বিমল গুরুঙ্গ। —ফাইল চিত্র।
চারদিকে জনা পঁচিশেক কর্মী নজরদারি করছেন। সেই ঘেরাটোপে বসেও দু’দিন ধরে মেজাজ ঠিক নেই বিমল গুরুঙ্গের। একে তো বিনয় তামাঙ্গরা নবান্নের বৈঠকে তাঁর জন্য আশার বার্তা আনতে পারেননি। দল সূত্রের খবর, তার উপরে বৃহস্পতিবার যখন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডেকে বিনয়রা বন্ধ তোলার ঘোষণা করেন, তা শুনে খেপে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন গুরুঙ্গ। তখন এক অনুগামী ‘দিল্লি থেকে ফোন এসেছে’ বলে হাতে মোবাইল তুলে দেন। পরে সেই ফোনই সোফায় আছড়ে ফেলেন গুরুঙ্গ।
মোর্চার অভ্যন্তরে তাই এখন সব থেকে আলোচিত বিষয়: বিমল গুরুঙ্গ কা গুস্সা কিঁউ আতা হ্যায়? অনেকেই বলছেন, যে ভাবে দলের রাশ হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, তাতে রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। তবু তাঁকে মাথা ঠান্ডা রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন একান্ত দুই অনুগামী। তাতেই এ দিন কিছুটা শান্ত হন মোর্চা সভাপতি। অনুগামীদের ফোনে কয়েক জনের সঙ্গে কথাও বলেন। এর পরেই গুরুঙ্গের তরফে দিল্লি থেকে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি জানিয়ে দেন, দলের সভাপতি বন্ধ তোলার কথা ঘোষণা করেননি। তাই আপাতত বন্ধ চলবে। রাতে রোশন বলেন, ‘‘সভাপতি কোথায় আছেন, তা নিয়ে কাউকে মাথা ঘামাতে হবে না। তিনি পাহাড়বাসীর পাশেই রয়েছেন। যথা সময়ে সামনে এসে যা করণীয় করবেন।’’
আরও পড়ুন: ১২ই অবধি উঠল বন্ধ
বুধবার রাত থেকে কয়েক দফায় বৈঠক করেও বিনয় তামাঙ্গের উত্থান আটকাতে কোনও পথ বের করতে পারেননি গুরুঙ্গ-অনুগামীরা। সূত্রের খবর, কট্টরপন্থীদের কয়েক জন চান, রাতেই বিনয়-সহ নবান্ন বৈঠকে যাওয়া ৫ জনকে দলবিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কার করা হোক। কিন্তু, গুরুঙ্গ তাতে রাজি হননি। কারণ, হাতে গোনা যে কয়েক জনের সঙ্গে গুরুঙ্গ পরামর্শ করেন, তাঁরা জানিয়ে দেন, বহিষ্কার করা হলে বিনয়রা দলের একাংশের কাছে ‘শহিদ’-এর মর্যাদা পাবেন। গুরুঙ্গকে বেকায়দায় ফেলতে জিএনএলএফ, জাপ তখন বিনয়কে সামনে রেখে নতুন জোট গড়তে পারে।
যদিও বৃহস্পতিবার বিনয়রা কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করে বন্ধ তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে গুরুঙ্গ কঠোর বার্তাই দিয়েছেন। জানানো হয়েছে, বিনয়কে দলের চিফ কো-অর্ডিনেটর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। বিনয়ের সঙ্গে অনীত থাপাকেও শীঘ্রই দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। পাশাপাশি রোশন গিরি জানিয়ে দেন, সভাপতি বন্ধ তোলেননি। সিংহভাগ লোকই গুরুঙ্গের দিকে। তাই বন্ধ চলবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার কার্শিয়াঙের সভা ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বানচাল করতে বিনয়-অনীতদের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু মঙ্গলবার থেকেই বিনয়-অনীতদের বাড়ি ঘিরে নিরাপত্তা বেড়েছে। আলোচনাপন্থীদের জন্য ব্যবস্থা হয়েছে পাইলট, এসকর্ট ভ্যানের। এতেও ক্ষিপ্ত গুরুঙ্গ ঘনিষ্ঠমহলে জানান, এক সপ্তাহ আগেও তো অনীত পুলিশের তাড়া খেয়ে পালাচ্ছিলেন! মোর্চা সূত্রে খবর, গুরুঙ্গের নিজের পাইলট কার তো গিয়েছেই, সরকারি দেহরক্ষীও আর নেই। উল্টে পুলিশের তাড়ায়
তিনি এখন গোপন ডেরায়। তাই রাগ তো হবেই।
এর পরেই বিনয়কে পদ থেকে সরিয়ে রাশ হাতে রাখার মরিয়া চেষ্টা করেন গুরুঙ্গ। কিন্তু রাশ থাকবে কি? সে দিকেই তাকিয়ে পাহাড়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy