নিহত স্বপন দে।
সংস্থায় কর্মরত এক বাঙালি ইঞ্জিনিয়ারকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের প্রশ্ন করেছিল চার অজ্ঞাতপরিচয় যুবক। তাদের দু’জনকে সঙ্গে করে দফতরের ভিতরে নিয়ে যান ওই নিরাপত্তারক্ষী। ওই বাঙালি কর্মীর টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নমস্কার করেই গুলি চালায় আগন্তুকেরা। শনিবার দুপুরে উত্তরপ্রদেশের মোগলসরাই রেল কলোনির ভিতরে এক নির্মাণ সংস্থার অফিসে এমন নাটকীয় ভাবেই খুন হলেন স্বপন দে (৪৪) নামে ওই বাঙালি। তাঁর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে।
ঘটনার পরে ইতিমধ্যে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে মোগলসরাই থানায়। তদন্তে নেমে ঘটনার সময়ে অফিসে থাকা বাকি কর্মী এবং সংস্থার উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তবে আততায়ীদের পরিচয় এবং খুনের কারণ নিয়ে এখনও অন্ধকারে তদন্তকারীরা। মোগলসরাই থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার শিবানন্দ মিশ্র বলেন, ‘‘ওই অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ফুটেজ খুবই অস্পষ্ট। খুনের কারণ কী, তা জানার চেষ্টা চলছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার দুপুর ২টো নাগাদ মোটরবাইকে করে চার জন যুবক স্বপনের খোঁজে ওই অফিসে যায়। ‘স্বপন দে কৌন হ্যায়’— অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে জানতে চেয়েছিল তারা। স্বপনকে চিনিয়ে দিতে ওই যুবকদের অফিসের ভিতরে নিয়ে যান ওই নিরাপত্তারক্ষী। সে সময় দু’জন যুবক মোটরবাইকে বাইরেই অপেক্ষা করতে থাকে এবং বাকি দু’জন ভিতরে যায়।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানাচ্ছেন, অফিসের ভিতরে ঢুকে স্বপনের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে নমস্কার করে আততায়ীরা। প্রত্যুত্তরে স্বপন কোনও কথা বলার আগেই পকেট থেকে রিভলভার বার করে গুলি চালায় তারা। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে চালানো মোট চার রাউন্ড গুলির মধ্যে একটি তাঁর হাতের
তালু ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। আর একটি গুলি লাগে তাঁর বুকের ঠিক মাঝখানে। বাকি দু’টি গুলিও লাগে স্বপনের বুক এবং হাতে। ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। আততায়ী দুই যুবক আরও দু’রাউন্ড গুলি ছুড়তে ছুড়তে বেরিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এর পরে রক্তাক্ত স্বপনকে নিয়ে এক কিলোমিটার দূরে মোগলসরাই রেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় স্তম্ভিত ওই অফিসের অন্য কর্মীরা। তেমনই এক জন জগদীশ রাই ফোনে জানান, ঘটনার সময়ে তিনি স্টোর রুমে ছিলেন। গুলির আওয়াজ শুনে তড়িঘড়ি সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। সে সময়ে সজল মাইতি নামে আর এক কর্মী ছুটে এসে জগদীশকে জানান যে, স্বপনকে গুলি করা হয়েছে। জগদীশের কথায়, ‘‘দৌড়ে গিয়ে দেখি, চেয়ারেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লুটিয়ে পড়েছেন স্বপন সাহেব। দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ।’’
খবর পেয়ে ইতিমধ্যেই মোগলসরাই গিয়েছেন মৃত স্বপনের ভাই তপন এবং স্ত্রী নন্দিতা। রবিবার সেখান থেকে তপন জানাচ্ছেন, গড়িয়াহাট আইটিআই থেকে ড্রাফটসম্যানশিপ পাশ করেছিলেন স্বপন। গত তিন বছর ধরে ওই সংস্থায় কর্মরত ছিলেন তিনি। তপনের কথায়, ‘‘মোগলসরাইয়ে কয়েক জন সহকর্মীর সঙ্গে গেস্ট হাউসে থাকতেন দাদা। শনিবারই সেখান থেকেই অফিসে গিয়েছিলেন তিনি।’’ ময়না-তদন্তের পরে আজ, সোমবার তাঁর দেহ সড়কপথে অশোকনগরের বাড়িতে আনা হচ্ছে। তপন জানিয়েছেন, অশোকনগরের বাড়িতে স্বপনের বাবা-মা রয়েছেন। আছে তাঁর ৯ বছরের শিশুকন্যাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy