Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Birbhum

Child Labour: ‘স্কুলে গেলে এই টাকা কে দেবে’

স্কুলে আর ফিরতে চায় না ইকবাল শেখ। এই দু’বছরে তার জীবনটা বদলে গিয়েছে। অষ্টম শ্রেণির এই ছাত্র রোজগারের মুখ দেখেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তন্ময় দত্ত 
মুরারই শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২১ ০৭:১৬
Share: Save:

নভেম্বরের মাঝামাঝি স্কুল খুলবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুল খুলছে। কিন্তু, স্কুলে আর ফিরতে চায় না ইকবাল শেখ। এই দু’বছরে তার জীবনটা বদলে গিয়েছে। অষ্টম শ্রেণির এই ছাত্র রোজগারের মুখ দেখেছে। শিশুশ্রমিক থেকেই সংসারে সাহায্য করতে চায় সে।

বীরভূমের মুরারইয়ের একটি মোটর গ্যারাজে কাজ নিয়েছে ইকবাল। সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, পাইকর উচ্চ বিদ্যালয়ের এই পড়ুয়া মোটরবাইকের চাকা লাগাচ্ছে নিপুণ দক্ষতায়। সে বলল, ‘‘বাবা দিল্লিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। মা ও দুই ভাইবোন আছে। দেড় বছর হল গ্যারাজে কাজ করছি। দিনের শেষে একশো টাকা মায়ের হাতে তুলে দিতে খুব আনন্দ হয়। আর পড়াশোনা করব না। স্কুলে গেলে এই টাকা কে দেবে?’’

মুরারইয়ের আর একটি গ্যারাজে কাজ নিয়েছে মুরারই অক্ষয়কুমার ইনস্টিটিউশনের ছাত্র সাবের আলি। তার মা সেলিমা বিবি বলছেন, ‘‘স্বামী মারা গিয়েছে। অনেক কষ্ট করে হাটে আনাজ বিক্রি করে সংসার চালাতে হচ্ছিল। স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেকে দিনে ৫০ টাকার মজুরিতে ঢুকিয়ে দিই। সেখানেই দুপুরে খাবার পায়। আর ও স্কুলে যাবে না। অভাবের সংসারে ওই ৫০ টাকাও অনেক।’’ সেলিমার মতো এলাকার আরও আরও কয়েক জন অভিভাবক জানালেন, ঘরে স্মার্টফোন না-থাকায় সন্তানেরা পড়াশোনার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন। শুধু খেলে বেড়ানোর চেয়ে কাজের মধ্যে থাকলে অন্তত কিছুটা রোজগার করে পরিবারের সাহায্য করতে পারছে।

মুরারইয়ের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া নুর ইসলাম কিংবা একাদশ শ্রেণির সুরেন মাল আবার কাজ করলেও স্কুলে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। নুর বলে, ‘‘স্মার্ট ফোন না থাকায় অনলাইন ক্লাস করতে পারি না। গ্যারাজে কাজ করে দিনে ৬০ টাকা উপার্জন করে পরিবারকে সাহায্য করছি। তবে, আমাদের জন্য স্কুল খুললে পড়াশোনা শুরু করব।’’ একই ভাবে স্থানীয় বোনহা গ্রামের সুরেন জানাল, সে মাধ্যমিকে ৪০৫ নম্বর পেয়েছে। সারাদিন গ্যারাজে কাজ করে রাতে পড়াশোনা করে। স্কুল খোলার ঘোষণায় সে খুব খুশি। বলল, ‘‘এত দিন পরে ক্লাসরুমে ঢুকে পড়তে পারব, ভাবতেই ভাল লাগছে। গ্যারাজের কাজ ভাবছি ছেড়ে দেব।’’

স্মার্টফোনের অভাবে মায়ের বিড়ি বাঁধার কাজে হাত লাগিয়েছে পাইকর বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মামণি রবিদাস। বলেন, ‘‘বাবা টোটো চালক। লকডাউন আর করোনার জন্য রোজগার অনেক কমে গিয়েছে। তাই বিড়ি বেঁধে সাহায্য করছি সংসারে। স্কুলে ফিরতে পারব কি না, জানি না।’’

পাইকর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপসকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘স্কুল খুললে শিক্ষকদেরই অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করার চেষ্টা করতে হবে।’’ জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুখলাল হাঁসদা বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতর এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন। কিছু এলাকায় এমন স্কুলছুটের প্রবণথা দেখা যাচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করে বিদ্যালয়মুখী করার জন্য যা যা দরকার, তা করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Birbhum Student Child Labour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy