সেবা: পরিষেবা কেন্দ্র খুলে রোগী দেখছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। রবিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে দু’ঘণ্টা ধরে ছোটাছুটি করছিলেন মাথায় গুরুতর চোট পাওয়া তপনকুমার পালের আত্মীয়েরা। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাসিন্দা পেশায় ইলেকট্রিক-মিস্ত্রি তপনবাবু শনিবার উঁচু থেকে পড়ে মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছিলেন। রবিবার বারাসত জেলা হাসপাতাল থেকে তাঁকে ‘রেফার’ করা হয় এসএসকেএমে। শেষ পর্যন্ত কোনও উপায় না-দেখে পরিজনেরা তাঁকে নিয়ে গেলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
রান্না করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া মুর্শিদাবাদের ডোমকলের জামেনা বিবিকে গত মঙ্গলবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। রবিবার দুপুরে মেডিক্যালের দু’নম্বর গেটের এক পাশে মশারি টাঙিয়ে রাখা হয়েছে তাঁকে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন জামেনা। তাঁর দিদি নাসিমার অভিযোগ, ‘‘বোনের অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় ডোমকল হাসপাতাল থেকে কলকাতায় পাঠানো হয়। কিন্তু ডাক্তারদের ধর্মঘটের জন্য বোনকে এখনও ভর্তি করতে পারিনি।’’
কলকাতার বড় হাসপাতালে আশপাশের জেলা থেকে আসা গুরুতর রোগীর আত্মীয়েরা অনেকেই এসে ভর্তি হতে চিকিৎসকদের হাতে-পায়ে ধরছেন। রবিবারেও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মূল গেট বন্ধ ছিল। গেটের ভিতর থেকে জুনিয়র ডাক্তারেরা রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। গেটের বাইরে থাকা রোগী ও তাঁর আত্মীয়দের বলা হয়, ‘‘চিকিৎসকেরা আন্দোলন করছেন। আপনারা অন্য হাসপাতালে যান।’’ কিন্তু কোথায় যাবেন রোগীরা? জবাব মিলছে না।
জেলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতেও রোগীদের ভোগান্তির চিত্র একই রকম। চিকিৎসা না-পেয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের অনেককেই অন্যত্র নিয়ে চলে যাচ্ছেন আত্মীয়েরা। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের এক কর্মী বলছিলেন, ‘‘মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে গড়ে ১৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। শয্যা রয়েছে ৬০টি। তাই অনেকেই মেঝেতে, বারান্দায় থাকেন। এখন মাত্র ৪০ জন রোগী। অনেক শয্যাই ফাঁকা।’’ এখানকার অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডুও মানছেন, ‘‘গত কয়েক দিনে বিভিন্ন ওয়ার্ডেই রোগীর সংখ্যা কমেছে।’’
রবিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুষ্ঠু চিকিৎসার অভাবে গোবিন্দ ওঁরাও নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গোবিন্দবাবু পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর ভাই সান্টুস ওঁরাওয়ের দাবি, ‘‘চিকিৎসকেরা ঠিক মতো আসছেন না, তাই দাদার চিকিৎসা হল না।’’ হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাজদারের বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসক পর্যাপ্ত না-থাকায় অসুবিধা তো হচ্ছেই। তবে, গোবিন্দবাবুর ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখছি।’’ এ দিন মালদহ মেডিক্যাল কলেজের পরিষেবাও তলানিতে ঠেকেছে বলে অভিযোগ। রোগীও কমছে রোজই। কয়েক দিন আগেও হাসপাতালের মেল মেডিক্যাল ১ ও ২ ওয়ার্ডে এক শয্যায় অন্তত দু’জন করে রোগী ভর্তি
ছিলেন। এ দিন একাধিক শয্যায় রোগীই দেখা যায়নি। হাসপাতালের সুপার অমিত দাঁ অবশ্য বলেন, ‘‘পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে।’’ এই হাসপাতালে ডাক্তারির ছাত্রদের চতুর্থ বর্ষের অষ্টম সেমেস্টারের পরীক্ষা রয়েছে আগামী মঙ্গলবার। ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার দিন পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছেন। মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক রামতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা সত্যিই সম্ভব নয়। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করতেই পারছে না।’’
তবে, এর মধ্যেও কিছু জায়গায় পরিষেবাও দিচ্ছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ধর্নামঞ্চ ছেড়ে পালা করে গিয়ে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। রবিবার দুপুর থেকে জরুরি বিভাগের কাছে টেবিল-চেয়ার পেতে জুনিয়র ডাক্তারেরা ‘পরিষেবা কেন্দ্র’ খুলে রোগী দেখেছেন। ভর্তি করার প্রয়োজন হলে রোগীকে জরুরি বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছেন। দুপুরে তাঁরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে পোস্টারও লাগিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘গুজবে কান দেবেন না। হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, ব্লাড ব্যাঙ্ক, শিশু বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার চালু রয়েছে’। বাঁকুড়া মেডিক্যালে ধর্নামঞ্চের কাছে রক্তদান করেছেন ৫০ জনের বেশি জুনিয়র ডাক্তার। তাঁরা বলেন, ‘‘রক্তের সঙ্কট চলছে। তাই এই উদ্যোগ।’’
শনিবার রাত থেকেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে কয়েক জন চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন বলে দাবি জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের। রবিবার সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশাপাশি রাধারানি ওয়ার্ডেও জুনিয়র ডাক্তারদের (পিজিটি) একাংশ কাজ করেন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। বাঁকুড়া মেডিক্যালের আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরাও আজ, সোমবার থেকে ধর্নামঞ্চের কাছে সমান্তরাল আউটডোর পরিষেবা চালু করতে চলেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy