মাঠ ফাঁকা। পানাগড়ের বিরুডিহায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
মাটি উৎসবের মাঠ থেকে বিলকুল সাফ ৮৩টি স্টল।
ইট, টালি, শালের খুঁটি, দরমার বেড়া থেকে পানীয় জলের ট্যাপনিরাপত্তাহীন অবস্থায় পড়ে থাকা মেলার মাঠ থেকে দুষ্কৃতীরা কিছুই নিয়ে যেতে বাকি রাখেনি। পানাগড়ের কাছে বিরুডিহায় মাটি উৎসবের মাঠে এখন শুধু পড়ে রয়েছে দু’চারটি আধলা ইট।
টুকটাক চুরির খবর এলাকায় ছিলই। কিন্তু তা আটকাতে প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্টলগুলি যারা তৈরি করেছিল, সেই পূর্ত দফতরের কর্তারা শনিবার খবর পান, মাঠ পুরো ফাঁকা। টনক নড়ে তখন। কাঁকসা থানায় অভিযোগ করা হয়। পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানা, উৎসব শেষে স্টলের নির্মাণসামগ্রী পূর্ত দফতরের নিলাম করার কথা ছিল। কেন তা হয়নি তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পানাগড়ের বিরুডিহার লালবাবা আশ্রম মাঠে মাটি উৎসব করার কথা ঘোষণা করেন। এ বছরও সেখানেই মাটি উৎসব আয়োজিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে গিয়েছেন, বরাবর এই মাঠেই মাটি উৎসব হবে। উৎসবের জন্য প্রতি বছরই ইট, কাঠ, টালি, দরমা দিয়ে স্টল বানায় পূর্ত দফতর। নানা সরকারি দফতর ও বেসরকারি সংস্থা স্টলগুলিতে পসরা সাজিয়ে বসে। এ বার ৮৩টি স্টল তৈরি হয়েছিল। পূর্ত দফতরের হিসেব অনুযায়ী, স্টলগুলি তৈরিতে প্রায় ৮৬ হাজার ইট, ৮৬ হাজার টালি, প্রচুর দরমা, বাঁশ, শালের খুঁটি, টিন লেগেছিল। এ ছাড়া পানীয় জলের জন্য বসানো হয়েছিল কিছু অস্থায়ী ট্যাপকল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত কয়েক দিন ধরে এক এক করে সাফ হতে থাকে স্টলগুলি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার রাত নাগাদ মাঠ প্রায় ফাঁকা হয়ে গিয়েছে খবর পেয়ে টনক নড়ে পূর্ত দফতরের। দফতরের দুর্গাপুর বিভাগের সহকারী বাস্তুকার অসিত সাহা বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।”
এই চুরির পিছনে তৃণমূলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কাঁকসার নেতা বীরেশ্বর মণ্ডলের কথায়, “সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের ঘর লুঠ করতে করতে হাত পেকে গিয়েছে ওদের। তখন কেউ আটকায়নি। এ বার দিদির সাধের ঘরও ছাড়ছে না। এটা তো হওয়ারই ছিল।” তৃণমূলের দাবি, দলের কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকলে তার দায় দলের নয়। দলের অন্যতম জেলা (শিল্পাঞ্চল) সম্পাদক তথা প্রাক্তন কাঁকসা ব্লক সভাপতি দেবদাস বক্সী বলেন, “পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।” পুলিশ জানায়, ইতিমধ্যে বিরুডিহা গ্রামের এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দ্রুত দুষ্কৃতীদের ধরে ফেলা হবে।
পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানান, লালবাবা আশ্রম মাঠটিকে এখন আর মাটি উৎসবের মাঠ বলে চেনার উপায় নেই। সার দিয়ে থাকা স্টলগুলির একটিও নেই। ওই আধিকারিকের দাবি, উৎসব শেষে স্টলগুলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাঁদের দফতরের তরফে জানানো হয়, পাহারা দেওয়ার মতো লোকবল তাঁদের নেই। ও দিকে আবার পুলিশ জানায়, টানা পাহারা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত কর্মী তাদেরও নেই। পূর্ত দফতরের ওই আধিকারিক বলেন, “সমাধান সূত্র আর বেরোয়নি। ফলে, কার্যত অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল স্টলগুলি। সেই সুযোগ নিয়েছে দুষ্কৃতীরা।”
জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “উৎসব শেষের পরে স্টলগুলির নির্মাণ সামগ্রী নিলাম করার কথা ছিল পূর্ত দফতরের। কেন তা হয়নি, খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy