Advertisement
E-Paper

টাকা আত্মসাতের প্রতিবাদেই বরুণ খুন, দাবি দিদির

রুণের পরিবার সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, রাজ্যে পালাবদলের বছরই এই খাল ও দু’টি নদী সংস্কারে ৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, সংস্কারকাজ শুরু হলেও নিয়ম মেনে হচ্ছিল না।

ছবিতে বরুণ বিশ্বাস।

ছবিতে বরুণ বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:০৫
Share
Save

এগারো বছর আগে যে অভিযোগ তুলেছিলেন সুটিয়ার নিহত প্রতিবাদী শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের বাড়ির লোকজন, ফের একই অভিযোগে আবার তাঁরা সরব হয়েছেন। অভিযোগ, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মদতেই খুন হন বরুণ। তাঁদের আরও অভিযোগ, জেলার গাইঘাটায় বলদেঘাটা খাল এবং ইছামতী ও যমুনা নদী সংস্কারের টাকা নয়ছয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই জ্যোতিপ্রিয়ের ‘চক্ষুশূল’ হয়েছিলেন বরুণ। যদিও শাসক দলের তরফে ওই ঘটনার পরেই যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছিল।

বরুণের পরিবার সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, রাজ্যে পালাবদলের বছরই এই খাল ও দু’টি নদী সংস্কারে ৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, সংস্কারকাজ শুরু হলেও নিয়ম মেনে হচ্ছিল না। তখন আপত্তি তুলে বরুণ কাজে বাধা দেন। তাঁর অভিযোগ, তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী তথা গাইঘাটার প্রাক্তন বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মদতে তৃণমূলের লোকেরা ওই সরকারি টাকা আত্মসাৎ করছে। তার পরেই ২০১২ সালের ৫ জুলাই গোবরডাঙা স্টেশনের সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়ে যান বরুণ।

এই বলদেঘাটা খাল সংস্কার নিয়েই উঠেছিল বিতর্ক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

এই বলদেঘাটা খাল সংস্কার নিয়েই উঠেছিল বিতর্ক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সেই খুনের মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এখন বরুণের বাড়ির লোকেরা পুনর্তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন। বরুণের দিদি প্রমীলা রায় বিশ্বাস বলেন, ‘‘নদী-খাল সংস্কারের কাজ ঠিক মতো না করে ওই সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন তৃণমূলের লোকেরা। ভাই প্রতিবাদ করেছিল। তাই জ্যোতিপ্রিয়র মদতে ভাইকে খুন করা হয়।’’ ওই সময়ে বরুণের সঙ্গে আন্দোলনে সামিল ছিলেন বর্তমানে একটি মানবাধিকার সংগঠনের চাঁদপাড়া শাখার সভাপতি নন্দদুলাল দাস। তিনি বলেন, ‘‘বরুণের নেতৃত্ব আমরা নদী সংস্কারের কাজে বাধা দিয়েছিলাম। বরুণের জন্য জ্যোতিপ্রিয়রা নদী-খাল সংস্কারের টাকা পুরো আত্মসাৎ করতে পারেননি। সেই আক্রোশেই তাঁকে খুন করা হয়েছিল। তার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’’ এ বিষয়ে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের দাবি, ‘‘বরুণের পরিবার এবং নন্দদুলাল রাজনৈতিক স্বার্থে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে কালিমালিপ্ত করতে এ সব বলছেন। আগেও বলেছেন।’’

২০০০ সালে গাইঘাটা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। পরের বছরও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী, কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনের বাংলার শিক্ষক বরুণ তখন নদী-খাল সংস্কার নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ২০০৪ সালের ২২ অক্টোবর বরুণ রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে চিঠিও দিয়েছিলেন। সেই চিঠির ফোটোকপি আজও সযত্নে তুলে রেখেছেন বরুণের দিদি। তিনি জানান, চিঠিতে ভাই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, এই এলাকায় বন্যা একটি বাৎসরিক বিপর্যয়। সেই সূত্রেই দুই নদী ও একটি খাল ও গাজনা বাওড় সংস্কারের আর্জিও জানান। সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের (২০০২) প্রতিবাদে তৈরি হওয়া মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর বরুণ তৎকালীন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে দেখা করেও নদী-খাল সংস্কারের দাবি করেছিলেন। তার পরেই সরকার ওই খাতে ৩৮ কোটি টাকা বরাদ করে।’’

সুটিয়াবাসী জানান, বলদেঘাটা খাল সেই সময় তাঁদের দুঃখের কারণ হয়ে উঠেছিল। ওই টাকা বরাদ্দ হওয়ায় আশার বুক বেঁধেছিলেন তাঁরা। প্রতিবাদী মঞ্চের দাবি, নদী-খাল সংস্কারের কাজ শুরু হতেই কাজের ধরন নিয়ে বরুণ প্রতিবাদ জানান।

বলদেঘাটা খালের আজও সংস্কার হয়নি। এই ১১ বছরে বন্যা হয়নি, এই যা রক্ষে! খালের পাশের এক বৃদ্ধ দোকানি বলেন, ‘‘এই খাল সংস্কারের কাজ নিয়ে গোলমালের জেরেই বরুণকে চলে যেতে হল। নেতা-মন্ত্রীদের স্বার্থে ঘা লেগেছিল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Barun Biswas Jyotipriya Mallick

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}