চলছে ক্লাস।—নিজস্ব চিত্র।
স্কুলের চৌহদ্দিতে ঢুকতেই দেখা গেল একদল ছাত্রী ‘ইয়োই’, ‘রে’ প্রভৃতি শব্ধধ্বনি উচ্চারণ করছেন গভীর মনোনিবেশের সঙ্গে। খানিকটা ঠাহর করতেই বিভিন্ন কসরত দেখে বোঝা গেল দুর্গাপুরের নেপালিপাড়া হিন্দি স্কুলের ছাত্রীরা প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ক্যারাটে শিখছেন। হঠাত্ করে কেন এমন উদ্যোগ? স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ক্রমে বেড়ে চলা নারী নির্যাতনের যুগে স্কুলের মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতেই এই ‘বিশেষ’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নেপালিপাড়া হিন্দি হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। তাঁদের লক্ষ্য, সবাইকে কমবেশি ক্যারাটেতে পারদশর্ীর্ করে তোলা। তবে একমাত্র ইচ্ছুক ছাত্রীদের জন্যই ওই ক্যারাটের ক্লাস। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কলিমুল হক বলেন, “ক্যারাটে প্রশিক্ষণ শুরু করার পর থেকে ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। প্রথম দিনেই প্রায় দেড়শো ছাত্রী নাম লিখিয়েছে।” ছাত্রীদের ক্যারাটের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় ব্ল্যাক বেল্ট বুদ্ধদেব ঘোষ। তবে এই ক্যারাটে শিক্ষার জন্য কোনওভাবেই যাতে পড়াশোনার ক্ষতি যাতে না হয়, সে জন্য শনিবার স্কুল ছুটির পরেই তা করা হবে বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত ক্যরাটে একটি অতি প্রাচীন মার্শাল আর্ট বলেই বিশেষজ্ঞদের সূত্রে জানা গিয়েছে। বর্তমান জাপানের য়ুুকু প্রদেশের রাজাদের আগ্রহে এবং চিনা মার্শাল আর্টের প্রভাবেই ত্রয়োদশ শতকের মাঝামাঝি ক্যারাটের জন্ম হয়। আত্মরক্ষার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতার কারণেও ক্যারাটের গুরুত্ব অপরিসীম বলে জানা যায়। প্রাচীন বৌদ্ধ দর্শনে ক্যরাটের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “কোনও ব্যক্তিকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতেও এই বিশেষ মার্শাল আর্টটি সাহায্য করে।” বিনোদনের জগতেও ব্রুস লি, জ্যাকি চ্যান’দের দৌলতে ক্যারাটে বেশ জনপ্রিয়।
স্কুল ছাত্রীদের মধ্যেও ক্যারাটে ক্লাস নিয়ে উত্সাহ যে যথেষ্টই তা বেশ বোঝা গেল ষষ্ঠ শ্রেণির চাঁদনি প্রসাদ, খুসবু সিংহ বা নবম শ্রেণির মমতা কুমারী, একাদশ শ্রেণির কাজল মোদীদের সঙ্গে কথা বলে। তাদের কথায়, “আলাদা করে আমাদের পক্ষে কোথাও গিয়ে ক্যারাটে শেখা সম্ভব নয়। তাই স্কুলে হবে শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছি।” ক্যারাটে ক্লাস নিয়ে যথেষ্ট উত্সাহী প্রশিক্ষক বুদ্ধদেববাবুও, “সবারই কিছু না কিছু আত্মরক্ষার উপায় জেনে রাখা দরকার। নিজে বিপদে পড়লে তো বটেই, আশপাশের কোনও মহিলা বিপদে পড়লেও এগিয়ে যাওয়ার সাহস মিলবে। স্কুল এমন উদ্যোগ নেওয়াই আমি খুশি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy