গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যের একটাই নাম, ‘বাংলা’। বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এ বার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ‘বাংলা’য় অনুমোদন দিলেই ‘পশ্চিমবঙ্গ’ এবং ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ পাল্টে যাবে।
এ দিন বিধানসভায় হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অধিবেশনে হাজির সকল বিধায়কের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘দু’বছর আগে আমরা সর্বসম্মত হয়ে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম, তিনটি ভাষায় রাজ্যের নাম হোক। কিন্তু, ওরা রাজি হয়নি। আমরা অনেক বার অনুরোধ করেছি। কিন্তু কেন্দ্র বলেছিল, একটা নামই হোক। তাই আজ সর্বসম্মত ভাবে রাজ্যের একটাই নাম করতে চাই, ‘বাংলা’। বাংলা থেকেই শুরু হোক বাংলা।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে বিরোধীরা কোনও আপত্তি জানায়নি। ফলে রাজ্যের নাম সর্বসম্মতিক্রমে ‘বাংলা’ই হচ্ছে।
বিরোধীরা ঐকমত্য হলেও, তাঁরা দু’বছর আগের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘দু’বছর আগেই আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছিলাম, একটাই নাম করুন। তখন করেননি। তা হলে আর এতটা সময় নষ্ট হত না।’’ একই সুর শোনা গেল সিপিআইয়ের প্রদীপ সাহার গলাতেও।
শুনুন সাধারণের মতামত
আরও পড়ুন: পুরসভায় নিয়োগে সার্ভিস কমিশন, পাশ বিল
২০১৬-র ২ অগস্ট রাজ্য মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাশ হয়েছিল, রাজ্যের নাম তিনটি ভাষায় হবে। বাংলা ভাষায় নাম হবে ‘বাংলা’, ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’ এবং হিন্দিতে ‘বঙ্গাল’— এটাই চেয়েছিল রাজ্য। তার পর বিধানসভায় সেই প্রস্তাব পাশ করিয়ে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সেই প্রস্তাব ফের ফিরিয়ে দেয় রাজ্যের কাছে। তারা জানায়, তিনটি নয়, একটাই নাম হতে হবে রাজ্যের। সেই মতোই এ দিন বিধানসভায় একটা নামেই প্রস্তাব পাশ হয়।
বাম আমলে শুরু হয়েছিল রাজ্যের নাম বদলের উদ্যোগ। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। ২০১১-য় ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলাতে। কিন্তু, সেই উদ্যোগেও ভাটা দেখা যায়। ২০১৬-য় জিতে এসেই ফের তিনি নামবদলে উৎসাহী হন তিনি।
আরও পড়ুন: রাজ্য দীর্ঘ মেয়াদে ভাড়া নেবে বিমান
রাজ্যের নাম সব ভাষাতেই ‘পশ্চিমবঙ্গ’ করার জন্য ১৯৯৯-এর ২০ জুলাই প্রস্তাব এসেছিল বিধানসভায়। আলোচনার মধ্যেই ঠিক হয়, পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে ‘বাংলা’ নামটা ভাল। সহমতের ভিত্তিতে তৎকালীন শাসক বাম ও বিরোধী কংগ্রেস-তৃণমূলের তরফে প্রস্তাবের উপরে সংশোধনী আনা হয়। পরে সেই উদ্যোগ কোথাও থমকে যায়। প্রায় ১৭ বছর পর উদ্যোগী হয়ে মাঠে নামেন মমতা।
কিন্তু, সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর তিন ভাষায় রাজ্যের নাম নিয়ে বিরোধীরা আপত্তি তোলে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী সে সময় প্রশ্ন তোলেন, একই রাজ্যের নাম বাংলায় ‘বাংলা’, ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’ এবং হিন্দিতে ‘বঙ্গাল’ কী ভাবে হয়? সুজনবাবু বলেছিলেন, ‘‘আমি বাংলায় সুজন বলে ইংরেজিতে তো গুডম্যান চক্রবর্তী লিখি না। বেচারাম মান্নাকে ইংরেজিতে কেউ সেল্সম্যান মান্না বলে না!’’ মমতা সেই যুক্তি মেনে নেননি। এবং আলাদা আলাদা ভাষায় আলাদা আলাদা নামের বিরোধিতা করে বামেদের আনা সংশোধনী ১৮৯-৩১ ভোটে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। আর মূল প্রস্তাব পাশের সময়ে কংগ্রেস ওয়াক আউট করে বাইরে, বাম বিধায়কেরাও সংশোধনীর পরে প্রায় সকলেই বেরিয়ে গিয়েছেন। সেই অর্থে ২৯৪ জনের বিধানসভায় সর্বসম্মত ‘বাংলা’, ‘বঙ্গাল’, ‘বেঙ্গল’ প্রস্তাব পাশ হয়নি। প্রস্তাব চলে যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। সেখান থেকে ফেরত আসার পর মমতা এ বার সর্বসম্মতির ভিত্তিতেই ‘বাংলা’ করতে চাইছেন।
দু’বছর আগে তাদের প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়া বাম এবং ওয়াক আউট করা কংগ্রেসের তাই এ বার আর আপত্তি করার কিছু নেই। কারণ, এক অর্থে তাদের প্রস্তাবই পাশ হয়েছে এ দিন বিধানসভায়। কেন্দ্রের সম্মতি মিললে রাজ্যের একটাই নাম হবে, ‘বাংলা’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy