Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

‘হুমকি’র মুখে হস্টেল ত্যাগ আবাসিকদের

শুক্রবার এমনই আতঙ্কের ছবি দেখা গিয়েছে এনআরএস হাসপাতালের ছেলেদের হস্টেলে। এখনও সে ভাবে কেউ হস্টেল না ছাড়লেও বাইরের কারও সামনেই তাঁরা মুখ খুলতে নারাজ।

শূন্য: ফাঁকা হয়ে গিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্নাতক স্তরের ছাত্রীদের হস্টেল (বাঁ দিকে)। দরজায় ঝুলছে তালা (ডান দিকে)। শুক্রবার। ছবি: নীলোৎপল বিশ্বাস

শূন্য: ফাঁকা হয়ে গিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্নাতক স্তরের ছাত্রীদের হস্টেল (বাঁ দিকে)। দরজায় ঝুলছে তালা (ডান দিকে)। শুক্রবার। ছবি: নীলোৎপল বিশ্বাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯ ০২:৪৪
Share: Save:

কেউ মেসেজ পাচ্ছেন মোবাইলে। কারও হস্টেল গেটের বাইরে রাতে ব্যাট-উইকেট হাতে জনা পঞ্চাশের ভিড় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছে বলে অভিযোগ। আতঙ্কে তাই হস্টেল ছেড়ে হাসপাতালেরই একটি ঘরে বৃহস্পতিবার রাতটা কাটাতে হয়েছে এসএসকেএমের আবাসিকদের। পরিস্থিতি এমনই যে, শুক্রবার সকাল থেকে শহর কলকাতার বহু মেডিক্যাল কলেজেরই হস্টেল ছাড়ছেন আবাসিকেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘চিকিৎসা করতে গিয়ে যাতে মার না খেতে হয়, সেই কারণে আন্দোলন। আর সেই আন্দোলনের ফলে হস্টেলেও এখন নিরাপত্তা নেই!’’

এক রোগীর মৃত্যুর জেরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-নিগ্রহের অভিযোগ ওঠায় হাসপাতালে হাসপাতালে শুরু হওয়া কর্মবিরতির চতুর্থ দিন ছিল শুক্রবার। বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবায় অচলাবস্থা ছড়িয়েছে জেলাগুলিতেও। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও পরিস্থিতি বদলানোর লক্ষণ নেই। এই অবস্থায় জোর করে আন্দোলন তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসকেরা। আন্দোলন না তুললে হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁদের। এমনকি, বুধবার রাতে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছেলেদের হস্টেলে আগুন লাগার ঘটনাতেও অভিযোগ উঠেছে সেই ‘বহিরাগতদের’ বিরুদ্ধেই। আবাসিকদের দাবি, ফাঁকা হস্টেলে ঢুকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই খবর প্রকাশ্যে আসতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজে।

শুক্রবার এমনই আতঙ্কের ছবি দেখা গিয়েছে এনআরএস হাসপাতালের ছেলেদের হস্টেলে। এখনও সে ভাবে কেউ হস্টেল না ছাড়লেও বাইরের কারও সামনেই তাঁরা মুখ খুলতে নারাজ। সুদীপ্ত নন্দী নামে এক চিকিৎসক-পড়ুয়া শুধু বললেন, ‘‘কাল থেকেই অনেক ভাবে হুমকি আসছে। বাবা-মায়েরাও ভয় পাচ্ছেন। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসার প্রশ্ন নেই।’’ এই হস্টেলেরই তিনতলার ৬৮ নম্বর ঘরে থাকেন আক্রান্ত ইন্টার্ন পরিবহ মুখোপাধ্যায়। তাঁর ঘরেও সেই আতঙ্কেরই চিত্র।

পরিবহের খাটে বসে তাঁর এক সহপাঠী বললেন, ‘‘পরিবহের অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা আগে বাড়াতে হবে, তার পরে সব কথা।’’ তাঁর দাবি, যে নিরাপত্তারক্ষীরা সরকারি হাসপাতালগুলিতে থাকেন, ১০-১৫ জন একসঙ্গে হামলা চালাতে এলে তাঁরা তাঁদের আটকানোর পক্ষে যথেষ্ট নন। কথায় কথায় পরিবহের বিছানার একটি ছবি তুলতে চাইতেই প্রবল উত্তেজিত আর এক পড়ুয়া। নাম গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়ে বললেন, ‘‘দয়া করে ছবি তুলবেন না। বিছানার চাদর দেখেও চিনে ফেলতে পারে। কাল থেকে অনেক রকম মেসেজ পাচ্ছি।’’ বেশ কয়েক বার অনুরোধের পরে বিছানার ছবি তুলতে দিলেন পরিবহের সেই ‘রুমমেট’। কিন্তু পাল্টে ফেললেন বিছানায় তখন পাতা চাদর এবং বালিশ!

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবার আন্দোলনের মধ্যেই চিকিৎসকেরা জুনিয়রদের পরামর্শ দিচ্ছেন, ‘‘একসঙ্গে থাক। একা হস্টেলে যাওয়ার দরকার নেই।’’ সেখানকার চিকিৎসক শুভদীপ মণ্ডল জানালেন, স্বর্ণময়ী গার্লস হস্টেল, নিউ হস্টেল-সহ তাঁদের ক্যাম্পাসে মোট তিনটি পিজিটি হস্টেল রয়েছে। এ ছাড়া, গিরিশবাবু হস্টেল, মেন বয়েজ হস্টেল-সহ রয়েছে আরও তিনটি হস্টেল। সুনন্দা ঘোষ নামে আর এক চিকিৎসক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘অন্তত ৫০-৬০ জন মেয়ে শুক্রবার হস্টেল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। নিরাপত্তার এই যদি অবস্থা হয়, তা হলে চিকিৎসা করব কী করে!’’

এসএসকেএম হাসপাতালে আবাসিকদের সারা রাত একসঙ্গে কাটানোর কথা জানাতে গিয়ে মেডিক্যাল কলেজেরই চিকিৎসক পড়ুয়া সুশ্রুত চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘ভিড় করে রাতে হাসপাতাল ঘিরে অনেকে দাঁড়িয়ে ছিল। এর পরে জটিল রোগের চিকিৎসা করতে গেলে তো হাত আরও কাঁপবে! মনে হবে, যদি ইঞ্জেকশন দিলেই রোগীটা মারা যায়, দোষ পড়বে আমার। আমাকে পেটানো হবে!’’

এ ভাবে আর যা-ই হোক, জরুরি চিকিৎসা হয় না।

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor's Strike Hostel Junior Doctor NRS Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy