সুজয় দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র
দূরত্ব প্রায় ২ হাজার ৩০০ কিলোমিটার। কোথায় উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর আর কোথায় আফগানিস্তানের তালিবান বিদ্ধস্ত শহর কাবুল। এখন শরীর আর মনের এতটাই দূরত্ব সুজয় দেবনাথের। কাজের খোঁজে কাবুলে গিয়ে সুজয় এখন
আটকে কাবুল বিমানবন্দরে আমেরিকার সেনা ক্যান্টিনে। প্রায় অন্ধকার ঘরের জানলা দিয়ে দেখছেন বাইরে যুদ্ধের আবহ। কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে গুলির শব্দ। আর মন পড়ে রয়েছে অশোকনগরের বাড়িতে। সেখানে তাঁর অপেক্ষায় ছোট্ট মেয়েটা। শেষবার যখন দেখেছেন তখন বয়স ছিল মাস দুয়েক। ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাবুলিওলা গল্পের রহমতের প্রতিবিম্ব সুজয়। রহমতও তো কাবুলে রেখে আসা ছোট্ট মেয়ের কাছে ফিরতে চেয়েছিল। কলকাতার মিনির মধ্যে দেখতে চেয়েছিল তার মেয়েকে।
আনন্দবাজার অনলাইনের ফোন পেয়ে সুজয় টানা বলে গেলেন কাবুলের কথা। বললেন প্রতি মুহূর্তে ভয় পাওয়ার কথা। সেই সঙ্গে জানালেন, দেশে ফেরার আশ্বাস মিলেছে। আর তা মেলার পরই ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি হয়ে নিয়েছেন সুজয়। বললেন, ‘‘আগামী শুক্রবার ফেরার কথা। কিন্তু এখনও জানি না কী হবে। আমি এখন থেকেই ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি। বিমান বন্দরেই রয়েছি। ফলে ঘরে গিয়ে ব্যাগ নিতে দু’মিনিট আর প্লেনে উঠতে তিন মিনিট সব মিলিয়ে পাঁচ মিনিট লাগবে। সেই সময়টার অপেক্ষায় রয়েছি।’’
হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনার শেষে এখানেই চাকরি করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ আসার আগেই একটা চাকরি পেয়ে যান আফগানিস্তানে। ওই সংস্থা কাবুলে থাকা আমেরিকার সেনার রান্না কাজ করে। তাদের হয়েই রাঁধুনির সহকারী হিসেবে কাজ করেন। শেষবার বাড়ি এসেছিলেন ২০১৮ সালে। সে বারই মেয়ে হয়েছিল। তখন দেখে যাওয়া মাস তিনেকের মেয়ের বয়স বছর তিনেক। কথায় কথায় বারবার মেয়ের কথা সুজয়ের মুখে, ‘‘মেয়েটার মুখটা বড্ড মনে পড়ছে, কবে যে দেখতে পাব।’’
যে দিন তালিবান দখলে গেল কাবুল সে দিন থেকেই বাড়ি ফিরতে চাইছেন সুজয়। জানালেন, বিপদ বুঝতে পারার পরেই তিনি ও সঙ্গীরা প্রথমে নিজেদের সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ততক্ষণে সেই কর্তারা যে যাঁর দেশে ফিরে গিয়েছেন। এর পরে ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ এবং তার পরিণতিতে এখনও পর্যন্ত যা আশ্বাস মিলেছে, তাতে ২৭ অগস্ট বিমান ধরার কথা।
সুজয়দের ভয় তবে একটু হলেও কমেছে এখন। বললেন, ‘‘আমেরিকার সেনার সঙ্গেই থাকি। কিন্তু সেনা যখন চলে গেল তখন ভয়টা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এখন সেনাকর্মীরা ফেরায় মনে বলও ফিরেছে। গুলির শব্দ শুনেই আমরা কেঁপে উঠছিলাম। সেনাকর্মীরা ছাদে নিয়ে গিয়ে বন্দুক চালিয়ে বুঝিয়েছেন, কোনটা ভয় দেখানোর জন্য গুলি চালানো আর কোনটা মানুষ মারার। কোন গুলিতে কেমন শব্দ।’’
আতঙ্ক কমেছে। আশ্বাসও মিলেছে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না সুজয়। বললেন, ‘‘দিন গুনছি। প্রতিটি মুহূর্ত গুনছি। সেই সঙ্গে কাজও করতে হচ্ছে। কিন্তু মনটা দেশে যেতে চাইছে। বাড়ি খুব টানছে।’’ এখন অশান্ত আফগানিস্তানে বসে বাড়ির জন্য টান অনুভব করলেও ফের যেতে চান কাবুলে। কারণ, কাজের জায়গা হিসেবে কাবুল নাকি মন্দ শহর নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy