Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
gosaba

By-Election: বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীই উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রচারে

এক সময়ে জয়ন্তর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বরুণ প্রামাণিক বিধানসভা ভোটের আগে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। শাসক দলের সেই ভাঙনে উৎসাহ পেয়েছিল পদ্মশিবির।

উপনির্বাচনের আগে কোমর বাঁধছে তৃণমূল-বিজেপি। প্রতীকী ছবি।

উপনির্বাচনের আগে কোমর বাঁধছে তৃণমূল-বিজেপি। প্রতীকী ছবি।

প্রসেনজিৎ সাহা
গোসাবা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৫৪
Share: Save:

নিজের এলাকায় দলের জমিই শুধু শক্ত করে যাননি তিনি। গাঁটের খরচে নিজেরই তিনটি মূর্তি বানিয়ে গিয়েছেন গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর। ইচ্ছে ছিল, এলাকায় বসানো হোক সেই মূর্তি। বিরোধীদের নানা কটাক্ষ হজম করেও সে সময়ে জয়ন্তর যুক্তি ছিল, রাজনৈতিক আক্রমণের শিকার হতে পারেন। তাই নিজের মূর্তি বানিয়ে রাখছেন।

তেমন কিছু অবশ্য ঘটেনি। ১৯ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বছর পঁয়ষট্টির দাপুটে তৃণমূল নেতা। তাঁরই মৃত্যুতে গোসাবায় আগামী ৩০ অক্টোবর উপনির্বাচন। ভোট মিটলে প্রয়াত নেতার মূর্তি স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা।

কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসা জয়ন্তর উপরে ২০১১ এবং ২০১৬ সালে ভরসা রেখেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’বারই ভোটে জিতে এই কেন্দ্রে বিধায়ক হন জয়ন্ত। গোসাবা ব্লক তৃণমূলের ‘শেষ কথা’ ছিলেন তিনিই। শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে নানা তিক্ত ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে। কিন্তু গোসাবায় সে সব কিছু হওয়ার জো ছিল না। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা এক বাক্যে মানেন, দলের অন্দরে কোনও সমান্তরাল শক্তি মাথাচাড়া দিতে পারেনি, এমনই ছিল জয়ন্তর দাপট।

তাঁর মৃত্যুর পরে অবশ্য ব্লক তৃণমূলে সাময়িক ভাঙন ধরে। কে হবেন পরবর্তী নেতা-বিধায়ক তা নিয়ে শুরু হয় আকচাআকচি। হঠাৎই এলাকায় আনাগোনা বাড়ে জয়ন্তর ছেলে বাপ্পাদিত্যর। তিনি উপনির্বাচনে টিকিট পাচ্ছেন বলে জল্পনা শুরু হয় নানা মহলে। তা নিয়ে গোঁসা করার লোক কম ছিল না গোসাবা-তৃণমূলে।

জল্পনা উড়িয়ে উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন সুব্রত মণ্ডল। পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান থেকেছেন এর আগে। সর্বক্ষণের রাজনীতির কর্মীটির সামনে এ বার আরও বড় লড়াই। তাঁর হয়ে প্রচারে গা ঘামাতে দেখা যাচ্ছে দলের সব পক্ষকে।

এক সময়ে জয়ন্তর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বরুণ প্রামাণিক বিধানসভা ভোটের আগে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। শাসক দলের সেই ভাঙনে উৎসাহ পেয়েছিল পদ্মশিবির। তাঁকেই জয়ন্তর বিরুদ্ধে টিকিট দেয় বিজেপি। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা যায়, প্রায় ২৪ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন জয়ন্ত।

৮২ হাজার ভোট পেয়েছিলেন বরুণও। কিন্তু জয়ন্তর মৃত্যুর পরে পুরনো শিবিরে ফিরেছেন তিনি। তাঁর হাত ধরে তৃণমূলের যে অংশ গিয়েছিল বিজেপিতে, তাঁদেরও ‘ঘর ওয়াপসি’ হয়েছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে ভোটের আগে এই সমীকরণ বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে। বরুণ বলেন, ‘‘জয়ন্তবাবুর সঙ্গে বিবাদের কারণে আমি তৃণমূল ছেড়েছিলাম। এখন সে বিবাদের কোনও অস্তিত্ব নেই। ফলে তৃণমূলে ফিরে এসেছি। দলের প্রার্থীকে জেতানোই এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য।’’

কিন্তু এত বছরেও না হল কংক্রিটের আয়লা-বাঁধ। না হল গোসাবা-গদখালি সেতু। এ সবই প্রচারে তুলে আনছেন বিজেপি প্রার্থী পলাশ রানা। বলছেন, গদখালি-গোসাবার মধ্যে সেতু না হওয়ায় দ্বীপবাসীর যোগাযোগের সমস্যা এখনও মেটেনি। বিভিন্ন দ্বীপে পানীয় জলের সমস্যা আছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাব আছে— এ সবও বলছেন প্রচারে। ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করার অভিযোগও তুলছেন। বুলবুল, আমপান, ইয়াসের পরে গোসাবা ব্লকে ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে ক্ষোভ ছিল মানুষের। সেই স্মৃতিও প্রচারে উসকে দিচ্ছেন পলাশ। নদীর চর দখল করা নিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে এই এলাকায় অভিযোগ অনেক দিনের। সে সব কথা উঠে আসছে তাঁর প্রচারে।

এই সব অভিযোগের ফাঁক গলেই গত পঞ্চায়েত ভোটে রাঙাবেলিয়া, সাতজেলিয়া, লাহিড়িপুর, ছোট মোল্লাখালি, কুমিরমারির মতো পঞ্চায়েতগুলিতে বিজেপি ভাল ফল করে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি পায় ১১৫০৪টি ভোট। লোকসভা ভোটে তা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬৫ হাজার ভোটে। এ বারও বিধানসভায় ৮২,০১৪টি ভোট পেয়ে দৌড়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন বিজেপির বরুণ প্রামাণিক। পাশাপাশি বাম ভোট ক্রমশ কমতে থাকায় ২০১৬ ও ২০১৯ ভোট বাড়ে তৃণমূলেরও। তবে ২০২১ সালে তৃণমূল ২০১৯ সালের চেয়ে হাজার পাঁচেক ভোট কম পেয়েছিল।

পলাশ বলেন, ‘‘এত বছর ক্ষমতায় থেকে তৃণমূল শুধুই স্বজনপোষণ করেছে। বিধানসভা ভোটের পরে এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়েছে। এখনও এক হাজারের বেশি বিজেপি কর্মী ঘরছাড়া। প্রতিনিয়ত বিজেপি কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।। এলাকায় বিজেপির পোস্টার-ফেস্টুন লাগালে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।’’

অতীতে গোসাবায় বামেদের দাপট থাকলেও এখন তাদের খুঁজে পাওয়াই দায়। ২০১১ সালে আরএসপি প্রার্থী সমরেন্দ্রনাথ মণ্ডলকে হাজার দশেক ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন জয়ন্ত। গত বিধানসভায় বামপ্রার্থী অনিলচন্দ্র মণ্ডল মাত্র ৪,৮৭১টি ভোট পান। এ বারও অনিলকেই প্রার্থী করেছেন বামেরা। অনিলের কথায়, ‘‘এত দিন ক্ষমতায় থেকেও তৃণমূল এখানে কোনও উন্নয়নের কাজ করতে পারেনি। সে কথাই আমরা বলছি প্রচারে।’’

বিরোধীদের সব অভিযোগই উড়িয়ে দিচ্ছেন সুব্রত। গত দশ বছরে উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘প্রায় সমস্ত রাস্তা কংক্রিটের বা ইটের তৈরি হয়েছে। পানীয় জলের সমস্যা প্রায় সর্বত্র মিটেছে। গত পাঁচ বছরে সে ভাবে কংক্রিটের বাঁধ তৈরি না হলেও মাটির বাঁধই যথেষ্ট মজবুত করে গড়ে তোলা হয়েছে। চওড়া বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।’’ সে কারণে আমপানের মতো ঘূর্ণিঝড়েও বিস্তীর্ণ এলাকার বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়নি বলে তাঁর দাবি। সুব্রতর কথায়, ‘‘আমাদের অভিভাবক, প্রয়াত জয়ন্ত নস্করের হাত ধরে গোসাবার এক দ্বীপের সঙ্গে আর এক দ্বীপে যোগাযোগের জন্য ইতিমধ্যেই গদখালি-গোসাবা ও পাঠানখালি-হোগলডুগুরির মধ্যে সেতু তৈরির অনুমোদন মিলেছে। গত পাঁচ বছরে প্রচুর কংক্রিটের জেটি তৈরি হয়েছে। ভাসমান জেটি ও লোহার ভেসেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবাও পৌঁছেছে। মিটেছে লোডশেডিং, লো-ভোল্টেজের সমস্যাও।”

সন্ত্রাসের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা প্রচারের কোনও দিশা না পেয়ে এ সব মিথ্যা অভিযোগ করছে। ওদের সঙ্গে কোনও লোকই নেই এখন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

gosaba By-Election TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy