অভিযোগকারিণীর পোশাক ও দেহরসে বীর্যের নমুনা ফরেন্সিক রিপোর্টে আগেই মিলেছিল। শনিবার সাক্ষ্য দিতে এসে ওই রিপোর্টের অফিস কপির প্রত্যায়িত প্রতিলিপিটি তদন্তকারী অফিসারের হাতে দেওয়া হয়েছিল বলে জানালেন কলকাতার বেলগাছিয়াতে অবস্থিত রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির সহ-অধিকর্তা (বায়োলজি ডিভিশন) শিপ্রা রায়। কাটোয়া আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক বিচারক পরেশচন্দ্র কর্মকারের এজলাসে শনিবার সাক্ষ্য দেন শিপ্রাদেবী।
২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কাটোয়ামুখী কাটোয়া আমোদপুর ছোট রেলে (এখন ব্রডগেজের কাজ চলছে) মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এক বিধবা মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। মামলার অন্য সাক্ষীরা আদালতকে জানিয়েছিলেন, ওই দিন সন্ধ্যায় গার্ডের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে পাঁচুন্দি ও গোমাই স্টেশনের মাঝে ট্রেন দাঁড় করায় দুষ্কৃতীরা। ডাকাতি করার উদ্দেশে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ট্রেনে উঠেছিল তারা। সেই সময়েই ট্রেন থেকে নামিয়ে রেললাইনের পাশে ঝোপে নিয়ে গিয়ে ওই মহিলাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগকারিণী ও তাঁর মেয়ে অভিযুক্তদের জেলে ও আদালতে শনাক্তও করেন। এদের মধ্যে দু’জন পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। বাকি ছয় অভিযুক্তদের মধ্যে চারজন জেল হেফাজতে রয়েছেন। একজন জামিনে ছাড়া রয়েছেন। আর এক অভিযুক্ত কায়েশ শেখ এখনও অধরা। মা-মেয়ে ছাড়াও ওই ট্রেনের গার্ড, চালক, সহকারী চালক, স্থানীয় তৃণমূল নেতা, কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ও অভিযোগকারিণীর ভাসুর-সহ কয়েকজন যাত্রীও ইতিমধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এ দিন সাক্ষী কাঠগড়ায় ওঠার আগেই সরকারি আইনজীবী কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিযুক্তদের অন্যতম আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায়। কাঞ্চনবাবু আদালতের কাছে অভিযোগকারিণীর পোশাক ও দেহরসে যে বীর্যের নমুনা মিলেছে তার রিপোর্ট জমা দেন। তখন ধীরেন্দ্রনাথবাবু আপত্তি তুলে আদালতকে বলেন, ‘রিপোর্টের প্রতিলিপি আদালত জমা নিতে পারেন না’। দুই আইনজীবীর মধ্যে কিছুক্ষণ তর্কাতর্কির পর বিচারক ওই রিপোর্টটি জমা নেন। বস্তুত, মূল রিপোর্টটি কাটোয়া জিআরপির তৎকালীন ওসি বাসুদেব হাজরা গত বছরের জানুয়ারি মাসে আদালতে নিজে এসে জমা দেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ওই মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নথিটি আদালত থেকে উধাও হয়ে যায়। সরকারি আইনজীবী কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় বেশ কয়েকবার আদালতকে চিঠি লিখে ফরেন্সিক রিপোর্টটি খুঁজে পাওয়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। পরে আদালত কেতুগ্রাম থানার তদন্তকারী অফিসার ও ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে চিঠি দিয়ে ফের রিপোর্টটি আনানোর ব্যবস্থা করেন। তবে এ দিন এজলাসে সরকারি ও অভিযুক্ত আইনজীবীর মধ্যে তর্ক চলাকালীন জানা যায় রিপোর্টটি এখনও আদালত খুঁজে পায়নি। সরকারী আইনজীবী এ নিয়ে তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেন। আইনজীবীদের একাংশের ক্ষোভ, এ রকম গুরুত্বপূর্ণ নথি আদালত থেকে উধাও হয়ে গেল। অথচ ন্যূনতম তদন্ত করে বিষয়টি উদ্ধারের চেষ্টা করা হল না।
এ দিন সাক্ষী শিপ্রাদেবী আদালতকে জানান, কাটোয়া আদালতের এসিজেএমের নির্দেশে ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে দুটি প্যাকেট গিয়েছিল। একটি প্যাকেটে অভিযোগকারিণীর পোশাক ও অন্যটিতে দেহরস ছিল। বেলগাছিয়া রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে অভিযোগকারিণীর সায়া ও দেহরস পরীক্ষা করে বীর্যের নমুনা মিলেছিল বলে আদালতে জানান শিপ্রাদেবী। জেরার সময় ওই রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠলে শিপ্রাদেবী আদালতকে বলেন, দ্বিতীয়বার যে রিপোর্টটি পাঠানো হয়েছে, তা অফিস কপির প্রত্যায়িত প্রতিলিপি। এই মামলার তদন্তকারী অফিসারের হাত দিয়ে তা পাঠানো হয়েছে। জেরায় শিপ্রাদেবী জানান, প্রথমবার ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট সাধারণ ডাকে পাঠানো হয়েছিল। ওই দিন তিনি অভিযোগকারিণীর পোশাক ও দেহরসের প্যাকেট আদালতে শনাক্ত করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগকারিণীর পোশাক ও দেহরসে বীর্যের নমুনা মেলার পর তা পরীক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ইনস্টিটিউট অফ্ সেরোলজিস্ট’য়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, পরিমাণ কম হওয়ার জন্য অভিযুক্তদের বীর্যের নমুনার সঙ্গে তা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সরকারি আইনজীবী জানান, আগামী ৫ জুলাই আদালতে এসে ওই অভিযোগকারিণী তার পোশাক বিচারকের সামনে শনাক্ত করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy