তৃণমূলে যোগ দিলেন বিপ্লব ও প্রশান্ত, সঙ্গে আছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
‘ঘরে ফিরলেন’ বিপ্লব মিত্র। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পরে তৃণমূল ছেড়ে তিনি যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। দিল্লিতে গিয়ে গেরুয়া পতাকা হাতে নিয়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের এই প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক। কিন্তু বছর ঘুরতেই মত বদলাল বিপ্লবের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি দলে ফিরলেন, তৃণমূলভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই জানালেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিপ্লবের সঙ্গেই তৃণমূলে ফিরলেন তাঁর ভাই তথা গঙ্গারামপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্রও।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় তৃণমূলের পত্তন যাঁদের হাত ধরে, বিপ্লব মিত্র তাঁদের অন্যতম। শুধু নিজের জেলায় নয়, তৃণমূল তৈরি হওয়ার পরে গোটা উত্তরবঙ্গে দলের সামনের সারির মুখ মনে করা হত যাঁদের, বিপ্লব মিত্রের নাম তাঁদের মধ্যেই আসত। ২০১১ সালে হরিরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জেতেন বিপ্লব। মন্ত্রী না করলেও তাঁকে পরিষদীয় সচিব করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পরে আদালতের রায়ে পরিষদীয় সচিব পদটাই উঠে যায়।
বিপ্লব মিত্রের গোটা পরিবারই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাঁর ভাই প্রশান্ত মিত্র ছিলেন গঙ্গারামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান। কিন্তু প্রথমে ওই জেলারই আর এক নেতা তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম সরকারের মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দলে কোণঠাসা হচ্ছিলেন বিপ্লব। পরে অর্পিতা ঘোষ বালুরঘাটের সাংসদ হওয়ার পরে বিপ্লব মিত্রের সমস্যা আরও বাড়ে। অর্পিতার সঙ্গে বিপ্লবের বনিবনা কতটা ‘মসৃণ’ ছিল, গোটা দক্ষিণ দিনাজপুরে তা কারও অজানা ছিল না।
আরও পড়ুন: অজুহাত কোভিড, রাজ্যগুলির প্রাপ্য দিচ্ছে না কেন্দ্র, ভুগছে নাগরিক
এতেও কিন্তু দল ছাড়েননি বিপ্লব। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে দল ছাড়েন তিনি। সে নির্বাচনে বালুরঘাট লোকসভা আসনে অর্পিতা হেরে যান বিজেপির সুকান্ত মজুমদারের কাছে। কিন্তু অর্পিতাকে তার পরেও দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে সরানো হয়নি। বরং জেলা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী করে দেওয়া হয় তাঁকে। এমন এক পরিস্থিতিতেই তৃণমূল ছেড়ে দিয়েছিলেন বিপ্লব মিত্র। দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সদর দফতরে গিয়ে গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তাঁর ভাই তথা গঙ্গারামপুর পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্রও যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। তবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে অনাস্থা এনে প্রশান্তকে তৃণমূল সরিয়ে দেয় চেয়ারম্যান পদ থেকে।
এত কাণ্ডের পরে আবার তৃণমূলে ফিরলেন কেন বিপ্লব-প্রশান্তরা? স্থানীয় সূত্রের খবর, এত দিন বিজেপিতে থেকেও বিপ্লব মিত্র কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাননি দলে। জেলার রাজনীতিতে বিপ্লব যে রকম হেভিওয়েট, তাতে তাঁকে সামনের সারিতে রেখে সংগঠন সাজানো উচিত ছিল বিজেপির— মত বিপ্লবের অনুগামীদের। কিন্তু বিপ্লব বা প্রশান্তদের বিজেপি ন্যূনতম সম্মানও দেয়নি বলে গঙ্গারামপুরের মিত্র পরিবারের ঘনিষ্ঠদের মত।
আরও পড়ুন: করোনায় আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু রাজ্যে
তা ছাড়া যাঁর সঙ্গে তীব্র বিবাদ তৃণমূলের সঙ্গে বিপ্লবের বিচ্ছেদ ত্বরান্বিত করেছিল, সেই অর্পিতা ঘোষকেও দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে সম্প্রতি সরিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের জেলা সভাপতি করা হয়েছে তৃণমূলে যোগ দেওয়া কংগ্রেস বিধায়ক গৌতম দাসকে। চেয়ারম্যান করা হয়েছে বালুরঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীকে। এই শঙ্করের সঙ্গে বিপ্লবের সম্পর্ক মোটেই মধুর নয়। কিন্তু প্রথমত, আলঙ্কারিক চেয়ারম্যান পদে থাকা শঙ্করের হাতে জেলা তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ নেই। দ্বিতীয়ত, ২০১৬-র ভোটে বালুরঘাট বিধানসভা আসনে আরএসপির বিশ্বনাথ চৌধুরীর কাছে হেরে এবং মন্ত্রিত্ব হারিয়ে শঙ্কর এখন আগের চেয়ে অনেক হীনবল। তাই জেলা তৃণমূলে এই মুহূর্তে তাঁকে কোণঠাসা করে রাখার মতো কেউই যে নেই, সে কথা বিপ্লব মিত্র ভালই বুঝতে পারছেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত।
শুক্রবার তৃণমূলভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিপ্লব মিত্র, প্রশান্ত মিত্রদের দলে ফেরান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির ছিলেন জেলা তৃণমূলের নতুন সভাপতি গৌতম দাস এবং প্রাক্তন সভানেত্রী অর্পিতা ঘোষও। বিপ্লবকে স্বাগত জানিয়ে পার্থ বলেন, ‘‘যাঁরা ভুল করে দল ছেড়ে গিয়েছেন, কিন্তু এখন মানুষের কাজ করার জন্য ফিরতে চাইছেন, তাঁদের দলে ফিরতে আহ্বান জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েই বিপ্লব মিত্র এবং প্রশান্ত মিত্র তৃণমূলে ফিরলেন।’’ বিপ্লব নিজেও প্রায় একই কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা একটা নতুন দলে যোগ দেওয়া নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে আমি আমার নিজের ঘরে ফিরেছি।’’ বিপ্লব মিত্রের মতো নেতা মাত্র ১৩ মাসের মধ্যে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরায় বিজেপির অস্বস্তি বাড়ল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy