Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Kabul

Afghanistan: ছেলের হাতে বন্দুক ধরিয়েছে, জানতে চায় তালিবান হবে কি না! কাবুলে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন কলকাতার সঙ্ঘমিত্রা

আফগানিস্তানে যাওয়ার পর শ্বশুড়বাড়ির লোকজন তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট লুকিয়ে রাখে। পরে আফগানিস্তানের পাসপোর্ট করতে বাধ্য হন বলে জানান তিনি।

আরবাজ খান এবং সঙ্ঘমিত্রা দফাদার।

আরবাজ খান এবং সঙ্ঘমিত্রা দফাদার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২১ ২১:৪৯
Share: Save:

বিয়ে করে দেশ ছেড়েছিলেন। কাবুলিওয়ালা স্বামীর হাত ধরে নিশ্চিন্তে আফগানিস্তানে শ্বশুরবাড়ি পাড়ি দিয়ে ছিলেন কলকাতার সঙ্ঘমিত্রা দফাদার। ৪ বছর হল সেই সংসার ভেঙেছে। চাকরি করে সংসার চালাছিলেন ‘সিঙ্গল মাদার’ সঙ্ঘমিত্রা। তালিবান হামলার পর আফগান মুলূকে একা থাকার স্বপ্ন ভাঙল তাঁর। নিজের বাড়িতেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দুই সন্তানকে বুক দিয়ে আগলে রেখে সাহায্যের দিন গুনছেন তিনি।

বেহালা সখেরবাজারের বাসিন্দা সঙ্ঘমিত্রা বিয়ের পর আফগানিস্তানে গিয়ে হয়েছেন সনিয়া খান। ওই দেশে গিয়ে নিজেকে ওখানকার মতো করে বদলে নিয়েছেন বলে হোয়াটস্‌অ্যাপ কলে জানালেন তিনি। আফগানিস্তানে নার্সিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তার পর থেকে আফগানিস্তানের শারানা প্রভিন্সের হাসপাতালে চাকরি করছেন। বছর চারেক আগে স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তার পর থেকে শারানাতে দুই সন্তানকে মানুষ করার লড়াই চালাচ্ছেন।

কিন্তু গত কয়েক দিনে শুরু হয়েছে একাকি মায়ের অসম লড়াই। এক সপ্তাহ হতে চলল বন্দুক হাতে সঙ্ঘমিত্রাদের গ্রামের দখল নিয়েছে তালিবান। বাড়ির বাইরে পা দিতে ভয় পাচ্ছেন। সঙ্ঘমিত্রার কথায়, ‘‘দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ভয়ে রয়েছি। চাল, ডাল যা এনে রেখেছিলাম তা-ও শেষের দিকে। এত ভয়ে লাগছে যে, বোরখা পরেও বাইরে যেতে সাহস পাচ্ছি না।’’

হাসপাতালের চাকরিতেই সংসার চলে সঙ্ঘমিত্রাদের। কয়েক দিন আগে হঠাৎই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফোন করেছিলেন। আপাতত আর তাঁকে হাসপাতালে আসতে হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সঙ্ঘমিত্রার দাবি, ‘‘মেয়ে বলেই হয়তো আমার চাকরিটা গেল!’’ গত কয়েক মাস ধরে মাইনেও পাচ্ছেন না বলে জানালেন তিনি। ‘‘সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে আর কত দিন চালাবো? মা বাবা কলকাতা থেকে টাকা পাঠাচ্ছেন। সেই টাকাই এখন ভারসা,’’— বললেন দুই সন্তানের মা।

ছেলে আরবাজ খান ১৮-য় পা দিয়েছে। মেয়ে হিনা খানের বয়স ৬। হাসপাতালে চাকরি করে দুই ছেলেমেয়েকে বড় করাই ছিল জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। এখন তালিবানের থেকে ছেলেমেয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কিছু দিন আগে কাঁচা বাজারের জন্য ছেলেকে বাজারে পাঠিয়েছিলাম। রাস্তায় তালিবান ওর হাতে বন্ধুক ধরিয়ে দেয়। ছেলে তালিবানে যোগ দিতে চাইছে কি না জিজ্ঞাসা করে।’’

আফগানিস্তানে যাওয়ার পর শ্বশুড়বাড়ির লোকজন তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট লুকিয়ে রাখে। ২০১৭ সালে অসুস্থ বাবা-মা কে দেখতে কলকাতা ফিরতে চান। সেই সময় আফগানিস্তানের পাসপোর্ট করতে বাধ্য হন বলে জানান তিনি। আইনত সংঘমিত্রা আফগানিস্তানের নাগরিক। কিন্তু আশা করেন অন্যদের সঙ্গে তিনিও ভারতে ফিরতে পারবেন। তিনি বলেন ‘‘আফগানিস্তানের বাসিন্দারাও তো এখান থেকে পালাতে চাইছে। অন্য দেশের প্লেনে ওঠার চেষ্টা করছে। সেখানে আমি তো ওই দেশেরই মেয়ে। আমাদের কি দেশ ফিরিয়ে নেবে না!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kabul Afghanistan Crisis taliban
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE