রাজ্যের ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটকে কাছে টানতে ফেব্রুয়ারি থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করতে চলেছেন বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রতীকী ছবি।
এক দিকে যখন সীমান্ত এলাকায় রাত্রিবাস করে রাজ্যে মেরুকরণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর পক্ষপাতী কেন্দ্রীয় যুব মোর্চা, তখন রাজ্যের ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটকে কাছে টানতে ফেব্রুয়ারি থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করতে চলেছেন বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার কেন্দ্রীয় নেতারা। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নতুন বিতর্ক তৈরি করল রাজ্য রাজনীতিতে। বিরোধীরা যখন একে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মুসলিম সমাজকে ভুল বুঝিয়ে বিজেপির ভোট কুড়োনোর চেষ্টা বলে ব্যাখ্যা করছেন, তখন বিজেপি নেতাদের দাবি— প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে মুসলিমদের কাছে সরকারের কাজের সুফল পৌঁছে দিতেই ওই উদ্যোগ।
পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলিতে রাত্রিবাস-সহ আড়াই দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন যুব মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মূলত অনুপ্রবেশের মতো বিষয়টিকে সামনে রেখে তাঁদের ওই উদ্যোগকে মেরুকরণের মাধ্যমে হারানো সমর্থন ফিরে পাওয়ার কৌশল হিসাবে দেখছেন বিরোধীরা। আবার আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দেশের ৬০টি লোকসভা কেন্দ্রে তাঁরা ‘স্নেহ মিলন’ (রাজ্যে ‘সৌহার্দ যাত্রা’) কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার জাতীয় সভাপতি জামাল সিদ্দিকি। এই ৬০টির মধ্যে রয়েছে বাংলার ১৩টি লোকসভা কেন্দ্র।
বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদ্য সমাপ্ত বৈঠকে মোদী মুসলিম সমাজের কাছে পৌঁছনোর জন্য কর্মীদের ডাক দেন। তার পরেই ওই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে রাজ্যের ১৩টি লোকসভা কেন্দ্রের শিক্ষিত, কর্মরত, সমাজে প্রতিষ্ঠিত শ্রেণি থেকে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর শ্রেণির সংখ্যালঘুদের মধ্যে দলের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অনেকের মতে, বিজেপি
নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন পশ্চিমবঙ্গে ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটে থাবা না-দিতে পারলে রাজ্যে ভাল ফল করা মুশকিল। বিজেপি নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন ঘটনায় তৃণমূলের সঙ্গে মুসলিম ভোটের দূরত্ব বাড়ছে। যার একটি প্রধান কারণ হল তৃণমূল এক দশকের বেশি ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও সংখ্যালঘুদের সেই অনুন্নয়নের পরিধিতেই আটকে থাকা। তাই এ বার নরেন্দ্র মোদীর মুসলিমদের কাছে পৌঁছনোর ডাককে সামনে রেখে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটে সিঁদ কাটতে চাইছে বিজেপি। জবাবে তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “বিজেপির নীতি হল হিন্দু, হিন্দি ও হিন্দুস্তান। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার বড় অংশ মোদী তথা বিজেপি থেকে মুখ ফেরাচ্ছে বুঝেই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা সংখ্যালঘুদের ভুল বুঝিয়ে পাশে টানতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দল।”
বিরোধীদের প্রশ্ন, এক দিকে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিন্দু ভোট মেরুকরণের প্রচেষ্টা অন্য দিকে সেই সংখ্যালঘুদের পাশে টানার চেষ্টা-দু’টি বিষয় পরস্পরবিরোধী। কেবল ভোট পেতেই ওই লোক দেখানো উদ্যোগ। বিজেপি নেতা জামাল সিদ্দিকি বলেন, “মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টার সঙ্গে ভোটকে জড়ানো ঠিক নয়। সংখ্যালঘু মোর্চার লক্ষ্য, সরকারের কাজের সুফল যাতে সংখ্যালঘু সমাজের কাছে পৌঁছতে পারে, তাঁরা যাতে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে জানতে পারেন। ঠিক হয়েছে ওই লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে বিজেপি কর্মীরা শিবির বানিয়ে আমজনতাকে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে জানাবেন। কোনও প্রকল্পের সুবিধা পেতে সমস্যা হলে তাঁদের তা কী ভাবে পেতে হবে সেই রাস্তা দেখিয়ে দেবেন।” সিদ্দিকির দাবি, প্রতি লোকসভায় অন্তত ৫ হাজার সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিনিধির কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন কর্মীরা। সংখ্যালঘু মোর্চার পক্ষ থেকে দেশে যে ৬০টি লোকসভা কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ১৩টি লোকসভা কেন্দ্র। বেছে নেওয়া কেন্দ্রগুলির মধ্যে বহরমপুর (৬৪%), জঙ্গিপুর (৬০%), মুর্শিদাবাদ (৫৯%), রায়গঞ্জ (৫৬%), বসিরহাট (৪৪%), মালদহ (উ) (৫০%), মালদহ (দ) (৫৩.৪৬%), যাদবপুর (৩৩.৪%), মথুরাপুর (৩২.৩%), বীরভূম (৩৬%), কৃষ্ণনগর (৩৩%), ডায়মন্ড হারবার (৩৩%), জয়নগর (৩০%)। ওই ১৩টির মধ্যে ৯টি আসনই রয়েছে তৃণমূলের হাতে। এ ছাড়া বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ আসনে জিতেছে কংগ্রেস। অন্য দিকে রায়গঞ্জ ও মালদহ (উত্তর) আসনে গত বার জিতেছে বিজেপি। সংখ্যালঘু শাখার এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “আমরা কেবল বিরোধী লোকসভা কেন্দ্রেই নয়, নিজেদের জেতা আসনেও সংখ্যালঘুদের কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্য নিয়েছি।”
আপাতত, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের লক্ষ্য ওই ১৩টির মধ্যে কিছু আসনে ধারবাহিক ভাবে প্রচার চালিয়ে লোকসভার আগে সংখ্যালঘু সমাজে জনভিত্তি বাড়ানো। সিদ্দিকির যুক্তি, “সংখ্যালঘুদের মধ্যে জনসমর্থন নেই বলে বসে থাকলে তো চলবে না। অতীতে নেতারা বসে গেলে দলের সাংসদ সংখ্যা ২ থেকে ৩০৩ হত না। উত্তরপ্রদেশের ভোট প্রমাণ করেছে আমজনতার কাছে সরকারের সুফল পৌঁছে দিতে পারলে, সংখ্যালঘুরাও বিজেপিকে ভোট দেয়।” অন্য দিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথায়, “মূলত সীমান্তের গ্রামের পরিকাঠামো উন্নয়ন, বিএসএফের সঙ্গে গ্রামবাসীদের মধ্যে হওয়া বিবাদ মেটানোর লক্ষ্যে ওই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যুব মোর্চা। সেখানে ‘সৌহার্দ্য যাত্রা’-র লক্ষ্য হল সংখ্যালঘু সমাজ যাতে কেন্দ্রীয় নীতির সুফল পায়, তা নিশ্চিত করা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy