মুখ্যমন্ত্রী সোমবারই বলেছেন, যে ভাবে চেয়েচিন্তে ডাক্তার জোগাড় করতে হচ্ছে, তাতে হাসপাতালগুলিতে শয্যা বাড়ানো যাবে না। আর সরকারি ডাক্তারদের বড় অংশ বলছেন, ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানো তো পরের কথা, যাঁরা আছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে তাঁদের ধরে রাখাই কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতাল শীঘ্রই আরও বড় ধরনের চিকিৎসক-সঙ্কটের মধ্যে পড়বে।
দিনের পর দিন যে ভাবে সরকারি ডাক্তাররা নিগৃহীত হচ্ছেন, পরিকাঠামোর অভাবে যে ভাবে তাঁদের প্রতি পদে বিপদে পড়তে হচ্ছে এবং একাই মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তার একাধিক উদাহরণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠিও দিচ্ছেন সরকারি ডাক্তারদের একটা অংশ। সরকারি হাসপাতালে সব ফ্রি দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা সরে এসে পরিকাঠামোর দিকটি নিশ্চিত করার উপরে জোর দিয়েছেন তাঁরা।
চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস ফোরামের তরফে রেজাউল করিম মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, বিভিন্ন ঘটনায় ডাক্তারদের বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে, স্বেচ্ছাবসরের সুযোগ না দিয়ে তাঁদের পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখা হচ্ছে। এর পরেও সরকারি চাকরিতে ডাক্তাররা থাকবেন কেন? তাঁর কথায়, ‘‘নেতা ধরে বদলি হয়। নেতা ধরে ভাল পোস্টিং পাওয়া যায়। আগে এগুলো বন্ধ হোক।’’ চিকিৎসক নিগ্রহের ৭৫টি ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘হাসপাতালে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনুন। কোনও রাজনৈতিক নেতা ডাক্তারদের উপরে হম্বিতম্বি করলে তাকে দল থেকে বার করে দিন।’’
সরকারি চিকিৎসকদের বড় অংশের বক্তব্য, জেলায় রাজনৈতিক চাপ কখনও কখনও মারাত্মক আকার নেয়। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষক-চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অনুরোধের ছলে নির্দেশ আসে। মানতে না পারলেই জোটে গালিগালাজ।’’ আবার বীরভূমের একটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের এক শল্য চিকিৎসকের কথায়, ‘‘দু’বছর ধরে এখানে পড়ে রয়েছি। অস্ত্রোপচার দূরের কথা, রোগীর প্রয়োজনে এক্স-রে করানোরও ব্যবস্থা করতে পারছি না। কারণ, টেকনিশিয়ান নেই। কেন সরকার এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বেশি টাকা দিয়ে টেকনিশিয়ান নিয়োগের ব্যবস্থা করছে না? প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে চুক্তির ভিত্তিতেও তো এটা করা সম্ভব।’’ পরিকাঠামোর অভাবে চিকিৎসা করতে না পারার আশঙ্কায় অনেক চিকিৎসক সরকারি চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
সামনে এসেছে বেতনের বিষয়টিও। এক তরুণ সরকারি চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমরা চাকরিতে যোগ দিয়ে যে বেতন পাই, বেসরকারি হাসপাতালে আংশিক সময়ের আরএমও হিসেবে যোগ দিলেও তার চেয়ে বেশি উপার্জন করা সম্ভব। তা হলে এত ঝক্কি সহ্য করে কেন পড়ে থাকব?’’ চিকিৎসকদের তরফে এত অভিযোগের নিট ফল ভালই বুঝতে পারছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, বার বার বিজ্ঞাপন দিয়ে যত ডাক্তার চাওয়া হচ্ছে, তার সিকিভাগও জুটছে না। এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরাও আতান্তরে। সরকারি চিকিৎসকদের অবসরের বয়স বাড়িয়ে কোনওমতে পরিষেবা টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন, তা আমরা বুঝতে পারছি না। কারণ অনেকেই ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy