রাজু ঝা। ফাইল চিত্র।
তিনি কোথায় ছিলেন, কেউ জানে না। এমনকি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, যারা তাঁকে বার বার তলব করেছে হাজিরা দিতে, তারাও না। পয়লা এপ্রিলের রাতে শক্তিগড়ে রাজু ঝায়ের গাড়ির কাছে হঠাৎ ‘উদয়’ হয়ে সবাইকে চমকে দিলেন শেখ আব্দুল লতিফ। তার পর থেকেই প্রশ্ন, রাজু আর লতিফের মধ্যে সখ্য তৈরি হল কেন এবং কী করে? বিশেষ করে লতিফ যখন বরাবরই অনুব্রতের ‘স্নেহধন্য’ আর রাজুর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব সকলেরই জানা?
কয়লা অঞ্চলের লোকজন বলছেন, এই পরিবর্তনটা শুরু হয় ২০২১ সাল থেকে। তার আগে লতিফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল অনুপ মাজি ওরফে লালার। সেই লালা, ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে যিনি কয়লা কারবারে একচ্ছত্র হয়ে উঠেছিলেন। ২০২০ সালে তিনি সিবিআইয়ের জালেও পড়েছিলেন। পরে অবশ্য জামিনে মুক্ত। শোনা যায়, কয়লা পাচার তদন্তে লালার জবানবন্দিই নাকি কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের হাতে প্রভাবশালী মহল পর্যন্ত পৌঁছনোর অন্যতম চাবিকাঠি।
লালার সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়ার পরেই ফের রমরমা বাড়তে থাকে রাজু ঝায়ের। রাজু ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের খবর, মওকা বুঝে লতিফও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেন। সেই সূত্রেরই দাবি, বীরভূমে রাজু ঝায়ের একদা সঙ্গী ও পুলিশের একাংশের মাধ্যমে এই যোগাযোগ তৈরি হয়। কেউ কেউ বলছেন, জেলা পুলিশের সঙ্গে লতিফ ওরফে হিঙ্গুলের বরাবরই ভাল সম্পর্ক ছিল। রাজু-লতিফের মধ্যে লেনদেনের সূত্রটি কেমন ছিল? একাধিক মহল থেকে জানা গিয়েছে, বীরভূমে অজয় নদের বিভিন্ন বালিঘাটে লতিফের যে ‘বেআইনি’ বালি কারবার রয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি, সেখানে বেনামে টাকা খাটাতে শুরু করেন রাজু। এবং সেটা তিনি করেন লতিফের সহযোগিতায়। দুইয়ে মিলে শুরু হয় বালির যৌথ কারবার। বদলে, কয়লার কারবারে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করতে রাজু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন লতিফের দিকে। সিবিআই তদন্ত চলার ফলে গরুর ব্যবসায় ভাটা পড়েছিল তত দিনে। ফলে লতিফও অন্য ব্যবসায় ঢোকার কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন বলেই কয়লা মহলের বিশ্বাস।
এই সখ্য এখানেই শেষ নয়। একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, সিবিআইয়ের তলব এড়াতে লতিফ পালিয়ে গেলে, তাঁর যাবতীয় ব্যবসা বকলমে সামলেছেন রাজুর লোকজনই। একটি সূত্রের এমনও দাবি, বাংলাদেশ থেকে ফেরার পরে লতিফকে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেন রাজুই। কয়লা এবং বালি, দুই মহল থেকেই বলা হচ্ছে, গত এক-দেড় বছরে দু’জনের মধ্যে এই সখ্য দ্রুত বেড়েছিল।
তা হলে তার পরে কী এমন ঘটল যে, পয়লা এপ্রিলের বিকেলে দু’জনের মধ্যে বাদানুবাদ হয়? কয়লা মহলের দাবি, হয়তো কয়লা ও বালি-পাথর কারবারের ভাগ নিয়ে কথা কাটাকাটি। বা হয়তো অন্য এমন কোনও বিষয়, যা চট করে চোখে পড়ার মতো নয়।
কী সে বিষয়, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। প্রশ্ন উঠেছে, দু’জনে মিলে সে দিন কলকাতার দিকেই বা আসছিলেন কেন? একটি মহলের মতে, সম্ভবত নিউটাউনে নিজের ফ্ল্যাটে বা কোনও হোটেলে থাকবেন বলে ঠিক করেছিলেন রাজু। লতিফকে সঙ্গে আনার কারণ? সেই মহল এবং পুলিশের একটি অংশের বক্তব্য, লতিফের মাথার উপরে ঝুলে থাকা কোনও বিপদ থেকে বাঁচাতেই সম্ভবত কোনও প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ করিয়ে দিতে চাইছিলেন রাজু। হয়তো কলকাতা বা সংলগ্ন এলাকাতেই সেই সাক্ষাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। বা হয়তো অন্য শহরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ অবশ্য এই নিয়ে চুপ। তাদের বরং দাবি, কয়লা কারবারের শত্রুতাতেই মরতে হল রাজুকে। সত্যি কি তাই? নাকি অন্য কোনও কারণ লুকিয়ে রয়েছে রাজনীতির ভাঁজে?
এই রহস্য অনেকটা স্পষ্ট করতে পারেন এক জনই। লতিফ। যিনি ফের ‘গায়েব’ হয়ে গিয়েছেন।
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy