Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
NRS

মুখ্যমন্ত্রী স্থান বাছুন, কিন্তু বৈঠক হোক মিডিয়ার সামনে, দাবি জুনিয়র ডাক্তারদের

জনস্বার্থেই আন্দোলন ছেড়ে দ্রুত কাজে ফিরতে চান বলে এ দিন মন্তব্য করেন আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি আন্দোলনকারীরা।—নিজস্ব চিত্র।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি আন্দোলনকারীরা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ১৬:০২
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীকে এনআরএস-এ এসেই বৈঠক করতে হবে, এই দাবি থেকে সরে এলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হলেন তাঁরা, এমনকি কোথায় বৈঠক হবে, তা স্থির করার ভারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরই ছেড়ে দিলেন।

তবে বৈঠকের জন্য বেশ কিছু শর্তও আরোপ করেছেন আন্দোলনকারীরা। রবিবার জিবি বৈঠকের পর তাঁরা জানান, বন্ধ দরজার পিছনে বৈঠকে সায় নেই তাঁদের। বরং বৈঠক হতে হবে প্রকাশ্যে, সংবাদমাধ্যমের সামনে। তাতে রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রতিনিধি যাতে হাজির থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও থাকতে হবে বলে জানিয়ে দেন।

রোগীদের স্বার্থেই আন্দোলন ছেড়ে দ্রুত কাজে ফিরতে চান বলে এ দিন মন্তব্য করেন আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা। তাঁদের আশা, সমস্যার সমাধানে মুখ্যমন্ত্রীও এগিয়ে আসবেন। তবে গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তার সমালোচনা করতে ছাড়েননি জুনিয়র ডাক্তাররা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য অসঙ্গতিপূর্ণ এবং বিভ্রান্তিমূলক বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: আন্দোলন এ বার ঔদ্ধত্যে পৌঁছচ্ছে​

জিবি বৈঠকের পর এ দিন এনআরএস চত্বরেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন আন্দোলনকারী ডাক্তারদের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে তাঁরা বলেন, ‘‘জনস্বার্থে অবিলম্বে কাজে ফিরতে চাই আমরা। আমরা চাই অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে, কিন্তু বন্ধ দরজার পিছনে নয়। মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বৈঠক ডেকেছেন, কিন্তু বন্ধ ঘরে বৈঠকে স্বচ্ছতা থাকবে না। তাই এমন স্থানে বৈঠক হোক, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের সব মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকতে পারেন এবং সারা দেশের সংবাদমাধ্যম থাকবে। কোথায় বৈঠক হবে, তা নির্ধারণ করার ভার আমরা মাননীয়ার উপরেই ছেড়ে দিলাম।’’

এটা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ‘ইগো’-র লড়াই হলেও, তাঁদের কাছে বেঁচে থাকার লড়াই বলে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষও করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘উনি বলছেন, আমাদের সব দাবি নাকি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে কেউ ওঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাননি। তাহলে আমাদের দাবি-দাওয়া ওঁর কানে পৌঁছলই বা কী করে আর উনি সেগুলো সব মেনে নিলেনই বা কী ভাবে? উনি জানিয়েছেন, পরিবহ ভাল আছে। আমাদের প্রথম শর্তই ছিল উনি পরিবহকে দেখতে যান। ওর স্মৃতিশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তির উপর প্রভাব পড়েছে। ও অস্থি বা শল্য চিকিৎসক হতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন যা অবস্থা, তাতে সারাজীবন মৃগীর ওষুধ খেতে হবে ওকে। ওর শল্য চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন শেষ। মানুষের সেবা করতে চাওয়া একজনে হারাল পৃথিবীও। ওর কি সত্যি এটা প্রাপ্য ছিল?’’

হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে গতকাল দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তাও উড়িয়ে দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বরং পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন পদক্ষেপ করা হয়েছে। তাই যদি হয়, তাহলে বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা ন্যাশনাল। এনআরএস এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে হামলা হল কী ভাবে? রাত ভর পাথর ছোড়া হয়েছে, মেয়েদের হস্টেল লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে, আশোভনীয় আচরণ করা হয়েছে। ১৩ জুন হামলা হয়েছে এনআরএস-এ। ১৪ এবং ১৫ জুন হামলা হয়েছে মুর্শিদাবাদ এবং বাঁকুড়া জেলা হাসপাতালে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এক ডাক্তার হামলায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে আগুন পর্যন্ত ধরিয়ে দেওয়া হয়।’’

মুখ্যমন্ত্রী স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া বলে এড়াতে চাইলেও, পর পর ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলিকে তাঁরা পরিকল্পিত অপরাধ বলার পক্ষপাতী বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

এ দিন এনআরএস-এ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে আন্দোলনকারীদের বৈঠক চলে। শনিবার রাত থেকেই অনেকটাই সুর নরম করেছিলেন তাঁরা। আজকে বৈঠক শুরু হওয়ার আগে কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যান আন্দোলনকারীরা। তাঁদের একাংশ যখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পক্ষে মত প্রকাশ করেন, তখন অন্য পক্ষ অনড় থাকার চেষ্টা করে তাদের পুরনো দাবিতেই যে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে এনআরএস-এ আসতে হবে। কিন্তু জেনারেল বডির বৈঠকে সেই অংশ কার্যত সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। কারণ অধিকাংশ জুনিয়র চিকিৎসক এবং আন্দোলনের নেতৃত্ব স্বীকার করেন, সমাধান সূত্র না বার করতে পারলে, বাইরে থেকে আন্দোলনে এখনও পর্যন্ত যে সমর্থন পাচ্ছেন তাঁরা, তাতে ভাটা পড়বে। জনমানসে আন্দোলনকারীদের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে।

সেই জায়গা থেকে অধিকাংশ আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারই বৈঠকের সপক্ষে মত দেন। কিন্তু বৈঠক কোথায় হবে, তা নিয়ে একের পর এক প্রস্তাব উঠে আসতে থাকে। সূত্রের খবর, একটি অংশ যখন রাজভবনে বৈঠকের পক্ষে সওয়াল করে, তখন প্রশ্ন ওঠে, রাজ্যপাল কি আদৌ মধ্যস্থতা করতে চাইবেন? তা নিয়ে সংশয় তৈরি হলে বৈঠকের দিন এবং স্থান নির্ধারণে একমত হতে ব্যর্থ হন আন্দোলনকারীরা। এই মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এলে আন্দোলনের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে এবং সেখান থেকেই সার্বিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে কিন্তু কোনও বন্ধ দরজার পিছনে নয়, বরং বৈঠক করতে হবে প্রকাশ্যে। দিন ও স্থান নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় শেষমেশ, মুখ্যমন্ত্রীর উপরই সেই সিদ্ধান্তের ভার ছেড়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: নীলরতনে ইমার্জেন্সির পাশেই কাতরাচ্ছেন ক্যানসার রোগী

অন্য দিকে নবান্ন সূত্রে খবর, স্বাস্থ্যকর্তারা গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। ঘটনা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করছেন তাঁরা। এ দিন বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের নেতৃত্বস্থানীয়রা পদত্যাগী অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেন। তাঁকে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রকেও সেই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। দুপুরে বৈঠকের আগেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এক দফা কথা হয়েছিল তাঁর। এ ছাড়াও, খবর পৌঁছেছে কালীঘাটেও। তবে এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

NRS Doctors' Strike Junior Doctors Medical College Mamata Banerjee Kolkata West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy