জমির মালিকানা নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় পানাগড় থেকে সরতে চলেছে মাটি উৎসব। আগামী বছর থেকে এই উৎসব হতে পারে বর্ধমানের সাধনপুরে। দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী পানাগড়ের বিরুডিহায় মাটি উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে বলে গিয়েছেন, সাধনপুরে স্থায়ী কাঠামো তৈরি হবে। বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই কাঠামোতেই পরের বছর থেকে মাটি উৎসব হবে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রণব বিশ্বাস বলেন, “জটিলতা এড়াতে বিরুডিহা থেকে মাটি উৎসব সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
মাটি উৎসব শুরু হয় ২০১৩ থেকে। কিন্তু বিরুডিহায় লালবাবা আশ্রম লাগোয়া যে মাঠে এই উৎসব হয় তা পুরোটা সরকারি জায়গা নয়। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের নথি অনুযায়ী, জমির কিছুটা বন বিভাগের। বাকি অংশ লালবাবা আশ্রম ট্রাস্টের। গত বার মাটি উৎসবের উদ্বোধনে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, এই মাঠেই স্থায়ী কাঠামো তৈরি হবে। বছর-বছর উৎসব হবে এখানেই। কিন্তু এই বছর উৎসবের ব্যবস্থাপনার সময়ে প্রশাসন জানতে পারে, ট্রাস্টের জমির মালিকানা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা রুজু হয়েছে। বাদী-বিবাদী দু’পক্ষের অনুমতি নিয়ে এ বছর উৎসব হয়েছে। কিন্তু জটিলতা এড়াতে সামনের বছর থেকে উৎসব এখান থেকে সরানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, ওই ট্রাস্টের প্রয়াত এক সদস্যের পরিবারের কাছ থেকে ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ পান দুর্গাপুরের বাসিন্দা সুব্রত মল্লিক। গত বছর তিনি জমির মালিকানার বৈধতা নিয়ে ট্রাস্টের বিরুদ্ধে মামলা করেন কলকাতা হাইকোর্টে। মার্চে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জমির উপরে ‘স্থিতাবস্থা’ জারি করে। এ বার মাটি উৎসব আয়োজন করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে জেলা প্রশাসন। দু’পক্ষের কাছে ‘নো অবজেকশন’ চেয়ে আর্জি জানানো হয়। দু’পক্ষ রাজি হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরো ঘটনার কথা জানানো হয় রাজ্য সরকারকে। এর পরেই বিরুডিহা থেকে উৎসব সরানোর পরিকল্পনা হয়। বিকল্প জায়গা বাছার নির্দেশ দেয় রাজ্য। বর্ধমান শহরের অদূরে সাধনপুরের কৃষি খামারে অব্যবহৃত জমিতে মাটি উৎসবের স্থায়ী প্রাঙ্গণ গড়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্তের কথা জানায় জেলা প্রশাসন। দিন কয়েক আগে কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ কৃষি খামার ঘুরে দেখেন। গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মাটি উৎসবের মঞ্চ থেকে সাধনপুরেই স্থায়ী প্রাঙ্গণ গড়ার কথা জানান। তিনি বলেন, “মাটি উৎসব আরও ভাল হোক। এই উৎসবকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বর্ধমানের সাধনপুরে সে জন্য স্থায়ী কাঠামো ‘মাটি তীর্থ’ গড়া হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমানে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য ‘কৃষি কথা’ উদ্যোগের কথাও জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বর্ধমানের সাই স্টেডিয়ামে তিন দিনের এই অনুষ্ঠান হবে। দক্ষিণবঙ্গের ১২টি জেলা থেকে কৃষকেরা আসবেন। তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নিজের কথায়, “৯ ফেব্রুয়ারি আমি বর্ধমানে আসব। সে দিন কৃষকবন্ধুদের কথা শুনব।”
বিরুডিহা থেকে মাটি উৎসব সরানোর সিদ্ধান্তে আদৌ অবাক নন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, আগে থেকে খোঁজখবর নিলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হত না। অতীতে তাঁরা ওই মাঠের পুরোটাই আশ্রমের জায়গা বলে জানতেন। পরে তাঁরা জানতে পারেন, কিছুটা জমি বন বিভাগের নামে নথিবদ্ধ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডল বলেন, “সবাই জানে, ওটা সরকারি জায়গা নয়। তবু কেন সেখানে স্থায়ী কাঠামো গড়ার কথা ভাবা হয়েছিল, সেটাই আশ্চর্যের। নানা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই এই সরকারের বিভ্রান্তি ধরা পড়ে। ছোট হলেও এই ঘটনা তার একটি উদাহরণ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy