Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ধৈর্য আর মমতার মিশেলে বাজিমাত

সমস্যাকে সমাধান পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের প্রমাণ করলেন, তিনি পারেন!

ফাঁকা ধর্না মঞ্চ। এনআরএসে সোমবার রাতে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ফাঁকা ধর্না মঞ্চ। এনআরএসে সোমবার রাতে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দেবাশিস ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯ ০২:৫৭
Share: Save:

কে হারলেন? কে জিতলেন?

সোমবার সন্ধ্যা থেকে অনেকেই এই অঙ্ক কষতে ব্যস্ত। বিশেষ করে তাঁরা, যাঁদের কাছে বিরোধ মেটানোর চেয়ে তা জিইয়ে রাখা ছিল বেশি ‘লাভজনক’। কিন্তু আপাতত তাঁদের নিরাশ করে শুভবুদ্ধির জয় হল। সমস্যাকে সমাধান পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের প্রমাণ করলেন, তিনি পারেন!

গোড়ায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে তাঁর মনোভাব ছিল যথেষ্ট কড়া। জটিলতাও তাতে বাড়ছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই একটা বদল চোখে পড়ে। বল যে তিনি ক্রমশ নিজের কোর্টে টেনে নিচ্ছেন, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়। ওই দিনই তিনি প্রথম আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মাঝের দু’দিন আন্দোলনকারীদের যাবতীয় জেদ কার্যত বিনা প্রতিবাদে মেনে নিতে নিতে মমতা সকলকে এটাও বুঝিয়ে দিতে পেরেছিলেন, অচলাবস্থার অবসানে তিনি কোনও দরজাই বন্ধ করতে চান না।

তাই আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা যখন একের পর এক জিগির তুলে আলোচনায় নানা ভাবে বাদ সেধেছেন, তখনও সুচিন্তিত, পরিবর্তিত পদক্ষেপে তাঁর পাল্টা কৌশল হয় নমনীয় থাকা। মমতার বিবেচনাবোধ তাঁকে নিশ্চিত ভাবে বুঝিয়ে ছিল, স্বাস্থ্য পরিষেবায় অচলাবস্থা চলতে থাকলে সামগ্রিক ভাবে সেই দায় সরকার এড়াতে পারে না ঠিকই। তবে তিনি মীমাংসায় আগ্রহ দেখানোর পরেও আন্দোলনকারীরা যদি তাতে উপযুক্ত সাড়া না দেন, তা হলে সেই আন্দোলন জনগণের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য। বলতেই হবে, মমতার সেই পরিকল্পনা কাজে লেগে গিয়েছে।

আন্দোলনকারীদের আলোচনার টেবিলে আনার জন্য তাঁদের দেওয়া সব শর্ত দফায় দফায় মেনে নিয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি সরাসরি টিভিতে বৈঠকের সম্প্রচার পর্যন্ত! তা সত্ত্বেও তাঁরা শেষ পর্যন্ত নানা ভাবে দর কষাকষি চালিয়ে যান। নানা অছিলায় পরের পর জটিলতা সৃষ্টি করে শেষ লগ্ন পর্যন্ত অনিশ্চয়তা জারি রাখেন পুরো মাত্রায়। ফলে বৈঠকের সময়ও পিছোতে থাকে।

আরও পড়ুন: মানুষের চাপেই গোঁ ছাড়লেন ‘বিপ্লবীরা’

কিন্তু যে মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি সত্ত্বেও এত দিন এনআরএসে বা প্রহৃত ডাক্তারের পাশে যাননি, তিনিই এ দিন আলোচনার স্বার্থে সহনশীল হয়ে মুখ বুজে অপেক্ষা করে বসেছিলেন, কখন তাঁরা আসবেন। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তাঁর দিক থেকে কোনও উষ্মার প্রকাশ ঘটেনি। যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেনেন, তাঁরা জানেন, এটি ‘ব্যতিক্রমী’ মমতা। এখানেও তাঁরই জিত।

আর আলোচনায়? ‘ব্রাদার্স অ্যান্ড সিস্টার্স অব আমেরিকা’ বলে বিশ্ব জয় করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর পরম ভক্ত মমতা আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের যখন বললেন ‘লক্ষ্মী ভাইবোনেরা আমার’, তখন বাকিটুকু মসৃণ হওয়ার বাধা ছিল না। বৈঠকে আন্দোলনকারীদের তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাওনি বলে ভেবেছিলাম তোমরা আমাকে চাও না।’’ তাঁদের দিক থেকে বার্তা এল, ‘‘ম্যাডাম, আমরা আপনাকেই চাই। সব কথা আপনাকে বললেই কাজ হবে।’’ হুমকি, পাল্টা হুমকিতে সাত দিনের উত্তাপ অতএব নিমেষে শীতল।

আরও পড়ুন: ফের কাজে ডাক্তারেরা, সঙ্কট কাটিয়ে সকাল থেকেই আউটডোর হবে স্বাভাবিক

এ দিনের মীমাংসা পর্ব যাঁদের ‘খুশি’ করতে ব্যর্থ হল, তাঁদের অনেকে অবশ্য এর মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের ‘তৈলমর্দন’ দেখতে পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে কেন তাঁরা ‘তেল’ দিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তা নিয়ে কটাক্ষও শুরু হয়ে গিয়েছে।

তবে মমতা জানতেন, এক বার আলোচনায় বসতে পারলে ‘মমতা’ই তাঁর তুরুপের তাস। একটু দেরিতে হলেও এটাই মোক্ষম চাল।

অন্য বিষয়গুলি:

Bengal Doctors Strike Mamata Banerjee NRS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy