Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ফোনেই ফাইল নিয়ে আলোচনা চান মুখ্যসচিব

মুখ্যসচিব মনে করেন, কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দফতরের কর্তারা কোনও একটি ফাইল নিয়ে নবান্নে আলোচনা করতে এলে গোটা দিনটাই মাটি হয়ে যায়।

মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। ফাইল চিত্র।

মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২৫
Share: Save:

শাসনিক কাজের গতে বাঁধা ছকে আটকে থাকতে রাজি নন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তিনি আমলাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, বরাবরের রীতি মেনে তাঁর সঙ্গে ‘কল অন’ বা দেখা করার দরকার নেই। ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ ছাড়া সহকর্মী আমলাদের সঙ্গে দেখা করাও বন্ধ করে দেন নতুন মুখ্যসচিব। প্রশাসন পরিচালনায় তাঁর নতুন সংযোজন নীতিগত বিষয়ে ফোনেই আলোচনা সেরে নেওয়ার রীতি চালু করা।

মুখ্যসচিব মনে করেন, কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দফতরের কর্তারা কোনও একটি ফাইল নিয়ে নবান্নে আলোচনা করতে এলে গোটা দিনটাই মাটি হয়ে যায়। তার চেয়ে বরং টেলিফোনেই আলোচনা সেরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যসচিব বলেছেন, পাঁচ মিনিট ফোনে কথা বলে যেটা মিটিয়ে নেওয়া যায়, তার জন্য সারা দিন নবান্নে কাটানোর কোনও দরকার নেই।

নবান্নের খবর, বিভিন্ন দফতরের নীতি তৈরি সংক্রান্ত সব ফাইলই মুখ্যসচিবের কাছে আসে। ফাইলের বিষয়বস্তু দফতরের মন্ত্রী-সচিবের যুক্তিগ্রাহ্য মনে হলে মুখ্যসচিব তা মঞ্জুর করেন। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতির নেন তিনি। কোনও ফাইল নিয়ে দফতরের মতামতের সঙ্গে একমত না-হলে মুখ্যসচিব সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবের উদ্দেশে ফাইলে ‘প্লিজ় স্পিক’ বা ‘প্লিজ় ডিসকাস’ জাতীয় নোট দেন। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই প্রথা চলে আসছে।

প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, মুখ্যসচিব আলোচনার কথা লেখার পরে সেই ফাইল সচিবালয়ে তিন-চারটি স্তর পেরিয়ে ফিরে যায় সংশ্লিষ্ট দফতরে। ফাইলটি নিয়ে আরও এক বার আলোচনায় বসেন দফতরের সচিব। তার পরে আবার মুখ্যসচিবের সময় চান তিনি। সময় পাওয়া গেলে ফাইল নিয়ে আলোচনায় বসেন। তার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে।

বর্তমান মুখ্যসচিব পুরনো ধারা বদলে আলোচনার প্রয়োজন হলে ফাইলে ‘প্লিজ় ডিসকাস ওভার ফোন’ লিখে নোট দিচ্ছেন। কারণ, নবান্নে এখন সাত-আটটি দফতর চলে। ৫২টি দফতরের অধিকাংশই এখন নবান্নের বাইরে। সল্টলেক, রাজারহাট নিউ টাউনেও বহু অফিস রয়েছে। কেন এমন নোট দেওয়া হচ্ছে? ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, এই পদে আসার আগে তিনি স্বাস্থ্যসচিব ছিলেন। সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবন থেকে কোনও ফাইল নিয়ে নবান্নে আলোচনা করতে আসার ‘স্মৃতি’ তাঁর কাছে এখনও অমলিন। দূরে থাকা দফতরগুলির সচিবদের তিনি আর সেই অভিজ্ঞতা দিতে চান না।

প্রশাসন পরিচালনায় দফতর-ভিত্তিক প্রোটোকল মেনে চলায় জোর দিয়েছেন নতুন মুখ্যসচিব। বাংলার প্রশাসন বরাবরই মুখ্যসচিব-কেন্দ্রিক। সেই প্রথাও ভাঙতে চান রাজীব। নবান্নের খবর, পুলিশকর্তারা বিভিন্ন বিষয়ে মুখ্যসচিবের মতামত চেয়ে সরাসরি আসতে শুরু করেছিলেন। মুখ্যসচিব জানিয়ে দিয়েছেন, যদি তাঁর কাছে আসতেই হয়, স্বরাষ্ট্রসচিবের মাধ্যমে আসতে হবে। স্বরাষ্ট্র দফতর সিবিআই, ইডি-র বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত নানা স্পর্শকাতর ফাইল পাঠিয়ে দিচ্ছিল মুখ্যসচিবের কাছে। মুখ্যসচিব সেই ফাইলও স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে এখন বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সির প্রশ্নগুচ্ছের জবাব দিতে হচ্ছে স্বরাষ্ট্র দফতরকে। যদিও কোনও সিনিয়র অফিসার নয়, জবাব যাচ্ছে জুনিয়র আমলাদের স্বাক্ষরেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Chief Secretary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy