Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2020

পুজোয় অনুদান, বীরভূম জুড়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ধন্যবাদ দিদি আর ভাই কেষ্টকে

কোনও বছরে পুজোর মণ্ডপের ভিতরে অনুব্রতের এমন প্রকাশ্য অনুপ্রবেশ কখনও দেখেননি জেলার বাসিন্দারা।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৪৮
Share: Save:

মণ্ডপে প্রতিমা। কিন্তু তার পাশে সমান উজ্জ্বল ‘তাঁর’ উপস্থিতি। মণ্ডপে ঢোকার মুখে বা ভিতরে তিনি আছেন। এমন জায়গায় তাঁর অবস্থান, যে প্রতিমার আগে তিনিই চোখ টেনে নিচ্ছেন।

এ ছবি রাঢ়বঙ্গের বীরভূমের। জেলার সব প্রান্তে প্রায় সব মণ্ডপেই রয়েছেন তিনি— অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল। চোখে পড়ার মতো বড় ব্যানার বা ফ্লেক্সে পুজো কমিটির তরফে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। সে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা কঠিন কোভিড পরিস্থিতিতেও বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলিকে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০,০০০ টাকা করে অনুদানের জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই সেই ব্যানারে শোভা পাচ্ছে জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ছবি।

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, শহরাঞ্চলের প্রতিক্রিয়া সে ভাবে না পেলেও গ্রামবাংলায় পুজো কমিটিগুলিকে ওই অনুদান দেওয়ার পর তাদের তরফে ‘ইতিবাচক সঙ্কেত’-ই আসছে। বীরভূম সেদিক দিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক। কারণ, দক্ষিণবঙ্গের ওই জেলাতেই বিজেপি সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে। অধিকাংশ আসনে বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে না পারলেও গত পঞ্চায়েত ভোটে বীরভূম জেলায় পেশিশক্তির লড়াই হয়েছিল সেয়ানে সেয়ানে।

এ বারের কোভিড-বিধ্বস্ত পুজোয় সেই বীরভূমে কেষ্টর নয়া প্রচার এবং জনসংযোগের কৌশলের সামনে খানিকটা অপ্রস্তুত দেখিয়েছে বিজেপি-কে। এর আগে কোনও বছরে পুজোর মণ্ডপের ভিতরে অনুব্রতের এমন প্রকাশ্য অনুপ্রবেশ কখনও দেখেননি জেলার বাসিন্দারা।

এমন ছবিই টাঙানো বীরভূমের পুজো মণ্ডপগুলিতে। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: কুমারী মায়ের মুখে মাস্ক নেই, উদ্বেগের জবাবে ‘আধ্যাত্মিক’ যুক্তি বেলুড় মঠের

বীরভূম জেলা পুলিশের তরফে এ বছর জেলার মোট ২,৪৪৭ টি পুজো কমিটির হাতে ৫০,০০০ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। নবমীর দিন জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ছোট-বড় সব রকম পুজো আছে ওই তালিকায়। রয়েছে ২৫টি মহিলা পরিচালিত পুজো কমিটিও। জেলা পুলিশের দাবি, ওই তালিকার বাইরে বীরভূমে হয়তো হাতে গোনা পুজো রয়েছে, যারা টাকা পায়নি।

অনুদানপ্রাপ্ত সমস্ত মণ্ডপেই সপরিবার মা দুর্গার পাশেই ব্যানার বা ফ্লেক্সে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে শোভা পাচ্ছেন অনুব্রত। যেমন ‘তিলপাড়া সম্মিলনী সমিতি’। তারা এ বছর ‘বিশ্ববাংলা শারদ সম্মান’ প্রতিযোগিতায় জিতে নিয়েছে জেলার সেরা প্রতিমার পুরস্কার। পুজো কমিটির সভাপতি রাজা লালার কথায়, ‘‘আমরা অনুদানের টাকার বেশিটাই খরচ করেছি মাস্ক বিতরণ এবং কোভিড মোকাবিলায়।”

অর্থ দিয়েছে সরকার। তা হলে মণ্ডপে একটি রাজনৈতিক দলের জেলা সভাপতির ছবি কেন? উত্তরে রাজা বলেন, ‘‘আমরা দাদাকে (অনুব্রত) ভালবাসি। দাদা আমাদের জন্য অনেক করেন। তাই অন্তর থেকে তাঁর ছবি রেখেছি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের ধন্যবাদসূচক ব্যানারে।” রাজা এলাকার পরিচিত তৃণমূল নেতাও বটে। তাঁর দাবি, জেলা সভাপতি আদৌ তাঁকে বাধ্য করেননি ওই ব্যানার টাঙাতে।

আরও পড়়ুন: সিএএ নিয়ে মুসলিমদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে, দাবি মোহন ভাগবতের

মণ্ডপে অনুব্রতের ছবি-সহ ব্যানার টাঙাতে কোনওরকম বাধ্যবাধকতার কথা অস্বীকার করেছেন সাঁইথিয়া পুরসভার প্রশাসক বিপ্লব দত্তও। তিনি ‘সাঁইথিয়া অগ্রণী সমাজ পুজো কমিটি’-র কর্তা। তাঁর পুজোটিও ‘বিশ্ববাংলা শারদ সম্মান’ প্রতিযোগিতায় সেরা কোভিড সচেতন পুজোর পুরস্কার পেয়েছে।

যা মানতে নারাজ বিজেপি-র বীরভূম জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুরোটাই অনুব্রতের জুলুম। পুজো কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই ব্যানার টাঙাতে। অধিকাংশ কমিটিই ভয়ে ওই ব্যানার টাঙিয়েছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘যে সব পুজো কমিটিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোক রয়েছে, তারা সরকারি অনুদান পায়নি।”

প্রত্যাশিত ভাবেই এ নিয়ে কোনও কোনও পুজো কমিটি আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তবে সিউড়ির একটি পুজো কমিটির নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তার কথায়, ‘‘পুজোয় কেউ স্পনসর করলে তার সংস্থার বিজ্ঞাপন হিসাবে ব্যানার-হোর্ডিং তো মণ্ডপে টাঙানোই হয়। ওই ৫০,০০০ টাকাও তো এক ধরনের স্পনসরশিপই। তা হলে ব্যানার টাঙাতে আর বাধা কোথায়?’’

ঠিকই। বাধা কোথায়? বিশেষত বীরভূমে, যেখানে কানু (কৃষ্ণ, অপভ্রংশে কেষ্ট) বিনে গীত নাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2020 Mamata Benerjee Anubrata Mandal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy