Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

চিকিৎসকদের মিছিলে অপর্ণা থেকে অনুপম

শুধু বহিরাগত তত্ত্ব নিয়েই স্লোগান নয়। ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই’, ‘এই লড়াই লড়বে কে, আমি-তুমি আবার কে,’ ‘পদবি দেখে আমরা চিকিৎসা করি না’র মতো স্লোগানও ছিল মিছিলে।

আমিও আছি: চিকিৎসক-নিগ্রহের প্রতিবাদে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল পর্যন্ত মিছিলে পা মেলালেন অপর্ণা সেন। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ

আমিও আছি: চিকিৎসক-নিগ্রহের প্রতিবাদে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল পর্যন্ত মিছিলে পা মেলালেন অপর্ণা সেন। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯ ০৩:৩১
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হোক কলরব’-এর ধাঁচেই ‘আমরা কারা? বহিরাগত’ স্লোগান তুলে পথে নামলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সঙ্গে পা মেলালেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, আইনজীবী থেকে শুরু করে অভিনেত্রী, গায়ক এবং অবশ্যই সাধারণ মানুষ। সকলের একটিই আবেদন: হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক, নার্স, কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুক রাজ্য সরকার।

শুধু বহিরাগত তত্ত্ব নিয়েই স্লোগান নয়। ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই’, ‘এই লড়াই লড়বে কে, আমি-তুমি আবার কে,’ ‘পদবি দেখে আমরা চিকিৎসা করি না’র মতো স্লোগানও ছিল মিছিলে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পথে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ঘেমেনেয়ে পা মিলিয়েছেন হাজার পাঁচেক মানুষ। স্লোগানও দিয়েছেন সমানে।

সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৬টা নাগাদ মিছিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছয়। হাসপাতালের গেট খুলে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানান সেখানকার নার্স, জুনিয়র ডাক্তার থেকে শুরু করে সিনিয়র চিকিৎসকেরাও। মরসুমের উষ্ণতম দিনে ঘর্মাক্ত মিছিলকারীদের হাতে তুলে দিয়েছেন গ্লাসভর্তি গ্লুকোজের জল। শুধু হাসপাতাল-চত্বর নয়, জরুরি বিভাগ, অন্তর্বিভাগের বিভিন্ন ভবনের তলায় দাঁড়িয়ে থাকা নার্স, জুনিয়র ডাক্তারদের হাততালি দিয়ে মিছিলে পা মেলানো লোকজনকে স্বাগত জানাতে দেখা গিয়েছে। ঘটনাচক্রে, মিছিল শুরু হওয়ার আগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেরই চতুর্থ বর্ষের ছাত্র অভিষেক সাহার মাথা ‘বহিরাগতদের’ ছোড়া ইটে জখম হয়েছে বলে এনআরএসের ধর্নামঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল।

মিছিল হাসপাতাল-চত্বরে প্রবেশ করার সময় অনেক জুনিয়র ডাক্তার সাদা পোশাকে, গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই লাইনে এক ডাক্তারি পড়ুয়ার সঙ্গে দেখা গেল দুই মহিলাকে। জানা গেল, তাঁদের এক জন ওই পড়ুয়ার মা, অন্য জন মাসিমা। দু’জনেই চিকিৎসক এবং ন্যাশনাল মেডিক্যালেরই প্রাক্তনী। চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে ছেলে এবং তাঁর বন্ধুদের পাশে পাশে হেঁটেছেন ওই দুই মহিলা।

মিছিলে পা মিলিয়েছেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন, সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র, গায়ক অনুপম রায় থেকে শুরু করে জয়া মিত্র, সুজাত ভদ্র, বিকাশ ভট্টাচার্যেরাও। এ দিন বেলার দিকে এনআরএসের ধর্নামঞ্চে যোগ দিয়েই বিকেলে মিছিলে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন অপর্ণা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নাট্যকর্মী কৌশিক সেন। পরে ধর্নামঞ্চে আসেন গায়ক রূপম ইসলাম, পরিচালক অনীক দত্ত। অনুপম বলেন, ‘‘পুরো ঘটনাটি দুঃখজনক। চিকিৎসকদের দাবি ন্যায্য। প্রশাসন এগিয়ে আসুক। বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হোক।’’ আর অপর্ণা বলেন, ‘‘আমি চিকিৎসক নই। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে মুখ্যমন্ত্রী আসুন। তা হলেই সমস্যা সমাধানের পথে যাবে বলে মনে করি।’’

মিছিল চলাকালীন এনআরএসের গাইনি গেটে একটি পথসভা হয়। সেখানে বিনায়ক সেন বলেন, ‘‘আগেও চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ফলে সব ক’টি বিষয় মাথায় রেখেই প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তার পাশাপাশি পরিকাঠামোর উন্নয়ন একান্ত জরুরি। নইলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদ করছি।’’

জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি সমর্থন করে মিছিলে যোগ দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (জুটা), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (কুটা) এবং নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি (স্কুল)-র সদস্যেরা।

আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি অচলাবস্থা থেকে কী ভাবে বেরিয়ে আসা যায়, তা-ও ছিল মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের আলোচ্য। মিছিলে প্রাথমিক ভাবে হাঁটার কথা ছিল জুনিয়র ডাক্তারদেরই। কিন্তু তাঁরা মিছিলে গেলে হাসপাতাল-চত্বর ফাঁকা হওয়ার সুযোগে এনআরএসে পরিষেবা চালু করে দেওয়া হতে পারে, এই আশঙ্কায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তাঁরা।

সাংবাদিক বৈঠকে আন্দোলনকারীদের যৌথ মঞ্চ দাবি জানায়: এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী যে-বিবৃতি দিয়েছেন, তা প্রত্যাহার করতে হবে। এনআরএসে চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনায় ধৃত পাঁচ জনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে হবে তথ্যপ্রমাণ-সহ। এনআরএস, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে চিকিৎসক-নিগ্রহে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে। সশস্ত্র রক্ষী নিয়োগ করতে হবে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে। স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামোর উন্নতি করতে হবে আলোচনার ভিত্তিতে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy