বাংলার মিষ্টি জয়।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ওডিশাকে হারিয়ে রসগোল্লার জিআই রেজিস্ট্রেশন আদায় করে নিল পশ্চিমবঙ্গ। জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই জানিয়ে দিল রসগোল্লা পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব সৃষ্টি, তা কোনও ভাবেই ওডিশার নয়। রসগোল্লার উপকরণ বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জিআই।
বাংলা যখন রসগোল্লা জিতে নিল, ঠিক সেই সময়েই জিআই রেজিস্ট্রেশনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ওডিশা। রাজ্য সরকারের তরফে এক প্রেস বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ৮০০ বছরের পুরনো ওডিশার রসগোল্লার জন্য জিআই রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে তারা।
রসগোল্লা তুমি কার? এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই চলছিল পশ্চিমবঙ্গ আর ওডিশার মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব পাঁচ উৎপাদনের ‘জিআই’ ট্যাগ পেতে আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ প্রথম চারটি অর্থাৎ সীতাভোগ-মিহিদানা, তুলাইপাঞ্জি ও গোবিন্দভোগ চাল নিয়ে সমস্যা খুব একটা কখনওই ছিল না৷ গোল বেধেছিল পাঁচ নম্বর অর্থাৎ রসগোল্লাকে নিয়ে৷
আরও পড়ুন: অনেক লড়াইয়ের পর রসগোল্লার স্বীকৃতি, খুশি কারিগরেরা
রসগোল্লা তাদের নিজস্ব বলে দাবি করে ওডিশা। তাদের মতে, রথযাত্রা শেষে সাত দিন মাসির বাড়ি কাটিয়ে মন্দিরে ফেরার সময়ে রসগোল্লাই জগন্নাথদেবের ‘পাসওয়ার্ড’। স্ত্রী লক্ষ্মীর মান-ভঞ্জন করে মন্দিরে ঢুকতে হয় তাঁকে। হাঁড়ি-ভরা রসগোল্লা দিয়েই বৌয়ের মন গলান তিনি। রীতি মেনে এখনও মন্দিরের সেবায়েতদের একাংশ লক্ষ্মীর হয়ে ঝগড়া করেন। কেন স্ত্রীকে ফেলে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন জগন্নাথ! রীতিমাফিক এই তর্কে হার হয় জগন্নাথের প্রতিনিধিরই।
আরও পড়ুন: পুরীর ভোগকে ঘিরে বাংলার সঙ্গে রসগোল্লা যুদ্ধ
মন্দিরে ঢুকতে না-পেরে জগন্নাথ বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন বলে একটা সময়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেন না মুখ্য দয়িতাপতি। পরের বার এমন ভুল আর করবেন না, বলে স্বামীর তরফে আশ্বাস পেয়ে তবে মন গলে লক্ষ্মী ঠাকরুণের। মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের কাছে লক্ষ্মী-নারায়ণের পুষ্পাঞ্জলি পুজোর পরেই রসগোল্লা-ভোগ স্ত্রীকে অর্পণ করেন জগন্নাথ। পুরী মন্দিরের এই ট্র্যাডিশনকে হাতিয়ার করেই ওড়িশার দাবি, রসগোল্লা আসলে উৎকলজাত। আর তাই জগন্নাথদেবের মন্দিরে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে খাজা-গজার শ্রীক্ষেত্র এখনও এক দিনের জন্য রসগোল্লা-নগরী হয়ে ওঠে। দোকানে দোকানে রসগোল্লা-উৎসবের ধুম পড়ে।
স্বাভাবিক ভাবেই ওডিশার এই দাবিতে আঁতে ঘা লাগে আমবাঙালির মনে রসগোল্লার ‘কলম্বাস’ বলে খ্যাত নবীন দাশের বংশধর তথা ‘কে সি দাশ’-এর কর্তাদের। দরবার করা হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁদের হিসেব মতো, ১৮৬৮ সালে বাগবাজারের দোকানেই ধবধবে স্পঞ্জ রসগোল্লার উদ্ভাবন ঘটান ‘নবীন ময়রা’। তাঁদের অভিযোগ ছিল, জগন্নাথদেবকে সামনে রেখে রসগোল্লা-গৌরব ছিনিয়ে নিতে চাইছে ওডিশা।
আরও পড়ুন: কাজিয়া কীসে, রসে আর গোল্লায় ফারাক বহু
এর পরই শুরু দড়ি টানাটানি। জিআই কর্তৃপক্ষের কাছে রাজ্য সব যুক্তি পেশ করে। তবে কোনও দিন জিআইয়ের কাছে এ বিষয়ে আবেদন জানায়নি ওডিশা। অবশেষে জয় পশ্চিমবঙ্গের। জিতলেন নবীন ময়রারাই। এ দিন জিআইয়ের স্বীকৃতির ফলে আর কোনও রাজ্য রসগোল্লা তাদের বলে দাবি করতে পারবে না। এ দিনের স্বীকৃতির পরই টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লন্ডন থেকে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘‘আমরা আনন্দিত, গর্বিত।’’
Sweet news for us all. We are very happy and proud that #Bengal has been granted GI ( Geographical Indication) status for Rosogolla
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) November 14, 2017
সত্যিই আশ্চর্য সমাপতন! বিশ্ব ডায়বিটিস দিবসের দিনই রসগোল্লাকে ‘বাংলার রসগোল্লা’ বলার অধিকারও মিলল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy