চিকিৎসার জন্য সোমবার আরজিকরে এসেছিলেন আজিজুল মোল্লা। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে সময়ে চিকিৎসা হয়নি। এখন বাদ যেতে বসেছে আজিজুলের আঙুল। নিজস্ব চিত্র
কাঠ চেরাই করতে গিয়ে বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের উপর দিয়ে করাত চলে গিয়েছিল। চল্লিশ বছরের আজিজুল মোল্লা জানেন না, তাঁর সেই কাটা আঙুল জোড়া লাগবে কি না।
জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে অস্ত্রোপচার হয়নি আট মাসের শিশুকন্যার। মেয়ের স্বাস্থ্য দুশ্চিন্তায় ফেলেছে শিশুকন্যার বাবা বিপ্লব সেনগুপ্ত (নাম পরিবর্তিত)-কে।
স্বাস্থ্য পরিষেবা মঙ্গলবার ফের চালু হয়েছে ঠিকই। তবে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালের এই ধরনের টুকরো টুকরো ছবিই বলে দিচ্ছে, সাত দিনের অচলাবস্থায় কারও যদি প্রাপ্তির ঝুলি শূন্য থেকে যায়, তাঁরা হলেন রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়-পরিজন।
সোমবার পোলেরহাটে নিজের আসবাবের দোকানে কাঠ চেরাইয়ের সময় করাত চলে যায় আজিজুলের বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের উপরে। ‘‘বুড়ো আঙুল কেটে ঝুলছিল। রুমাল চাপা দিয়ে জিরানগাছা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাই। ওখানে সেলাই করে দিয়ে আরজি কর হাসপাতালে যেতে বলা হয়। কর্মবিরতির কথা বলতেই ওঁরা জানালেন, জরুরি পরিষেবা চলছে,’’ বললেন আজিজুল। তাঁর আঙুলের জরুরি চিকিৎসা দরকার। কিন্তু দু’ঘণ্টা ধরে ওই হাসপাতালে দৌড়োদৌড়ি করেও চিকিৎসা পাননি তিনি। কেউ তাঁর চিকিৎসা করতে রাজি হননি বলে আজিজুলের অভিযোগ। বাড়ি ফিরে যান তিনি। এ দিন আরজি করেরই বহির্বিভাগের বেঞ্চে স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিলেন আজিজুল। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসক বলছেন, ছ’ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রোপচার হলে আঙুল বাদ দিতে হত না। কিন্তু এখন তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। পরিবারে আমি একা রোজগেরে। কত মিনতি করলাম। কেউ চিকিৎসা করল না। আঙুল বাদ দিতে হলে কী হবে?’’
আরও পডু়ন: তোলাবাজির টাকা ফেরত দিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে বসে বিপ্লবের শাশুড়ি জানান, কিডনির অসুখে আক্রান্ত শিশুকন্যার অস্ত্রোপচারের কথা ছিল ১১ জুন। বিপ্লব বললেন, ‘‘প্রস্তুতি সারা হয়ে গিয়েছিল। বড় ডাক্তার অস্ত্রোপচার করতে রাজিও ছিলেন। কিন্তু জুনিয়রেরা রাজি না-হওয়ায় সব ভেস্তে যায়।’’ দিদিমা জানান, যে-সব রোগীর অবস্থা তাঁর নাতনির থেকেও খারাপ, আগে তাঁদের অস্ত্রোপচার হচ্ছে। মালদহ থেকে তিন মাসের ছেলে আকিব ইভানকে নিয়ে ১২ জুন এসএসকেএম হাসপাতালে আসেন মিজানুর ইসলাম এবং মরিয়ম খাতুন। আকিব ডান চোখ পুরো খুলতে পারে না। মস্তিষ্কে স্নায়ুরোগজনিত কিছু সমস্যা আছে। ছ’দিন অপেক্ষার পরে মঙ্গলবার বহির্বিভাগে চিকিৎসকেরা তাকে দেখেছেন। মিজানুর বলেন, ‘‘ভাবিনি, এটুকু বাচ্চাকে চিকিৎসার জন্য এত অপেক্ষা করতে হবে!’’
এমন হয়রানি কেন? সদুত্তর নেই। স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তারা শুধু বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আপাতত অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রোগীদের পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy