Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
By-Elections in West Bengal

‘গড়’ রক্ষা এবং জমি উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রচারে যুধুধান সব শিবির

লোকসভায় রাজ্যে মূলত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে সামনে রেখে লড়ে দলের আশানুরূপ ফল না হলেও উপনির্বাচনে তিনিই বিজেপির ‘প্রধান মুখ’।

বাগদায় প্রচারে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

বাগদায় প্রচারে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৬:০৮
Share: Save:

লোকসভা ভোট শেষের অল্প দিনের মধ্যেই চার বিধানসভা কেন্দ্র মানিকতলা, বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ ও রায়গঞ্জে উপনির্বাচন। লোকসভা ভোটের নিরিখে মানিকতলা ছাড়া বাকি তিন কেন্দ্রেই এগিয়ে বিজেপি। উপনির্বাচনেও এই গড় রক্ষাই লক্ষ্য তাদের। উল্টো দিকে, লোকসভায় রাজ্য জুড়ে যে সাফল্য এসেছে, সেই সূত্রেই পিছিয়ে থাকা বিধানসভাগুলিকে যথাসম্ভব অনুকূলে আনতে চাইছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি, বাম-কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য, ভোট-বাক্সে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা। এমন লক্ষ্যে তিন শিবিরই প্রচারে নেমেছে। চড়ছে রাজনৈতিক তরজাও।

লোকসভায় রাজ্যে মূলত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে সামনে রেখে লড়ে দলের আশানুরূপ ফল না হলেও উপনির্বাচনে তিনিই বিজেপির ‘প্রধান মুখ’। রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণের পরে শনিবার বাগদায় পদযাত্রা ও জনসভা করেছেন শুভেন্দু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। শুভেন্দুর অভিযোগ, “পার্থ ভৌমিক ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বৈঠক করেছেন। তাঁদের সামনেই বনগাঁর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারকে ফোন করে বলেছেন, এই আসনটি চাই। ভোট লুট করে জেতাতে হবে। বাগদা ও রানাঘাট দক্ষিণের ক্ষেত্রে নবান্ন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমেরও এ দিন বাগদায় সভা ছিল। তিনি যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখন পাশের রাস্তা দিয়ে ফিরছিলেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা গাড়ি থেকে ফিরহাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়েন। তার পরে বিজেপি-তৃণমূল কর্মীরা স্লোগান-যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ফিরহাদ বলতে থাকেন, “পুলিশ, তোমরা একটু দেখো। আমরা মিটিং করতে পারব না?” পুলিশের দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রায়গঞ্জে প্রচারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

রায়গঞ্জে প্রচারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

ভোট-লুট সংক্রান্ত শুভেন্দুর দাবিতে আমল না দিয়ে তৃণমূল নেতা শান্তনু সেনের বক্তব্য, “প্রতিটি নির্বাচনে মানুষের ভোটে তৃণমূল আগের বারের থেকে বেশি ব্যবধানে জেতে। ভোট লুট করে, পুলিশ-প্রশাসনের উপরে নির্ভর করে জিততে হয় না তৃণমূলকে! চারটি উপনির্বাচনে গোহারা হারবে বুঝে প্রলাপ বকছে (বিজেপি)!”

প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের নিরিখে ‘মতুয়া গড়’ বাগদায় ২০,৬১৪, রানাঘাট দক্ষিণে ৩৬,৯৩৬ হাজার ও রায়গঞ্জে ৪৬,৭৩৯ ভোটে বিজেপি এবং মানিকতলায় তৃণমূল ৩,৫৭৫ ভোটে এগিয়ে রয়েছে। যদিও মানিকতলায় ব্যবধান বাড়ানো ও বাকি তিন কেন্দ্রে ভোট-পরিসংখ্যান উল্টে দিতে ময়দানে নেমেছে তৃণমূল। ধুপগুড়ি উপনির্বাচনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রচারে দেখা গেলেও, এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বা অভিষেকের প্রচারে নামার সম্ভাবনা এখনও পর্যন্ত নেই বলেই খবর। স্থানীয় স্তরে বা উপনির্বাচনে মমতা, অভিষেকদের সাধারণত দেখা যায় না। এই আবহে তৃণমূলের ভরসা স্থানীয় নেতারাই। যেমন, মানিকতলায় পরেশ পাল, অতীন ঘোষ, কুণাল ঘোষ-সহ চার জনের কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন মমতা। পাশাপাশি, বাকি তিন কেন্দ্রেও দায়িত্বে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। বাগদায় বিশেষ দায়িত্বে রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিকও।

মানিকতলায় বাম ও কংগ্রেসের যৌথ মিছিল।

মানিকতলায় বাম ও কংগ্রেসের যৌথ মিছিল। —ফাইল চিত্র।

পাশাপাশি, জোটের অঙ্ক মেনে মানিকতলা ও রানাঘাট দক্ষিণে সিপিএম, রায়গঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থীরা লড়ছেন। কিন্তু বাগদায় জোটে জটিলতায় বামফ্রন্ট শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের পাশাপাশি প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেসও। প্রচারে নেমে তৃণমূল ও বিজেপিকে কার্যত এক পঙ্‌ক্তিতে বসিয়ে সরব হতে দেখা যাচ্ছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীদের। ডিওয়াইএফআই-এর মতো সিপিএমের গণ সংগঠনগুলিও প্রচারে নেমেছে। সম্প্রতি ডিওয়াইএফআই-এর নেতৃত্বে শ্যামবাজার থেকে উল্টোডাঙা পর্যন্ত মিছিলও হয়েছে। বাগদায় ফ ব প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে ছিলেন সেলিম,সুজন। রায়গঞ্জে দলের প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্তের সমর্থনে প্রচারে গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরা। মানিকতলায় প্রার্থী রাজীব মজুমদারের সমর্থনে এ দিনই কেন্দ্রীয় মিছিলে দেখা গিয়েছে সিপিএমের সুজন, কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, উত্তর কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি রানা রায়চৌধুরী, প্রদেশ কংগ্রেসের সুমন রায়চৌধুরী, সিপিআইয়ের কলকাতা জেলা সম্পাদক প্রবীর দেব প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP Congress West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE