও।
সম্প্রতি রাজ্যে ইডি এবং সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। বেশ কয়েক জন ‘হেভিওয়েট’ নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তিহাড় জেলে বন্দি। এই সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে শাহ কী বার্তা দেন, সে দিকে চোখ রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।