Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Panchayat Election

চ্যালেঞ্জের মুখে অভিষেক, দলের সর্ব স্তরে কি পৌঁছবে তৃণমূল সেনাপতির বার্তা?

চ্যালেঞ্জের মুখে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পঞ্চায়েতে ‘অবাধ এবং সুষ্ঠু’ নির্বাচনের বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর চ্যালেঞ্জ সেই বার্তা দলের সর্ব স্তরে পৌঁছে দেওয়ার।

পঞ্চায়েতে ‘অবাধ এবং সুষ্ঠু’ নির্বাচনের বার্তা দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

পঞ্চায়েতে ‘অবাধ এবং সুষ্ঠু’ নির্বাচনের বার্তা দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:০২
Share: Save:

রাজ্যে তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল সরকারের সামনে আর একটা পঞ্চায়েত ভোট। সেই ভোটে কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখে শাসকদল। চ্যালেঞ্জের মুখে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পঞ্চায়েতে ‘অবাধ এবং সুষ্ঠু’ নির্বাচনের বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর চ্যালেঞ্জ সেই বার্তা দলের সর্ব স্তরে পৌঁছে দেওয়ার। পঞ্চায়েত স্তরে বিভিন্ন প্রকল্পে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে বিজেপি এবং বামশিবির। উঠছে ভোটের আগে সন্ত্রাসের অভিযোগও। তার সঙ্গেই আছে নিয়োগ-দুর্নীতি এবং ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ। তৃণমূলের নেতারাই একান্ত আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, লড়াই খুব সহজ নয়।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত চূড়ান্ত তালিকায় দেখা যাচ্ছে, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে এ বার আসন বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার। গত বার গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোট হয়েছিল মোট ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসনে। এ বার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬২ হাজার ৪০৪। গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ২০১৮ সালের তুলনায় দু’টি কমে হয়েছে ৩ হাজার ২০৫। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদেও বেড়েছে আসন। পঞ্চায়েত সমিতির সংখ্যা দু’টি বেড়ে হয়েছে ৩৩২টি। জেলা পরিষদ স্তরে ৮২৫ থেকে ১০৩টি আসন বেড়ে হয়েছে ৯২৮টি।

জনপ্রিয় ধারণা হল, পঞ্চায়েতে আসনবৃদ্ধি শাসকদলের পক্ষে ‘স্বস্তির’। তাতে আসন নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে কাড়াকাড়ি কমবে। পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় স্তরে ‘গোঁজ’ প্রার্থী দেওয়ার প্রবণতা প্রবল। অভিষেক বার্তা দিয়েছেন, জনতার ‘শংসাপত্র’ ছাড়া কাউকে প্রার্থী করা হবে না পঞ্চায়েতে। সেই কারণেই অনেকের বাদ পড়ার সম্ভাবনা। আবার সেই বাদ-পড়াদেরই ‘গোঁজ’ হয়ে দাঁড়ানোরও প্রবণতা থাকবে।

‘কাঁটা’ আরও আছে। সম্প্রতি একের পর এক দুর্নীতি-কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতা এবং মন্ত্রীদের। জেলে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডলও। এর জেরে তৃণমূল বিপাকে পড়বে বলে আশা করতে চাইছে বিরোধীরা। আবার তৃণমূলের আশা, পঞ্চায়েত এবং পুরসভার মতো স্থানীয় স্তরের ভোটে এর প্রভাব পড়ে না। এ বারেও পড়বে না।

তবে বিরোধীরা ‘স্থানীয়’ বিষয় নিয়েও শাসকের বিরুদ্ধ প্রচার করবে। পঞ্চায়েত স্তরে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা ইত্যাদি নানা প্রকল্পে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছে তারা। পাশাপাশি, ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগ।

তৃণমূল পাল্টা বলছে, নানা গ্রামীণ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার বঞ্চনা করছে। তবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা দিতে রাজি হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভোটের আগে ওই প্রকল্পের টাকা কর্মীদের কাছে পৌঁছলে তার ফল পাওয়ার আশা করছে শাসক শিবির। আর বিরোধী বিজেপি প্রচার করতে চাইছে, রাজ্যের জন্য আসলে ‘ভাবছে’ কেন্দ্র।

পঞ্চায়েতে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিনটি স্তরে সদস্যদের কাজের সমস্ত খতিয়ান নিতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সম্প্রতি কাঁথিতে জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে আচমকা গাড়ি থেকে নেমে সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনতে গ্রামে ঢুকে পড়েছিলেন অভিষেক। যার জেরে তিন জনকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। কারণ, ওই তিন জনের বিরুদ্ধে কাজে গাফিলতির অভিযোগ ছিল। আবার মমতা গ্রামে গ্রামে ঢুকে পড়ছেন ‘ঘরের মেয়ে’ হয়ে। কোথাও মাছের ঝোল-ভাত খাচ্ছেন, কোথাও চপ বিলি করছেন।

তবে বিজেপি ‘সন্ত্রাস’-কেই পঞ্চায়েতে তাদের প্রচারে ‘পাখির চোখ’ করতে চাইছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই বিরোধীদের উপর ‘সন্ত্রাস’ চালানোর অভিযোগ তুলছে তারা। সম্প্রতি পূ্র্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ-কে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি তুলেছে তারা।

ভগবানপুরের বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতির অভিযোগ, ‘‘জেলার মধ্যে ভগবানপুর, খেজুরি, পটাশপুর, দেশপ্রাণ ইত্যাদি এলাকায় বোমা-বারুদের কারখানা তৈরি করেছে তৃণমূল। সম্প্রতি ভূপতিনগরে তৃণমূল নেতার বাড়িতে মজুত রাখা বোমা বিস্ফোরণ, খেজুরিতে তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ বা দেশপ্রাণ ব্লকে তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ তারই ফল।’’

তৃণমূল এবং বিজেপিকে এক সারিতে বসিয়ে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির বক্তব্য, ‘‘গায়ের জোরে ক্ষমতা ধরে রাখতে তৃণমূল বোমা মজুত করছে জেলা জুড়ে। একের পর এক বিস্ফোরণে মানুষের মৃত্যু তারই প্রমাণ। তৃণমূলের থেকে এক ধাপ উপরে রয়েছে বিজেপি। ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ে বিজেপিও তৃণমূলেরই দোসর।’’ পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরে উত্তেজনার পারদ আরও চড়বে বলেই আশঙ্কা নিরঞ্জনের।

রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা অখিল গিরির ব্যাখ্যা, ‘‘যারা এক সময় সিপিএমের হার্মাদ ছিল, তারাই এখন দল বদলে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। জেলার বহু জায়গায় বোমা-বন্দুকের রাজনীতি করছে বিজেপি। এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিরোধ গড়ব।’’

এর মধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি থানার দক্ষিণ গাজিপুর পঞ্চায়েতের ছামনাবুনির দুই কিশোর তৌহিদুল পাইক এবং ফরিদুল পাইক জখম হয়েছে কালভার্টের নীচে পড়ে থাকা বোমাকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে। উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁর বকচোরার ৯ বছরের শিশু ঝুমা খাতুন মামারবাড়ি গিয়ে মাচায় রাখা ‘নারকেল’ হাতে তুলে নিয়েছিল। আচমকা তা ফেটে মারা যায় দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রী। ঝুমার মামা আবু হোসেন গাইন এলাকায় ‘তৃণমূলের লোক’ হিসাবেই পরিচিত। যদিও আবুর তৃণমূল যোগের কথা অস্বীকার করেছেন জেলার জোড়াফুল শিবিরের নেতারা।

পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছামনাবুনির মতো এক সুতোয় গাঁথা উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়াও। পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। আপাতদৃষ্টিতে সম্পর্ক নেই রাজনীতির সঙ্গেও। ভাটপাড়ার বিয়েবাড়িতে মাইক বাজানো নিয়ে বচসার জেরে বোমাবাজি হয়েছিল। হাতে এবং গলায় বোমার স্প্লিন্টার ঢুকে জখম হন চার জন। বোমার স্প্লিন্টারের ক্ষত নিয়ে তাদের মধ্যে এক কিশোর টিভি সাংবাদিককে প্রশ্ন করছিল, ‘‘আমি আবার হাঁটতে পারব?’’

যে প্রশ্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে সম্ভবত সারা রাজ্যের— বাংলার রাজনীতি হাঁটতে পারবে তো? (শেষ)

লেখা: কণাদ মুখোপাধ্যায়। তথ্য সংকলন: সৈকত ঘোষ, অমিতা দত্ত, সুমন মণ্ডল, মৌসুমী খাঁড়া, প্রণয় ঘোষ এবং তরুণিমা মণ্ডল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy