সাক্ষাৎ: পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নেপাল মাহাতো ও সুজন চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।
আঘাত রয়েছে বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বাসুদেব আচারিয়ার। তবে শনিবার তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকা এই প্রাক্তন সাংসদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে আসেন সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কাশীপুরে তৃণমূল কর্মীরা বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দিচ্ছে। জেলাশাসকের কাছে এই অভিযোগ তুলে নিরাপত্তার আর্জি জানিয়ে বাসুদেববাবু শুক্রবার মিছিল করে কর্মীদের জন্য কাশীপুর ব্লক অফিসে মনোনয়ন তুলতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেখানে স্থানীয় বিধায়কের নেতৃত্বে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপরে হামলা চালায়। বাসুদেববাবুর পেটে বাঁশের ঘা দেওয়া হয়। কপাল ফাটে দলের বর্ষীয়ান নেতা সুকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের, পা ভাঙে দলের জেলা কমিটির সদস্য সত্যনারায়ণ বাউড়ির। বিকেলেই বাসুদেববাবুকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের সিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। আহত চার নেতা-কর্মীকে বাঁকুড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়।
বাসুদেববাবুর উপরে হামলার ঘটনায় সে দিন পুলিশের অভিযোগ জানাতে পারেনি সিপিএম। তবে তৃণমূল তাদের কাশীপুরের পার্টি অফিস সিপিএমের লোকজন ভাঙচুর করে বলে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। তাতে পুলিশ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি।
এ দিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭৬ বছরের বাসুদেববাবুর পেটের পেশি থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে জমাট বেঁধে রয়েছে। মানসিক ভাবেও ট্রমা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। শুক্রবার রাত থেকেই হাসপাতালে আসা-যাওয়া করছেন বাসুদেববাবুর স্ত্রী রাজলক্ষ্মী আচারিয়া। তবে হাসপাতাল সুপার শিবাশিস দাস বলেন, ‘‘তাঁর দেহে সামান্য চোট রয়েছে। অবস্থা স্থিতিশীল।’’ জেলা সিপিএম সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘বাসুদেববাবুর অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।’’
প্রবীণ এই নেতার উপরে হামলায় নিন্দা করেছে প্রায় সব দলই। রাতেই হাসপাতালে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন মন্ত্রী তথা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সুশান্ত মাহাতো বাসুদেববাবুকে ফুলের তোড়া দিয়ে জানান, দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আরোগ্য কামনা করে ফুল পাঠিয়েছেন।
শনিবার বেলায় হাসপাতালে আসেন বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী, দলের কেন্দ্রীয় কর্মসমিতির সদস্য বিপি সিংহ দেও প্রমুখ। তাঁরা ভিতরে গিয়ে বাসুদেববাবুর কাছে পুরো ঘটনাটি জানতে চান। তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেন। সায়ন্তনবাবু বলেন, ‘‘এক সর্বভারতীয় নেতার উপরে যে বর্বরোচিত হামলা হয়েছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। এতেই প্রমাণিত, বাংলার আইন-শৃঙ্খলা এখন কোন জায়গায়।’’
বাঁকুড়ায় তৃণমূলের হাতে ‘নিগৃহীত’ হয়ে দুপুর সওয়া একটা নাগাদ বাসুদেববাবুকে দেখতে আসেন বিধানসভায় বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র, প্রাক্তন সাংসদ সুনীল খান প্রমুখ। সুজনবাবু বাসুদেববাবুকে বলেন, ‘‘সূর্যদা, বিমানদা, সীতারাম ইয়েচুরি সবাই আপনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খুবই উদ্বিগ্ন। দিল্লিও জানতে চেয়েছে।’’ বাসুদেববাবু তাঁকে জানান, কাশীপুরে কেউই মনোনয়ন দিতে পারছিল না। অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। আমি সঙ্গে ছিলাম। ওরা আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিধায়ক দূরে লাঠি হাতে দাঁড়িয়েছিলেন। ওরা কাউকে ছাড়েনি।’’ সুজনবাবু তাঁকে আশ্বাস দেন, বিশ্রাম করুন। উদ্বিগ্ন হবেন না। তাঁরা চিকিৎসকদের কাছেও বাসুদেববাবুর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।
বাইরে বেরিয়ে সুজনবাবু বলেন, ‘‘উনি দেশের এক শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি পুলিশ ও প্রশাসনকে খবর দিয়েই দলীয় কর্মীদের জন্য মনোনয়নপত্র তুলতে যাচ্ছিলেন। তারপরেও এই হামলা মেনে নেওয়া যায় না। এরপরে কার কাছে অভিযোগ করব?’’ হামলার মদত দেওযার অভিযোগ এক বিধায়কের দিকে ওঠায় সুজনবাবু বলেন, ‘‘এই সহকর্মীর জন্য মুখ পুড়ছে। মাথা হেঁট হয়ে যায়। একটাই মনোভাব দখলদারি, লুঠপাট। গুন্ডাদের কন্ট্রোলে প্রশাসন চলছে। ডিএম, এসপি, ডিজি জানেন না? গুন্ডাদের ভয়ে জুজু।’’
কংগ্রেস জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো হাসপাতালে আসছেন জেনে বামফ্রন্ট নেতৃত্ব কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। নেপালবাবুকে সঙ্গে নিয়েই সুজনবাবু ফের ওয়ার্ডে ঢোকেন। নেপালবাবু ফুল দেন বাসুদেববাবুকে। তিনি বাইরে বেরিয়ে বলেন, ‘‘এক জন প্রবীণ মানুষকেও ওরা মারধর করল! পুরুলিয়াতে এই সংস্কৃতি ছিল না। যাঁরা এটা আনছেন, তাঁরা আখেরে পুরুলিয়ার মানুষের ক্ষতি করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy