(বাঁ দিকে) বিরূপাক্ষ বিশ্বাস। অভীক দে (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাস এবং প্রাক্তন আরএমও অভীক দে-কে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করল স্বাস্থ্য ভবন। অভিযোগ, তাঁরা দু’জনেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ‘ঘনিষ্ঠ’। বিরূপাক্ষ এবং অভীকের বিরুদ্ধে মেডিক্যাল কলেজে ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, আরজি কর-কাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে অভীকের উপস্থিতি নিয়েও একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি, অভীকের এসএসকেএম হাসপাতালে পিজিটি পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল একাধিক চিকিৎসক সংগঠন। চিকিৎসকদের সংগঠন জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম এই প্রসঙ্গে জানিয়েছে, অনেক দিন ধরেই এই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। কিন্তু কাজ হয়নি। আরজি কর-কাণ্ডের পর অবশেষে প্রশাসনের ‘টনক’ নড়েছে।
স্বাস্থ্য ভবনের তরফে বিবৃতি দিয়ে দুই চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার কথা জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবার। নির্দেশ সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করার কথাও বলা হয়েছে। অভীককে সাসপেন্ড করে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্বাস্থ্য ভবন, সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ উঠেছে। সেই আবহে হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি-সহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। হাই কোর্টের নির্দেশে সেই নিয়ে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। রাজ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে নাম জড়িয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজেরও। অভিযোগ, এই ‘বর্ধমান শাখা’ সিন্ডিকেটের মাথায় ছিলেন এসএসকেএমের চিকিৎসক-পড়ুয়া অভীক। চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পরে আরজি করের সেমিনার রুমে তাঁর উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল নানা মহলে। ওই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত না-হয়েও তিনি সেখানে কী করছিলেন, সেই প্রশ্ন ওঠে। এমনকি, অভীকের এসএসকেএমে পিজিটি পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল একাধিক চিকিৎসক সংগঠন। এই আবহে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সাসপেন্ড করে তাদের সদস্য অভীককে। তাদের তরফে এ-ও জানানো হয়েছিল, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে আর প্রবেশ করতে পারবেন না অভীক, যত দিন পর্যন্ত না তদন্ত শেষ হচ্ছে।
অভীক ছাড়াও বর্ধমান মেডিক্যালের প্যাথোলজি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসক বিরূপাক্ষ-সহ আরও কয়েক জনের নামে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিলেন চিকিৎসক-পড়ুয়াদের একাংশ। আরজি কর-কাণ্ডের আবহে সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে একটি অডিয়ো ভাইরাল হয় (যদিও সেই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। সেই অডিয়োর সূত্র ধরেই উঠে আসে চিকিৎসক বিরূপাক্ষের নাম। দাবি করা হয়, সেই অডিয়োর কণ্ঠস্বর বিরূপাক্ষের। বিরূপাক্ষকে সেই অডিয়োয় ‘হুমকি’ দিতে শোনা গিয়েছিল। অভিযোগ, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চলত বিরূপাক্ষের ‘দাদাগিরি’। তিনি হুমকি দিতেন বলেও অভিযোগ। বিরূপাক্ষ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেন। এই নিয়ে হইচইয়ের মাঝে বুধবারই স্বাস্থ্য ভবন বিরূপাক্ষকে বদলির নির্দেশ দেয়। তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্যাথোলজি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসক বিরূপাক্ষকে বদলি করা হচ্ছে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে তিনি সিনিয়র আবাসিক চিকিৎসক হিসাবে কাজ করবেন। অন্য দিকে, বিরূপাক্ষ সেখানে যোগ দিতে পারেন শুনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর প্রস্তুতি নেন স্থানীয়দের একাংশ।
এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকেলে বিরূপাক্ষকে সাসপেন্ড করল স্বাস্থ্য ভবন। চিকিৎসকদের সংগঠনের তরফে বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘‘আমরা মেডিক্যাল কাউন্সিলের ভোটের সময় থেকেই এঁদের বিরুদ্ধে বলে এসেছি। মামলা করা হয়েছে। তার পর সন্দীপ ঘোষের কুকীর্তি নিয়েও বহু বার বলেছি। অধরা রয়ে গেছে আমাদের স্বর। আমাদের প্রার্থী-সমর্থকদের প্রতিহিংসামূলক বদলি করা হয়েছে। হুমকি দেওয়া হয়েছে, কাউন্সিলে ডাকা হয়েছে। জল বাড়তে বাড়তে এখন মাথার উপর উঠে গিয়েছে এবং আরজিকরে আমাদের বোনের নারকীয় দুর্ঘটনার ২৭ দিন বাদে প্রশাসনের টনক নড়েছে। গ্রেফতার এবং সাসপেনশন হচ্ছে। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পদত্যাগের হিড়িক উঠেছে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেল। না আমরা আনন্দিত নই। এদের মাথার উপর যে মাথারা রয়েছে, তাদের শাস্তি না পাওয়া অবধি আমরা স্বস্তি পাব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy