Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

কড়ি ফেললেও মেলে না স্বাস্থ্য পরিষেবা

সরকারি স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা তো নিধিরাম বটেই বেসরকারি ক্ষেত্রেও কমবেশি একই হাল মন্তেশ্বরে। কড়ি ফেললেই যে তেল মিলবে এমন কথা মোটেও ভাবতে পারেন না এ ব্লকের বাসিন্দারা। ব্লকে রয়েছে একটিই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আরও দু’একটা নাম কা ওয়াস্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্র যে নেই তা নয়, তবে কোনওটা বন্ধ, কোনওটা চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ হওয়ার মুখে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে বেসরকারি পরিষেবায় ঝুঁকছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেখানেও বহু অভিযোগ, না পাওয়া।

ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ভাড়ার গাড়ি। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ভাড়ার গাড়ি। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:২৯
Share: Save:

সরকারি স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা তো নিধিরাম বটেই বেসরকারি ক্ষেত্রেও কমবেশি একই হাল মন্তেশ্বরে। কড়ি ফেললেই যে তেল মিলবে এমন কথা মোটেও ভাবতে পারেন না এ ব্লকের বাসিন্দারা।

ব্লকে রয়েছে একটিই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আরও দু’একটা নাম কা ওয়াস্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্র যে নেই তা নয়, তবে কোনওটা বন্ধ, কোনওটা চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ হওয়ার মুখে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে বেসরকারি পরিষেবায় ঝুঁকছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেখানেও বহু অভিযোগ, না পাওয়া।

মন্তেশ্বর ঘুরে দেখা গেল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে প্রায় ১৩টি ওষুধের দোকান রয়েছে। সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন চিকিৎসক বসেন সেখানে। আসেন বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও। রয়েছে তিনটে প্যথলজিক্যাল ল্যাবও। এক ওষুধের দোকানের মালিক সমীর বৈরাগ্য বলেন, “সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নেই, ফলে বেসরকারি পরিষেবায় ভরসা মানুষের। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চাহিদা ভালই রয়েছে। কলকাতা বা অন্য জেলা থেকে পালা করে আসেন চিকিৎসকেরা।” দোকান মালিকদের আরও দাবি, সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে শিশু বিশেষজ্ঞের। দিনে প্রায় ১৭০-১৮০ জন রোগী হয় সেখানে। বাকি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে গড়ে রোগীর সংখ্যাটা ৫০ থেকে ১০০। তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিদিনই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে নাম লেখাতে হয়। নাহলে আবার পরের সপ্তাহের জন্য অপেক্ষা। ব্লকের কোথাও নার্সিংহোমও নেই। ফলে ভরসা সেই দূরের জেলা অথবা মহকুমা হাসপাতাল। প্যাথলজিক্যাল ল্যাব থাকলেও সেখানে সব সুবিধা মেলে না বলে বাসিন্দাদের দাবি। ডিজিট্যাল এক্স-রে, সিটি স্ক্যান হয় না সেগুলিতো। স্থানীয় কল্পনা সাঁতরার দাবি, “এখন তো চিকিৎসকেরা পরিস্থিতি একটু জটিল হলেই ডিজিট্যাল এক্স-রে করানোর কথা বলেন। অগত্যা আমাদের ছুটতে হয় বর্ধমান। যেতে একপ্রস্থ ভাড়া লাগে আবার রিপোর্ট আনতে যেতেও আর একদিনেক খরচা।”

তবে সেখানে পৌঁছনোটাও রীতমতো ঝক্কির বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। কারণ ব্লকে একটিই সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে, তাও পিপি মডেলে। তার ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৮ টাকা। ফলে সেই অ্যাম্বুল্যন্স বর্ধমান বা কালনায় চলে গেলে ভাড়া গাড়ি ছাড়া উপায় থাকে না বাসিন্দাদের। তাঁরাই জানান, ব্লক হাসপাতালের সামনেও অনেক সময় ‘খদ্দের’ ধরতে দাঁড়িয়ে থাকে ভাড়ার গাড়ি। ভাড়া পিপি মডেলের অ্যাম্বুল্যান্সের তুলনায় সামান্য বেশি। তবে ওই গাড়িগুলির বেশিরভাগই গ্যাসচালিত হওয়ায় যাতায়াতে রোগীর মুশকিল আরও বাড়ে বলে জানান তাঁদের পরিজনেরা। কিন্তু বিকল্প না থাকায় তাই নিতে হয়। রোগীর পরিজদনদের অভিযোগ, গ্যাসের সিলিন্ডারগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে গাড়ির পিছনে লাগানো থাকে। ফলে গাড়ি চলতে শুরু করলেই গ্যাসের গন্ধ আসতে থাকে। রোগীর অসুস্থতা বাড়ে তো বটেই পরিজনেরাও অনের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ছাড়া বিয়ের মরসুমে গাড়ি পাওয়া আরও সমস্যার বলে জানান বাসিন্দারা। কারণ তখন এ গাড়িগুলোর বেশিরভাগই বিয়ের ভাড়া ধরে। ফলে সে সময় প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ফোন করে গাড়ির ব্যবস্থা করতে বলা ছাড়া উপায় থাকে না। দূরের গ্রামের রোগীদের আরও অভিযোগ, দু’দফা ভাড়া দিতে হয় তাঁদের। প্রথমে গ্রাম থেকে ব্লক, আবার সেখান থেকে রেফার হয়ে জেলা বা মহকুমা হাসপাতাল যেতে হয়। ফলে দ্বিগুন ভাড়া লাগে। আবার ওই ঘটনায় রাতে হলে ভাড়া বেড়ে যায় আরও শ’দুয়েক টাকা। মন্তেশরের বাসিন্দা রামকানাই ঘোষ বলেন, “প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে গাড়ি জোগাড় করে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত যাওয়া গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রেফার করে দেওয়া হয়। ফলে সেখান থেকে জেলা হাসপাতালে পৌঁছতে জলের মতো টাকা বেরিয়ে যায়।” কাশেম শেখ নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, “সব বাড়িতেই কমবেশি বয়স্ক মানুষ আছেন। আচমকা কারও হার্টের সমস্যা হলে গাড়ি জোগাড় করে নিয়ে যেতে দীর্ঘ সময় লাগে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলে প্রাথমিক চিকিৎসাটা অন্তত হয়ে যেত।” ব্লকে ব্লাড ব্যাঙ্কেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। রক্তের প্রয়োজন হলেও বর্ধমান বা কালনা ছোটা ছাড়া উপায় থাকে না।

প্রসূতীদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। অভিযোগ, মাতৃযান চেয়ে ফোন করা হলেও সবসময় তা পাওয়া যায় না। আশাকর্মীদের জেলা প্রশিক্ষক সব্যসাচী হাজরা জানান, পঞ্চায়েত পিছু একটি করে মাতৃযান থাকলে রোগীদের ভাল পরিষেবা দেওয়া যায়। সেখানে ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের জন্য রয়েছে মাত্র তিনটি। মন্তেশর ব্লক হাসপাতালে এক দশকেরও বেশি চিকিৎসা করেছেন স্ত্রী এবং প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার হয়ে বদলি হয়ে গিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “বিপুল মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রথমে পর্যাপ্ত চিকিৎসক প্রয়োজন। একই সঙ্গে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে অন্তত গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করা জরুরি। তাহলে বেশ কিছু সরকারি সুবিধা মিলবে।”

সরকারি-বেসরকারি দু’তরফা না পাওয়ায় রোগব্যাধি বড়ই বালাই মন্তেশ্বরে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE