জেলা তৃণমূলের বিজয়া সম্মেলনে সব নেতাকে দেখা গেলেও ছিলেন না শতাব্দী। সিউড়ি রবীন্দ্রসদনে সোমবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
পরপর দু’দিন দলের কর্মসূচিতে বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়ের ‘অনুপস্থিতি’ ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে জেলা তৃণমূলে।
প্রশ্ন উঠছে, সাংসদ শতাব্দীকে কি ফের ‘উপেক্ষা’ করা হচ্ছে দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর তরফে?
রবিবার মহম্মদবাজারে থানা সংলগ্ন মাঠে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল ব্লক তৃণমূল। উদ্দেশ্য, দলের নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সংগঠন মজবুত করার বার্তা দেওয়া। নিমন্ত্রণপত্র অনুযায়ী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, দুই মন্ত্রী, চন্দ্রনাথ সিংহ, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, জেলার দুই সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ, মলয় মুখোপাধ্যায়, সাঁইথিয়ার বিধায়ক নীলাবতী সাহা এবং সাংসদ শতাব্দী রায়ের। বাকিরা উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না শতাব্দী। পরিকল্পনা মাফিক তাঁকে অনুষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর অনুগামীদের।
জেলা তৃণমূলে শতাব্দী-ঘনিষ্ঠদের দাবি, নিমন্ত্রণ থাকায় মহম্মদবাজারের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন শতাব্দী। শুক্রবার ওই ব্লকের এক প্রভাবশালী নেতা শতাব্দীকে বলেন, ‘রবিবারের অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। আপনাকে আসতে হবে না।’ অথচ পরে নিয়ম মেনেই বিজয়া সম্মিলনী হয়েছে। এ ভাবে তাঁকে ব্রাত্য রাখায় তিনি যে অত্যন্ত অসম্মানিত বোধ করছেন, ঘনিষ্ঠ মহলে তা গোপন করেননি শতাব্দী। দলের জেলা নেতৃত্বের নির্দেশেই এমনটা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
সত্যিই কি অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে বলে শতাব্দীকে জানানো হয়েছিল?
‘‘এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না’’ বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন মহম্মদবাজার ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তাপস সিংহ। ওই ব্লকের পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী আশিসবাবু বলেছেন, ‘‘বিষয়টি জানি না।’’ আর অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘কে কোথায় কী বলেছেন জানি না। তবে মহম্মদবাজারের অনুষ্ঠানে আমারই তো যাওয়ার কথা ছিল না! ওই দিকে কাজ থাকায় শেষ মুহূর্তে গিয়েছি।’’
সোমবার সিউড়ির রবীন্দ্রসদনে দলের তরফে বিজয়া সম্মিলনী হয়। সেখানেও শতাব্দী ছিলেন না। যদিও ছিলেন বোলপুরের দলীয় সাংসদ অসিত মাল। দল সূত্রের খবর, এ দিনের অনুষ্ঠানে শতাব্দীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শতাব্দী শুধু বলেন, ‘‘আজ আমার যাওয়ার ছিল না। আমি ৬ তারিখ জেলায় যাব।’’ জেলা তৃণমূলের একাংশের ধারণা, মহম্মদবাজারের ‘অপমানের’ পাল্টা সিউড়িতে না থেকেই শতাব্দী দিলেন।
তবে, মহম্মদবাজারের ঘটনা নিয়ে নিজের অভিমান শতাব্দী গোপন করেননি সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে। বীরভূমের তিন বারের তৃণমূল সাংসদ বলছেন, ‘‘দলের ভালর জন্য সকলকে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলা হয়েছিল। ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করার নমুনা মহম্মদবাজারে পেলাম!’’ শতাব্দীর সংযোজন, ‘‘দল তো এখন খুব ভাল জায়গায় রয়েছে। তাই খেলাটা আবার শুরু হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝবেন।’’
তৃণমূলের অন্দরের খবর, শতাব্দী রায়ের সঙ্গে জেলা সভাপতি অনুব্রতের সম্পর্ক যে মসৃণ নয়, প্রথম থেকেই সেটা দলের সকলের জানা। শতাব্দী এ বারও বীরভূম লোকসভা আসনে প্রার্থী হন, এ বার সেটা চাননি জেলা নেতৃত্বই। শতাব্দীর পরিবর্তে শোনা যাচ্ছিল তৃণমূল জেলা সভাপতির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অভিজিৎ সিংহের নাম। দলের একটা অংশের তরফে বলা হচ্ছিল, সাংসদ হিসাবে শতাব্দী যত ভাল কাজই করুন, দলের সংগঠন মজবুত করার ব্যাপারে তাঁকে (শতাব্দী রায়কে ) নাকি তেমন করে পাওয়া যায় না। কারণ তিনি বীরভূমে সব সময় থাকেন না। যদিও প্রার্থী ঘোষণার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা নেতৃত্বের সেই ‘ইচ্ছেয়’ সিলমোহর দেননি। প্রার্থী হয়েছিলেন শতাব্দীই।
ভোট প্রচার পর্বেও শতাব্দীর একাধিকবার সংঘাত হয়েছিল জেলা সভাপতির। শেষ মুহূর্তে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় ভোট-পর্ব উত্তীর্ণ হলেও সংঘাত যে মেটেনি, মহম্মদবাজারের ঘটনাই তার প্রমাণ বলে মনে করছেন তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশ। জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘জেলা নেতৃত্বকে গুরুত্ব না দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে শতাব্দী রায় নিজের মতো চলেন। সংগঠন চালানো নিয়ে তাঁর অনধিকার চর্চাও ছিল। সেটা ভাল ভাবে নেননি দলের নেতৃত্ব। তারই প্রতিফলন বলা যেতে পারে এটা।’’ নিজের অধিকারের বাইরে গিয়ে কিছু করেছেন বলে অবশ্য মানেননি শতাব্দী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy